প্রায় পানিশূন্য তিস্তা নদীতে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে হঠাৎ করে উজানের ঢলে পানি বাড়তে থাকায় তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। এর ফলে রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধ ছাড়াও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
পানির তোড়ে বেশ কয়েকটি বাঁধ ও সড়ক ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং এর ফলে রংপুর ও নীলফামারীর সঙ্গে লালমনিরহাটের সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া বানের পানিতে ভেসে গেছে বহু পুকুরের মাছ; তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। বন্যা নিয়ন্ত্রণে নীলফামারীর ডালিয়া-দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আমরা আশাবাদী।
বন্যাদুর্গত কয়েকটি স্থানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্যাকবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিংও করা হচ্ছে। বন্যার সময় বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণের একটা রেওয়াজ দেশে গড়ে উঠেছে। তবে এ ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা বন্যাকবলিত মানুষের জীবনে স্থায়ী কোনো প্রভাব ফেলে না বিধায় বন্যাকে স্থায়ীভাবে জয় করার পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এজন্য নদ-নদীগুলোর নাব্য বাড়াতে হবে সর্বাগ্রে।
আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড ও অদূরদর্শিতায় এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলো আজ জীর্ণ-শীর্ণ। নদীগুলোকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ব্যাপারে আমাদের অবস্থান ও দাবি আরও জোরালো করার লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। বাংলাদেশ ভাটির দেশ। উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে।
অভিন্ন নদ-নদীগুলোর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারত ও নেপালের সঙ্গে এমন গঠনমূলক উদ্যোগ নেওয়া উচিত, যাতে তা কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়। আন্তর্জাতিক নদ-নদীর গতিধারায় বিঘ্ন সৃষ্টি, নদীর উপর বাঁধ তৈরি কিংবা নদীর প্রবাহকে ভিন্নদিকে প্রবাহিত করার কাজগুলো একতরফাভাবে হতে পারে না; কারণ তা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। এ বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
বন্যাসহ যে কোনো দুর্যোগে সবার আগে মানবিক দিকগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। দুর্যোগকবলিত অসহায় মানুষ যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় পান, সেদিকে স্থানীয় প্রশাসনের বিশেষ যত্নবান হওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়েও পূর্ণ প্রস্তুতি থাকা উচিত। বন্যার সময় বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে দুর্যোগকবলিত মানুষের মধ্যে ডায়রিয়া ও আমাশয়সহ বিভিন্ন ধরনের পীড়ার প্রাদুর্ভাব ঘটে।
কাজেই দুর্গত মানুষ যাতে স্বাস্থ্য সংকটে না পড়ে, সে লক্ষ্যে আগেভাগেই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বন্যা-পরবর্তী সংস্কার ও পুনর্বাসনের ব্যাপারেও মনোযোগ দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক, বেড়িবাঁধ, স্লুইসগেট ইত্যাদির দ্রুত সংস্কার ও মেরামতসহ ক্ষেতের ফসল, গবাদিপশু ও ঘরবাড়ি হারানো মানুষকে যতটা সম্ভব আর্থিক সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত বিশেষ ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করে উপদ্রুত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো।