ইন্টারনেটে সেলিব্রেটি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কঠোর নৈতিক ও সাংস্কৃতিক মানদণ্ড মেনে চলার কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে চীন। দেশটির সাইবার স্পেস প্রশাসন বলেছে, ইন্টারনেটে অস্বাস্থ্যকর নান্দনিকতা, অশ্লীলতা এবং সেলিব্রিটিদের ব্যক্তিগত জীবনের স্ক্যান্ডাল নিয়ে খোশগল্প হয়, যা অসুস্থ্য সংস্কৃতি; এগুলো বন্ধেই কাজ করছেন তারা। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে এই খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএনআই।
গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় চীনের শীর্ষ ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি তালিকা তৈরি করছে। অস্বাভাবিক নান্দনিকতা, অশ্লীল কেলেঙ্কারি এবং সেলিব্রিটিদের অন্ধভাবে অনুসরণে প্ররোচিত করে; বিকৃত এমন মূল্যবোধের কন্টেন্ট তারা আটকে দিচ্ছে এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করছে।
চীনের অ্যাসোসিয়েশন অফ পারফর্মিং আর্টস লাইভ স্ট্রিমিংয় পারফরম্যান্সের ওপর নবমবারের মতো সতর্কতা জারি করেছে। যেখানে চীনা-কানাডিয়ান পপ আইডল ক্রিস উ ইফানসহ ৮৮ জন সেলিব্রিটির নাম রয়েছে। এ ছাড়াও দেশটির সরকার সেলিব্রিটিদের এবং তাদের ফ্যান ক্লাবগুলোর পাবলিক অ্যাকাউন্টের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
সম্প্রতি চীনের ইন্টারনেট থেকে পশ্চিমা ধাচের কন্টেন্টগুলো সরাতে শুরু করেছে বেইজিং। কারণ একে তাদের সংস্কৃতির জন্য হুমকি হিসেবেই দেখছে তারা। এর পরিবর্তে সমাজতন্ত্রকে প্রমোট করে এমন কন্টেন্টকে বেশি বেশি সম্প্রচারে উৎসাহিত করছে দেশটির কমিউনিস্ট সরকার। সম্প্রতি দেশটিতে শিশুদের অনলাইন ভিডিও গেম খেলার সময়সীমা সপ্তাহে তিন ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনপিপিএ) রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়াকে জানায়, ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুরা যাতে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে গেম খেলতে না পারে তা পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেবে গেমিং কোম্পানিগুলো। অভিভাবক এবং স্কুলগুলোও তা তদারকি করবে। তবে সার্বিক বিষয় দেখবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর আগে সরকারি নির্দেশনা ছিল প্রতিদিন ৯০ মিনিটের বেশি অনলাইন গেম খেলা যাবে না। শুধু ছুটির দিনে তিন ঘণ্টা খেলা যাবে।
সিনহুয়া জানায়, কোম্পানিগুলোকে শুধু মুনাফা কামানো থেকে চিন্তা সরিয়ে গেমিংয়ের নিয়মনীতি ও গঠনে পরিবর্তন আনতে বলা হয়েছে, যা আসক্তি তৈরি করবে না এবং নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। গেমে অশ্লীল ও হিংসাত্মক বিষয়বস্তু পরিহার করতে হবে। যেসব বিষয়বস্তু অস্বাস্থ্যকর মানসিকতা তৈরি করে যেমন- অর্থ লোলুপতা, মেয়েলিপনা ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এসব নিয়ম-কানুন মানবে না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি এ বাজারকে নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের সহযোগী অধ্যাপক গেংগ সংগ বলেন, ‘মেয়েলি মানসিকতার পুরুষ প্রয়োজনের সময় দেশকে রক্ষা করতে পারে না।’ ল্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির চায়নিজ স্টাডিজের সিনিয়র প্রভাষক ডেরেক হায়ার্ড বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘চীনের অনেক নেতা মনে করতে পারেন অতিরিক্ত গেম খেলা তরুণদের চরিত্র দুর্বল করে দেয়।’