শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৬ পূর্বাহ্ন

ইসি পুনর্গঠনে আইন চায় জাতীয় পার্টি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২১
  • ১৩৯ বার

জাতীয় পার্টির (জাপা) নতুন মহাসচিব (মনোনীত) মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ইসি পুনর্গঠনে আইন না হলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। তিনি বলেছেন, আমাদের বক্তব্য একটাইÑ নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন আইন করতে হবে। আমাদের এই দাবি এর আগে আমি সংসদে উত্থাপন করেছি। আইন করার জন্য সংবিধানে নির্দেশনা আছে। আমি প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকে বলেছি, যদি আপনারা আইন করতে না পারেন তা হলে আমাকে বলুন। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের সহায়তা করব। সামনে সংসদ অধিবেশন বসবে। আমি বলব এখনো এই আইন করার সময় আছে। এর পরও যদি সরকার আইন না করে, বর্তমান পদ্ধতিতেই আগামী নির্বাচন করতে চায়, তা হলে জাপার করণীয় নির্ধারণে দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন দলের কো-চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। জাপার জন্মলগ্ন থেকেই দলটির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন তিনি। একই দলে দীর্ঘদিন রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা, নতুন দায়িত্ব পাওয়ার অনুভূতি ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি আমাদের সময়ের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।

নিজের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলছিলেন, মহাসচিব হিসেবে আমার প্রথম কর্তব্য হলোÑ সংগঠনকে সাজানোর জন্য, শক্তিশালী করার জন্য আগের মহাসচিব যে পদক্ষেপ-পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, সেগুলোকে অব্যাহত রাখা। সেই সঙ্গে বেকার সমস্যা সমাধানে কাজ করতে চাই। এ নিয়ে ইতোমধ্যে দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেছি; প্রয়োজনে আরও আলোচনা করব।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে সবচেয়ে বেশি সময় দেশ শাসন করেছে আওয়ামী লীগ, তার পর বিএনপি। দল হিসেবে জাপা মাত্র চার বছর ক্ষমতায় ছিল। এত কম সময়ে জাপা এত কাজ করেছে যে মানুষ এখনো মনে রেখেছে। একটা দল (আওয়ামী লীগ) এত বছর ক্ষমতায় থাকার পরও অনেক জায়গায় তারা ব্যর্থ। অনেক উন্নয়নের কথা বলে তারা। হ্যাঁ, বড় বড় রাস্তা করেছে। মেগা প্রকল্প করেছে। কিন্তু আসল যে সমস্যা- বেকারত্ব সমাধানে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে লাখ লাখ মানুষ বেকার। প্রতিবছর ১৮ থেকে ২০ লাখ নতুন চাকরিপ্রত্যাশী মানুষ চাকরির বাজারে আসে। এর মধ্যে ৬-৭ লাখের চাকরি করার সুযোগ হয়; বাকিরা পায় না, তারা বেকার থাকে। তাদের নিয়ে কোনো কর্মসূচিও নেই। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের নেত্রীর মুক্তির জন্য আন্দোলন করে। ক্ষমতায় আসার জন্য আন্দোলন করে। কিন্তু বেকার সমস্যা কীভাবে সমাধান হবে- তার কোনো রূপরেখা বা পরিকল্পনা তাদের মধ্যে দেখা যায় না।

চুন্নুর ভাষায়, সেই রূপরেখা আমরা জাপার পক্ষ থেকে তৈরি করব। দেশের লাখো-কোটি বেকার মানুষকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তাদের কীভাবে পুনর্বাসন করা যায় এবং দেশের স্বার্থে কাজে লাগানো যায়Ñ সে বিষয়টা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। বিষয়টি আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরব।

জাপা মহাসচিব বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা মোটেই কর্মমুখী নয়। আমরা এই শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাব; কর্মমুখী করব। আরও কিছু বিষয়ে আমরা নজর দিতে চাই। যেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সিভিল, ব্যুরোক্রেট- আপনি যেখানেই যাবেন, দেখবেন- কোনো কাজই টাকা-পয়সা ছাড়া হয় না। মাঝে মধ্যে সরকার দু-একটা চুনোপুঁটিকে ধরে, মৌলিক জায়গায় হাত দেয় না। আমরা মৌলিক জায়গায় হাত দিতে চাই। আমরা পার্লামেন্টে স্বাস্থ্য খাতের বেহাল অবস্থার কথা বলেছি। সরকার শত শত কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জমাদি কেনে, কিন্তু এগুলো পড়ে থাকে। সামান্য কিছু টেকনিশিয়ানের জন্য এগুলো চলে না। তার মানে সবকিছু মিলে একটা অগোছালো অবস্থা। আমরা জাপার পক্ষ থেকে এসব সমস্যা চিহ্নিত করে দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করে কর্মসূচি দেব। আমার ধারণা, মানুষ সেগুলো সমর্থন করবে। সমর্থন করলে দল শক্তিশালী হবে। আগামী নির্বাচনে আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব। আশা করি, মানুষ আমাদের ক্ষমতায় আনবে।

দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে আগের মহাসচিবদের চাইতে নিজের ভিন্ন পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন চুন্নু। তার কথায়, সাংগঠনিক কাঠামো আমাদের সব দলের প্রায় একই। এটিকে রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে- শীর্ষ নেতৃত্ব যদি মাঠে যায়, তবে দল শক্তিশালী হয়। সরাসরি কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা গেলে দল চাঙ্গা হয়। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় যাওয়ার আমার পরিকল্পনা আছে; যাতে কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারি, সংগঠনের কথাবার্তা বলতে পারি। সশরীরে গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার আমার এই পরিকল্পনা আগের মহাসচিবদের চাইতে ভিন্ন বলে আমি মনে করি।

মুজিবুল হক চুন্নু স্মৃতিচারণ করে বলেন, মহাসচিব পদে আমি নতুন, তবে জাপার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আছি। ১৯৮৬ সালের জানুয়ারিতে জাপা গঠিত হলে, এপ্রিলে চাকরি ছেড়ে দলে যোগদান করি। তার পর নির্বাচন করে এমপি হই, এখনো আছি একই দলে।

জাপার মহাসচিব হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, জাপার মহাসচিব যিনি (জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু) ছিলেন তিনি জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। একজন ভালো, সুদক্ষ সংগঠক ছিলেন। হঠাৎ করে করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। এতে মহাসচিব পদটি শূন্য হয়। এই পদে আসার মতো অনেক যোগ্য লোক দলে আছেন। স্বাভাবিকভাবেই সবাই আশা করে এই পদে দায়িত্ব নেওয়ার। কিন্তু আমাদের দলের গঠনতন্ত্রে আছে, চেয়ারম্যান যাকে যোগ্য মনে করবেন তিনি মহাসচিব হবেন। চেয়ারম্যান দলের সবার সঙ্গে কথা বলে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি এই পদ পেতে তদবির করিনি, আগ্রহীও ছিলাম না। চেয়ারম্যান দায়িত্ব দেওয়ায় আমি অত্যন্ত সম্মানিতবোধ করছি। আশা করি, এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারব।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com