টনসিল হলো- মুখগহব্বরের অভ্যন্তরে গলার একদম উপরিভাগের কিছু মাংসপিণ্ড ,যা লিম্ফ টিস্যু দিয়ে গঠিত। এটি চারটি গ্রুপে থাকে। জিহ্বার পেছনে থাকে লিঙ্গুয়াল টনসিল, গলার দুপাশে প্যালাটাইন টনসিল এবং নাসারন্ধ্রের পেছনে ন্যাসোফ্যারিংক্সের মধ্যে অ্যাডেনয়েড টনসিল। এর আরেক নাম ন্যাসোফ্যারেঞ্জিয়াল টনসিল। এর কাছাকাছি থাকে টিউবাল টনসিল। টনসিল গ্রন্থিগুলো অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।
টনসিলাইটিস বলতে বোঝায় প্যালাটাইন টনসিল তথা যে দুই টনসিল গলার উপরিভাগে দুপাশে বিস্তৃত, তার মধ্যে কোনো প্রদাহ হলে তাকে। টনসিল সব বয়সেই হয়ে থাকে। তবে ৫ থেকে ১৫ বছরের শিশু-কিশোরের টনসিলাইটিস হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
টনসিলাইসিসের কারণ : সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দিয়ে টনসিলাইটিস হয়। যেমন- কেউ যদি রেস্পাইরেটরি ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয়, তাহলে তার টনসিল আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার অতিরিক্ত ঠা-া পানীয় পান করলেও মুখগহব্বরের অভ্যন্তরীণ অবস্থিত সাধারণ উপকারী অণুজীবগুলো টনসিলের মধ্যে কোলোনাইজেশন হয়ে ইনফেকশন হতে পারে। যাদের ইমিউনিটি দুর্বল, তাদের যে কোনো সর্দি-জ্বর বা সর্দি-কাশির পর কিংবা যে কোনো রেস্পাইরেটরি ভাইরাস ইনফেকশন হওয়ার পর সেকেন্ডারি ইনফেকশন হিসেবে টনসিলাইটিস হতে পারে।
শীতকালে সিজনাল ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও অন্য মৌসুমে ভাইরাল ইনফেকশন বেড়ে যাওয়ার কারণে টনসিল ইনফেকশনের পরিমাণও বেড়ে যায়।
টনসিলাইটিসের উপসর্গ : মুখগহব্বরের পেছনে গলার উপরিভাগের দুপাশে লাল হয়ে ফুলে যাবে। টনসিলের আশপাশে সাদা বা হলুদ র্যাশ দেখা দিতে পারে। গলাব্যথা হবে। ইনফেকশনের কারণে জ্বর আসতে পারে। খাবার গলাধঃকরণ করতে ব্যথা হতে পারে। কাঁধের আশপাশে লিম্প নোডগুলে ফুলে যেতে পারে। মাথাব্যথা হতে পারে। স্বর পরিবর্তন হয়ে যাবে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে দুর্গন্ধ বের হতে পারে। যাদের পর পর টনসিল ইনফেকশন হয়, তাদের ক্ষেত্রে খাবারের রুচি কমে যায়। মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয় ও রাতে নাক ডাকে। শিশুর টনসিলাইটিস হলে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে। মুখ দিয়ে লালা বের হতে পারে। খাবার খেতে চায় না, কান্নাকাটি করে, খাবার দিলে কান্নার পরিমাণ বেড়ে যাবে।
শিশুর টনসিল প্রতিকার : টনসিল প্রতিকারের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা মেনে চলা অপরিহার্য। ভালোভাবে হাত ধুয়ে খাবার খাওয়া। ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না যাওয়া। এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চামচ লবণ মিশিয়ে তা দিয়ে ৭-১০ বার গার্গল করা। নিয়মিত মধু ও কালিজিরার তেল খাওয়া।
শিশুর টনসিল চিকিৎসা : ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ট্যাবলেট ও ইনফেকশনের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। মুখের ভেতরে যাতে ইনফেকশন না ছড়ায়, সে জন্য পভিডন মাউথওয়াশ গরম পানির সঙ্গে ২-৩ চামচ করে এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে ২-৩ ঘণ্টা পরপর গার্গল করে কুলি করা যেতে পারে।
শিশুর যখন অপারেশন লাগবে : যদি বছরে ৭ বারের বেশি টনসিল ইনফেকশন হয় অথবা যদি পর পর ৩ বছর প্রতিবছর ৩ বারের বেশি টনসিল ইনফেকশন হয়। যদি টনসিলের আশপাশে অ্যাবসেস বা পুঁজ হয়ে যায়। যদি মুখের ওষুধে সুস্থ না হয়। লাগাতার গলা ব্যথা থাকলে। শ্বাস নিতে কষ্ট হলে। সব সময় মুখে দুর্গন্ধ থাকলে। অপারেশন করা হয় পরিপূর্ণ অজ্ঞান করে। ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগে। এই ক্ষেত্রে টনসিল কেটে বের করে ফেলা হয়। অপারেশনের পরও ব্যক্তিগত সুরক্ষা মেনে চলা অপরিহার্য। প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ