প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবনে গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা হলো মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি)। এ দু’টি পরীক্ষার ফলের ওপর সাফল্য নির্ভর করে শিক্ষা এবং কর্মজীবনের। দু’টি পরীক্ষাই পরিচালনা এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর। লক্ষণীয়, শিক্ষা বোর্ডগুলো সেই অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। এ কথা বলার কারণÑ এবার যারা এসএসসি দিচ্ছে; প্রশ্নপত্রে ছাপার ভুল এবং কোনো কোনো কেন্দ্র সচিবের অজ্ঞতার কারণে প্রথম পরীক্ষাতেই তাদের পড়তে হয় মানসিক পীড়ায়। প্রশ্নপত্রে ছাপার ভুলের জন্য শিক্ষার্থীরা সঠিক সমাধান দিতে পারেনি। ফলে প্রস্তুতি ভালো থাকার পরেও অনেকে ভালোভাবে উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ পরীক্ষায় অনেকে কাক্সিক্ষত ফল না পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, এটি শিক্ষা বোর্ডগুলোর গাফিলতি ও অযোগ্যতা ছাড়া আর কিছু নয়।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাধারণ ৯টি বোর্ডের অধীনে দেড় ঘণ্টা পরীক্ষা হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও এসএসসির প্রথম দিনে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্নের সৃজনশীল অংশে সময় উল্লেখ ছিল দুই ঘণ্টা ৩৫ মিনিট, যদিও শিক্ষার্থীদের দেড় ঘণ্টা সময়ই পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে। প্রথম পরীক্ষায় সারা দেশে ‘ক’ সেটের প্রশ্ন বিতরণ করা হয়। পরীক্ষার্থীদের উত্তর দিতে হয়েছে দেড় ঘণ্টায় মোট দু’টি প্রশ্নের। এ ধরনের ভুল থাকায় শিক্ষার্থীরা উত্তর লেখার সময় বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। অনেকে তিনটি বা চারটি প্রশ্নের উত্তর লিখেছে। পরিণামে দেড় ঘণ্টায় কোনো প্রশ্নের উত্তর ভালো লিখতে পারেনি তারা। অন্য দিকে এসএসসির সমমানের ভোকেশনাল পরীক্ষার্থীদেরও তিনটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে বলা হয়। আর সময় দেয়া হয় ‘এক ঘণ্টা’। মোট নম্বর ১৫। অথচ এটি ছিল ৩০ নম্বরের এবং দুই ঘণ্টার পরীক্ষা।
অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে হল পরিদর্শকদের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা করা হয়নি। করোনার কারণে এ বছর এসএসসির পরীক্ষার আগে স্কুলে কোনো পরীক্ষা হয়নি। এমনকি প্রি-টেস্ট, টেস্ট ছাড়াই হঠাৎ করে এত গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা বসেছে। সেহেতু একটু ঘাবড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাই প্রশ্নপত্রের অনাকাক্সিক্ষত ভুলের বিষয়ে কেন্দ্র সচিব ও হল পরিদর্শকদের সহযোগিতা করা উচিত ছিল; কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনের কোনো তাগিদবোধ করেননি অনেক পরীক্ষা কেন্দ্রে কর্মরতরা। এটি শিক্ষকসুলভ আচরণ কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
গুরুত্বপূর্ণ এই পাবলিক পরীক্ষায় এমন অমার্জনীয় ভুলের জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে যে সাফাই গাওয়া হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে হয়। আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলা হয়, এ বছরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগে তৈরি করে রাখায় এতে সময় লেখা ছিল আগের নিয়মে। প্রশ্ন ছাপাতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে। আগে থেকেই প্রশ্ন ছাপিয়ে রাখাসহ পরীক্ষার সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ছিল। পরে সিদ্ধান্ত হয় দেড় ঘণ্টা পরীক্ষা নেয়ার। আগে প্রশ্ন ছাপানোয় কিছু ভুল ও বিভ্রান্তির জন্য এমনটি হয়েছে। তবে প্রশ্নপত্রে যা-ই লেখা থাকুক না কেন, পরীক্ষার সময়সীমা দেড় ঘণ্টাই। এ বিষয়ে সব কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রুটিনের সাথেও নির্দেশনা দেয়া ছিল। পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতেও প্রশ্নপত্রে সময় ‘দুই ঘণ্টা ৩৫ মিনিট’ উল্লেখ থাকতে পারে; তবে পরীক্ষা হবে দেড় ঘণ্টা।
শিক্ষা বোর্ড থেকে ‘ছোট ছোট’ ভুলের জন্য পরীক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এমন পরামর্শে পরীক্ষার্থী চিন্তামুক্ত হতে পারবে বলে মনে হয় না। যেখানে আগের নির্দেশনাই যথাযথভাবে পালন করা হয়নি; সেখানে ভুলের পরে দেয়া এমন বক্তব্যের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সঙ্গত কারণে আমরা মনে করি, যারা প্রশ্নপত্রে এমন ভুলের জন্য দায়ী তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক। তাতে আগামীতে এমন ভুল না হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে বৈকি।