জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং এ সংক্রান্ত সংকট থেকে বিশ্বকে বাঁচানোর লড়াইয়ে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় চলমান সম্মেলনের সম্ভাব্য চুক্তির খসড়া প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক সংস্থা। গতকাল বুধবার এটি প্রকাশ করে সংস্থাটি। খসড়া চুক্তিতে ২০২২ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানেরা শক্তিশালী লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছ। সাত পৃষ্ঠার এ খসড়া চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় তহবিল গঠনসহ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৫ ডিগ্রি কমিয়ে আনার যে লক্ষ্য তার কথা বলা হয়েছে।
তবে গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তি মূলত জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সম্মেলনে অংগ্রহণকারী দেশগুলোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। চলমান কপ-২৬ সম্মেলনের শেষে এ চুক্তি ইস্যু করা হবে। আগামী শুক্রবার এ সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। শেষ মুহূর্তে খসড়া থেকে চূড়ান্ত চুক্তিতে যাওয়ার বিষয়ে কাজ করছেন সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা।
এদিকে বাংলাদেশের তরুণ চলচ্চিত্রকার রেজওয়ান শাহরিয়ারের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নোনা জলের কাব্য’ গত সোমবার সন্ধ্যায় গ্ল্যাসগোর জলবায়ু সম্মেলনের ভেন্যুতে প্রদর্শিত হয়েছে। কপ ২৬-এর জন্য তৈরি গ্রিন জোনে ছবিটি দেখানো হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা কীভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে, সেটাই এ ছবির মূল কাহিনি। আর সে কারণেই কপের আয়োজকরা ছবিটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছেন
গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনের খসড়া চুক্তির বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে এবারের সম্মেলনে পোল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও
চিলির মতো বড় বড় কয়লা ব্যবহারকারী দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি একক ভূমিকা রাখে কয়লা। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ১৯০টি দেশ ও সংস্থা কয়লার ব্যবহার ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় কয়লা নির্ভরশীল দেশগুলো এ প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষর করেনি। প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষকারী দেশগুলো নিজেদের দেশে এবং বিদেশে নতুন কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দরিদ্র দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ সময়সীমা ২০৪০-এর দশক।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ ১০-এ রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এবারের সম্মেলনে সব থেকে ঝুঁঁকিপূর্ণ ৪৮ দেশের জোট ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম সিভিএফের সভাপতিত্ব করছে বাংলাদেশ। গত ১ নভেম্বর গ্লাসগোয় কপ ২৬-এর মূল অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়বায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিজেদের দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেসব উন্নত দেশ বায়ুম-লে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের জন্য মূলত দায়ী, তাদের উচ্চাভিলাষী এনডিসি (ন্যাশনাল ডিটারমিন্ড কন্ট্রিবিউশন) প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া জলবায়ুর ক্ষতি কাটাতে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠন এবং অভিযোজন ও প্রশমনে তা আধাআধি বরাদ্দ করতে হবে। সবচেয়ে ঝুঁঁকিতে থাকা দেশগুলোকে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ প্রযুক্তি প্রদান এবং সিভিএফ দেশগুলোর উন্নয়নে সহায়তার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা এবং খরার কারণে বাস্তুচ্যুত জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশ্বব্যাপী দায়বদ্ধতা ভাগ করে নেওয়াসহ লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার বিষয়টি অবশ্যই সমাধান করার দাবি জানান তিনি। গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক ভারকুইজেনের সঙ্গে এক যৌথ নিবন্ধেও এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।