শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন

প্রেমিককে স্বামী বানিয়ে প্রবাসীর সম্পদ লিখে নেন সাকুরা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১
  • ১০৭ বার

গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে দুই বছর ধরে বাস করছেন ব্যবসায়ী মফিদুল ইসলাম। বিদেশে যাওয়ার ছয় মাস পর তিনি জানতে পারেন, রাজধানী ঢাকার ইন্দিরা রোডে অবস্থিত ৪৭/৫ নম্বর ভবনে তার কোটি টাকার ফ্ল্যাটটি দান করে দিয়েছেন! এ খবরে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে মফিদুলের। বিদেশে থেকেও কিভাবে দেশে তার সম্পদ দান হয়ে গেল- সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মফিদুলের স্বজনরা সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে খোঁজ নেন।

জানা যায়, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অন্য ব্যক্তিকে স্বামী সাজিয়ে ফ্ল্যাটটি দান হিসেবে গ্রহণ করেছেন মফিদুলের সাবেক স্ত্রী রাউফুন সাকুরা। তার বিরুদ্ধে ওই প্রবাসীর কষ্টার্জিত প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কৌশলে হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ আছে। ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর মফিদুলের সঙ্গে সাকুরার বিয়েবিচ্ছেদ হয়। অথচ দান হিসেবে সাকুরা যে ফ্ল্যাটটি গ্রহণ করেছেন, তার দলিল রেজিস্ট্রি হয় তাদের বিয়েবিচ্ছেদের তিন মাস পর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর।

প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে মফিদুলের স্বজনরা আদালতের দ্বারস্থ হলে গত ১০ জানুয়ারি সিআইডিকে ঘটনা তদন্তসাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বিচারক। এরপর সাকুরা, তার মা রোকেয়া বেগম ও প্রেমিক মো. আলতাফ হোসেন নামে ৩ জনের বিরুদ্ধে গত ৪ জুলাই ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সাভার আমলি আদালত) প্রতিবেদন দাখিল করেন

সিআইডির ঢাকা জেলার পুলিশ পরিদর্শক মো. নাছিমুল ইসলাম। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অন্য ব্যক্তিকে স্বামী সাজিয়ে মফিদুল ইসলামের ফ্ল্যাটটি হাতিয়ে নেন সাকুরা।

প্রতিবেদনের আলোকে গত ৩ অক্টোবর অভিযুক্ত ৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত ৭ অক্টোবর পুলিশ রোকেয়া বেগমকে গ্রেপ্তার করলেও পলাতক রয়েছেন অন্য দুজন। এদের মধ্যে সাকুরা গ্রেপ্তার এড়াতে দুবাই পালিয়েছেন বলে দাবি মামলার বাদী মফিদুলের বড় ভাই হাবিবুল ইসলামের।

সিআইডির ঢাকা জেলার পুলিশ পরিদর্শক মো. নাছিমুল ইসলাম তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, গ্রিস প্রবাসী মফিদুল ইসলামের সঙ্গে ২০০৫ সালে বিয়ে হয় সাকুরার। বিয়ের দুই বছর পর স্ত্রীকে গ্রিসে নিয়ে যান মফিদুল। কিন্তু ২০১৬ সালে স্বেচ্ছায় বাংলাদেশে ফিরে এসে তার মা রোকেয়া বেগমের সাথে বসবাস শুরু করেন সাকুরা। এরপর কয়েকটি ব্যাংক এবং মানিগ্রামের মাধ্যমে স্ত্রী ও শাশুড়ির কাছে দফায় দফায় কয়েক কোটি টাকা পাঠান মফিদুল।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মামলার অভিযোগে উল্লিখিত ডিক্লারেশন অব হেবা দলিলটি (দলিল নম্বর ২৬৬৬/২০২০) মিথ্যা ও জাল বলে তদন্তে প্রমাণিত। কারণ, দলিলটি (নম্বর-২৬৬৬/২০২০) গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রি হয়। কিন্তু তথ্য-প্রমাণ বলছে, ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর মফিদুল গ্রিসে চলে যান। দলিলটি রেজিস্ট্রি করার সময়ে ওই প্রবাসী দেশে ছিলেন না; অদ্যাবধিও তিনি আর বাংলাদেশে আসেননি। ফলে তার সাবেক স্ত্রী সাকুরা প্রতারণামূলকভাবে অন্য ব্যক্তিকে স্বামী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করেছেন। অভিযুক্ত আলতাফ হোসেন জাল দলিলটি শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন, যা স্পষ্টত। পরে এ প্রতারণার বিষয়ে অভিযুক্তদের জানালে তারা বাদীকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেন বলেও সাক্ষ্য-প্রমাণে জানা গেছে।

মামলাটির বাদী হাবিবুল ইসলাম জানান, মফিদুল গ্রিসে থাকাকালে ব্যবসার কোটি কোটি টাকা পাঠাতেন স্ত্রী সাকুরার কাছে। ওই টাকা দিয়ে দেশে তাদের দুজনের নামে জমি কেনার কথা ছিল। কিন্তু কৌশলে সাকুরা সব সম্পত্তি তার নিজের নামে কেনেন। বিষয়টি জানতে পেরে প্রতারণার কারণ জানতে চাইলে মফিদুলের নগদ টাকাসহ প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আত্মসাৎ করে তাকে ডিভোর্স দেন সাকুরা। তারা জানতে পেরেছেন, মফিদুল বিদেশে থাকাকালে অপরিচিত কারও সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলেন তার স্ত্রী। সম্ভবত তারা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। ওই প্রেমিককেই স্বামী সাজিয়ে ঢাকায় মফিদুলের ফ্ল্যাটটিও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেন সাকুরা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল সাকুরার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি তিনি। পরে তার মা রোকেয়া বেগমের মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে, সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি সংযোগটি কেটে দেন। এর পর অনেক চেষ্টা করেও অভিযোগের বিষয়ে তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com