দেশের নির্বাচনকে বাঁচাতে ‘মেডিক্যাল বোর্ড’ গঠনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এমন রূপক ব্যবহার করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এখন কতিপয় জটিল অসুখে আক্রান্ত। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গণতন্ত্রের অবস্থা সংকটাপন্ন। একক ডাক্তারের পক্ষে তাকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের কোনো বিকল্প নেই। মৃত্যুপথযাত্রী গণতন্ত্রকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো একান্ত অপরিহার্য। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা গণতন্ত্রহীন নির্বাচন চাই কিনা!’ গতকাল রবিবার বিকালে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ‘চলমান স্থানীয় নির্বাচন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ : আমার কথা’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
৭ অক্টোবর ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মাহবুব তালকুদার বলেন, ‘ইভিএমে এখানে ২০ শতাংশ ভোট পড়ে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ভোটের টার্নআউট এত কম হওয়ায় জনগণের নির্বাচন বিমুখতা আমাকে হতাশ করে। অন্যদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের উপনির্বাচনে ইভিএমে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ বৈষম্য কেন তার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা প্রয়োজন। ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তবে এর প্রতিবন্ধকতা দূর না হলে কাক্সিক্ষত ফল লাভ করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম নগরের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে জামানত হারিয়েও একজন প্রার্থী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। স্বভাবতই ওই নির্বাচনে ২১ জন প্রার্থীর সবাই জামানত হারিয়েছেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যা বিশ্বে নজিরবিহীন। আমার মতে, এতে নির্বাচনে একটা নতুন ধারা সূচিত হলো। নবনির্বাচিত কাউন্সিলর অবশ্য সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য একাধিক মামলায় দুই বছরের বেশি জেলে রয়েছেন। এ উপনির্বাচনের ফল নির্বাচনের প্রতি জনগণের অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ বলা হলেও ইতিবাচকভাবে বলা যায়, সমাজের সব শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা এখন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এবং জনসমর্থন না থাকলেও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন।’
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘৫০ বছরেও সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন করা হয়নি। বাধ্যতামূলক হলেও সব সরকার এটি লঙ্ঘন করেছে। সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা থাকলে এ আইন করা অনস্বীকার্য।’ আইন করলে তা সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কমিশন গঠন, নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সমঝোতা না হলে দেশব্যাপী অরাজকতা ও প্রাণহানির আশঙ্কা করি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও আমরা যদি অন্ধকার ঘরে একটি কালো বিড়ালের মতো গণতন্ত্রকে খুঁজে ফিরি, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? একজন ভোটার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ইচ্ছামতো ভোট প্রদান করে নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসবেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র কি এ আকাক্সক্ষাটুকু পূরণ করতে পারবে না?’