মেয়ে সানার একাধিক রাজনৈতিক পোস্ট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোড়ন উঠলে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামলাতে ‘মাঠেই’ নামতে হল সাবেক ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীকে। ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ যখন তুঙ্গে তখন লেখক খুশবন্ত সিংহকে উদ্ধৃত করে সৌরভ গাঙ্গুলীর কন্যা সানার একটি পোস্ট ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের সোশাল মিডিয়া।
তবে বিষয়টি যাতে বিতর্কে না গড়ায় তাই শেষ পর্যন্ত ‘ব্যাট ধরলেন’ বাবা সৌরভ। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি বলেন, ওকে জড়াবেন না। রাজনীতি সম্পর্কে জানার মত বয়স হয়নি ওর।
বুধবার দুপুরে দেয়া সানার একটি পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে। যদিও পরে তা সরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু, ততক্ষণে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে গেছে।
বিতর্ক এড়াতে সৌরভ টুইটারে লেখেন ‘এই সব বিষয় থেকে সানাকে দয়া করে দূরে রাখুন। এই পোস্টটা সত্যি নয়। রাজনীতির কিছু সম্পর্কে জানার ব্যাপারে ও খুবই ছোট।’
কী লিখেছেন সানা
ইনস্টাগ্রাম স্টোরি হিসেবে পোস্ট করতে গিয়ে তিনি ২০০৩ সালে প্রকাশিত খুশবন্ত সিংহের ‘দ্য এন্ড অব ইন্ডিয়া’কে বেছে নিয়েছেন। সানা সেই বই থেকে তুলে ধরেছেন যে অংশ, সেখানে লেখা হয়েছে, ‘প্রতিটা ফ্যাসিস্ট সরকারের একটা দল বা গোষ্ঠীর প্রয়োজন হয়। নিজেদের বেড়ে ওঠার জন্য তারা ওই দল বা গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করতে তাদের শয়তানেও পরিণত করে। দু’একটা দল দিয়ে এটা শুরু হয়। কিন্তু সেটা কখনওই সেখানে শেষ হয় না। ঘৃণার উপর নির্ভর করে যে আন্দোলন, সেই আন্দোলন নিজেকে ধরে রাখতে পারে অবিরাম একটা ভয় বা দ্বন্দ্বের বাতাবরণ তৈরি করে।’
ভারতীয় বাংলা সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মতে, সানা এই উদ্ধৃতির মাধ্যমে আসলে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারকেই টার্গেট বানিয়েছেন।
এখানেই থেমে থাকেননি সানা। খুশবন্তের লেখার আরও কিছু অংশ তিনি পোস্ট করেছেন। সেই অংশে লেখা হয়েছে, ‘আজ যারা আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছি, ভাবছি আমরা তো মুসলমান বা খ্রিস্টান নই, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছি। সঙ্ঘ ইতিমধ্যেই বামপন্থী ইতিহাসবিদ এবং পশ্চিমি সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী যুবসমাজকে টার্গেট করেছে। কাল তাদের ঘৃণা গিয়ে পড়বে স্কার্ট পরিহিত মহিলা, যারা মাংস খান, মদ্যপান করেন, বিদেশি সিনেমা দেখেন, বছর বছর তীর্থে যান না, দাঁতনের পরিবর্তে টুথপেস্ট ব্যবহার করেন, আয়ুর্বেদিকের বদলে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ পছন্দ করেন, দেখা হলে ‘জয় শ্রী রাম’ বলার বদলে হাত মেলান বা চুম্বন করেন, তাদের উপর। কেউ নিরাপদ নয়। ভারতকে বাঁচাতে হলে এগুলি আমাদের ভীষণ ভাবে অনুধাবন করতে হবে।’
এরপর জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ ধরে দেশের কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিক্ষোভ-প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠছে তার একটি মানচিত্রও পোস্ট করেন সৌরভ কন্যা।
সোস্যাল মিডিয়ায় সানার এই পোস্ট বহু আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একটা অংশের মতে, গোটা পোস্টটাতে যে ভাবে খুশবন্তের লেখার মাধ্যমে সানা ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলে ধরেছেন, তা প্রশংসনীয়। কেউ কেউ আবার সানার বয়সকে উল্লেখ করে লিখেছেন, রাজনীতি বোঝার জন্য বড়ই অল্প বয়স।