রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন

বিশ্ববাজারে দাম পড়লেও দেশে এখনই কমছে না

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১
  • ১৫০ বার

বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী থাকলেও দেশে আপাতত কমছে না। আদৌ কমানো হবে কিনা, পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করলেও তা এখনো বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। তবে দাম আরও কমলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা তখন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের ঘোষিত নীতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো বা কমানো নয়, সমন্বয়। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশেও বাড়ানো হবে, কমলে কমানো হবে। ২০১৬ সালে বিশ্ব বাজারে এক ব্যারেল তেলের গড় মূল্য ছিল ৪৩ দশমিক ২৯ ডলার। সে বছর সর্বনিম্ন মূল্য ২৬ দশমিক ১৯ ডলারও হয়েছিল। শুভঙ্করের ফাঁকি দিতে তাই ওই বছর ডিজেলের দাম লিটারে ৩ টাকা কমিয়ে ৬৫ টাকা করে সরকার। এদিকে ২০১৭ সালে জ্বালানি তেলের গড় মূল্য ছিল ৫০ দশমিক ৮০ ডলার, ২০১৮ সালে ৬৫ দশমিক ২৩ ডলার, ২০১৯ সালে ৫৫ দশমিক ৯৯ ডলার এবং ২০২০ সালে ছিল ৩৯ দশমিক ৬৮ ডলার। ২০২০ সালে একপর্যায়ে এক ব্যারেল তেলের দাম কমে সর্বনিম্ন ১১ ডলারও হয়েছিল। বিশ্ব বাজারের সঙ্গে দেশে দাম সমন্বয়ের নীতি অনুসরণ করলে, তেলের দাম আরও অনেক কমার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। এর মধ্যে চলতি বছরের জুলাই থেকে বিশ^বাজারে তেলের দাম অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে।

অক্টোবরে এক ব্যারেলের দাম ৮৩ দশমিক ৫৪ ডলার হওয়ায় লোকসানের কথা জানিয়ে দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলার ছোঁয়। বিপিসি থেকে তখন বলা হয়, ডিজেল বিক্রিতে সংস্থাটির প্রতিদিন ২১ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। তাই ব্যয় কমাতে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনে ১৫ টাকা দাম বাড়িয়ে করা হয় ৮০ টাকা। অর্থাৎ এক লাফে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয় ২৩ শতাংশ। এর ফলে পরিবহন ভাড়াও ২৭ শতাংশ বেড়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ আসতে থাকে। তখন সরকারের দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্ববাজারে অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে তেলের দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় ছিল না সরকারের কাছে। তবে বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশের বাজারেও কমানো হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তখন বলেছিলেন, ‘বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধি ও পাচাররোধে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। তবে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশেও তার প্রতিফলন ঘটবে। ২০১৬ সালেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল।’ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমানও এক ওয়েবিনারে বলেছিলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে এলে দেশেও সেটা বিবেচনা করা হবে।’

সেই প্রসঙ্গটি টেনে আনলে বিপিসি পরিচালক অপারেশন সৈয়দ মেহেদী হাসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে তেলের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এখন কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো যে পরিমাণ দাম, তাতে দেশের বাজারে কমানোর মতো অবস্থায় আসেনি। বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম ৭০ ডলার প্রতি ব্যারেল থাকে তখন বাংলাদেশ তেল আমদানি করে দেশের বাজারে বিক্রিতে ব্রেক ইভেন পয়েন্টে থাকে। অর্থাৎ প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৭০ ডলার দামে কিনে আনলে তখন আর কোনো লোকসান হয় না। আবার বিপিসির লাভও হয় না। কিন্তু এখনো আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেল প্রতি ব্যারেল ৮৬ দশমিক ৩২ ডলার, অকটেন ৮৬ দশমিক ৫৮, আর ফার্নেস অয়েল প্রতি টন ৪৪২ দশমিক ৩৪ ডলার।’

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পর্যায়ক্রমে জ্বালানির মূল্য কমে আসতে থাকবে। ইউরোপে কোভিড সংক্রমণ আবার নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা। তাতে তেলের চাহিদা কমবে। এ ছাড়া বৃহৎ দুই অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখন বাজার থেকে নতুন করে তেল সংগ্রহ না করে মজুদ জ্বালানি ব্যবহারের ঘোষণা দেওয়ায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com