মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন

মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরা অবৈধরা ৫ বছর ব্ল্যাকলিস্টেড

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ২৮৭ বার

স্পেশাল পাসে যেসব বাংলাদেশী ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন তারা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কোনোভাবেই আর মালয়েশিয়া যেতে পারবেন না। দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ এসব অবৈধদের ব্ল্যাকলিস্ট করে ১০ আঙুলের ছাপ (ফিংগার প্রিন্ট) নিয়ে পাস ইস্যু করছে।

শনিবার দুপুরে কুয়ালালামপুর শিপাং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে (বোয়িং-৭৩৭) দেশে ফেরা শ্রমিকদের কয়েকজন উড়োজাহাজের ভেতরে এ প্রতিবেদকের কাছে এ তথ্য জানান।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৈধ হওয়ার জন্য তারা তাদের কোম্পানির মালিক এবং মালয়েশিয়া সরকার মনোনীত এজেন্ট মাইজিসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে পাসপোর্ট এবং নগদ ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার রিংগিট করে দেয়ার পরও দীর্ঘদিন তাদের পালিয়ে থাকতে হয়েছে। এই সময়ের মধ্যেও তাদের ভাগ্যে জুটেনি বৈধতার কাগজ। কোম্পানি মালিক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এবারের পরিস্থিতি ভালো না, দেশে ফিরে যেতে হবে। না গেলে পরবর্তীতে জেল জরিমানা হলে তখন তারা কিছুই করতে পারবেন না। যার কারণে বাধ্য হয়ে তারা মাহাথির মোহাম্মদ সরকারের ঘোষিত ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচির অংশ হিসাবে ৭০০ রিংগিট জরিমানা, নির্ধারিত দামের তিন গুণ দামে বিমানের টিকিট কেটে এবং ঘুষসহ ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার রিংগিট খরচ করে দেশে ফিরে যাচ্ছেন।

কুয়ালালামপুর জালান ইপোর সাবা মিনান্তি রেস্টুরেন্টের কর্মী নাঈম দেশে ফিরছিলেন উড়োজাহাজের ২৫/এফ সিটের যাত্রী হিসেবে। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপে তিনি বলেন, আমি প্রায় চার বছর আগে মালয়েশিয়া এসেছিলাম ট্যুরিস্ট ভিসায়। বড় ভাই জনির ইচ্ছায় ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশে না ফিরে এখানে থেকে যাই। ভাইয়ের কোম্পানির একটি বাগানে ১২ শ’ রিংগিট বেতনে কাজ নিই। অবৈধভাবে এত দিন থাকলেও কখনো পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই মালয়েশিয়া সরকারের রি-হায়ারিং প্রোগ্রামে সাড়া দিয়ে বৈধ হওয়ার আশায় মালয় এজেন্টের কাছে পাসপোর্ট, ছবি আর তিন হাজার রিংগিট দিয়েছিলাম ইমিগ্রেশন মনোনীত তিনটি এজেন্টের একটিতে। নাম মাইজি (এমওয়াইইজি)। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাকে বৈধ হওয়ার কাগজ দিতে পারেনি। টাকা ফেরত চাইলে এ ব্যাপারে টালবাহানা শুরু করে।

তবে টাকা (রিংগিট) জমা হওয়ার পর আমাকে ফিংগার প্রিন্টের একটি কাগজ দিয়ে বলেছে, এই কাগজের মেয়াদ থাকবে এক বছর। এটা দিয়ে ভিসা লাগানো যাবে। এজেন্টের কথামতো ইমিগ্রেশনে গেলে আমাকে ফেরত দিয়ে বলে, এই কাগজ দিয়ে ভিসা লাগানোর সুযোগ নেই। এরপরই আমি হতাশ হয়ে পড়ি। তারপর থেকে অবৈধভাবেই কাজ করতে থাকি।

এক প্রশ্নের জবাবে নাঈম বলেন, মাহাথির মোহাম্মদ সরকার গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে চার মাসের জন্য সাধারণ ক্ষমার (ব্যাক ফর গুড কর্মসূচি) কর্মসূচি দিলে দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ ভিসা লাগাতে পারি নাই, এজেন্ট টাকা মেরে দিয়েছে। কী আর করব? শুনছি এবার ধরা পড়লে না-কি মালয়েশিয়া সরকার কঠিন শাস্তি দিবে। তাই ভয়েই দেশে ফিরে যাচ্ছি। তার মতে, মালয়েশিয়া সরকারের ব্যাক ফর গুড কর্মসূচিতে শুধু বাংলাদেশীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, ভাষা এবং কাজ জানা এসব শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ কোম্পানিও বন্ধ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে অনেক কোম্পানিতে পুলিশ ইমিগ্রেশন অভিযান চালিয়ে বহু শ্রমিককে ধরে নিয়ে গেছে। এখন ওই সব কোম্পানি কর্মীর অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশী ভাইয়েরা খুবই বিপদের মধ্যে আছেন। কারণ দেশে ফিরতে তিন গুণ দামে টিকিট কিনতে হয়েছে। আবার ইমিগ্রেশনে সিরিয়াল দিতে হয়েছে। চার দিন লাইনে দাঁড়িয়ে টোকেন নিতে হয়েছে। এর তিনদিন পর গেলে আমাকে স্পেশাল পাস (সুরাত) দিয়েছে। তিনি বলেন, অনেকে টিকিট কেটেও স্পেশাল পাস সংগ্রহে ব্যর্থ হচ্ছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ আছে। শুনেছি মালয়েশিয়া সরকার অবৈধদের দেশ ত্যাগে আর একদিনও সময় বাড়াবে না। এ ক্ষেত্রে যারা ধরা পড়বে তাদের ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। যারা অভিযানে ধরা পড়বে তারা জেল এবং রোতান (বেত্রাঘাত) থেকে রেহাই পেতে চাইলে প্রত্যেককে ১০ হাজার রিংগিট করে জরিমানা দিয়ে তারপরই দেশে ফিরতে হবে। এমন পরিস্থিতির শিকার শুধু নাঈম নন, তারমতো কুয়ালালামপুর শিপাং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একই ফ্লাইটে দেশে ফেরা বেশির ভাগের কাছ থেকেই পাওয়া গেছে একই বক্তব্য।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকাগামী ফ্লাইটের কেবিন ক্রু ওয়াসিক যাত্রীদের খাবার পরিবেশন করার ফাঁকে এ প্রতিবেদককে বলেন, আজকের ফ্লাইটে সিট ১৬২টি। এর মধ্যে ৭টি সিট খালি যাচ্ছে। আমরা শুনেছি ইমিগ্রেশনের কাগজপত্র জটিলতার কারণে তারা আসতে পারেননি। আউটপাসে যারা ফিরছেন তাদের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬টি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করবে। টিকিট কেটেও যাত্রীরা স্পেশাল পাস কী কারণে পাচ্ছেন না- জানতে চাইলে নাঈমের পাশের সিটে বসা আজিজুর রহমান বলেন, টিকিট কাটার পরও সিরিয়াল না পাওয়ার কারণে অনেকেই স্পেশাল পাস সংগ্রহ করতে পারছে না। দিন যত যাবে এই সমস্যা তত বাড়বে। তিনি বলেন শুক্রবার যদি আমি স্পেশাল পাস না পেতাম তাহলে আজ আমি এই ফ্লাইটে দেশে আসতে পারতাম না।

উল্লেখ্য, এবার ব্যাক ফর গুড কর্মসূচিতে প্রায় ৫০-৫৫ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী দেশে ফিরছেন। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহ: শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে মিশনের (শ্রম) অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা অবৈধদের দেশে ফিরে যেতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালান। এরই ফল হিসেবে এবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশী দেশে ফিরছেন। হাইকমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে যেন মালয়েশিয়াতে না আসেন সে ব্যাপারে তারা সবাইকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিচ্ছেন। এ দিকে ব্যাক ফর গুড কর্মসূচ শেষ হওয়ার পর পরই মালয়েশিয়া সরকার বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সপ্তাহে শ্রমবাজার নিয়ে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ নিয়ে হাইকমিশন থেকে প্রতিনিয়ত দেশটির সরকারের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com