সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ অপরাহ্ন

শীতকাল আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের সহজ মাধ্যম

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৩২৮ বার

ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতি বছরই এ দেশের মানুষের দুয়ারে হাজির হয় শীতকাল। মুমিনের জন্য শীত হাজির হয় আশীর্বাদ হয়ে।

শীতকালে নামাজ-রোজা যেমন সহজভাবে করা যায় তেমনি দান সাদকাহও করা যায় বেশি বেশি। ফলে খুব সহজেই শীতাকালে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অপার সুযোগ থাকে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শীতকে মুমিনের মাস বলেও বলে উল্লেখ করেছেন। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ সালল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল। (মুসনাদে আহমাদ)।

শীতকালে বেশকিছু ইবাদতে সহজে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।

রোজা রাখা রোজা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বড় একটি মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য এক দিন রোজা রাখল, আল্লাহ প্রতিদানস্বরূপ জাহান্নান এবং ওই ব্যক্তির মাঝখানে ৭০ বছরের দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। (বুখারি, মুসলিম)।

আর এ রোজার সবচেয়ে মোক্ষম সুযোগ হলো শীতকাল। কারণ শীতকালে দিন থাকে খুবই ছোট এবং ঠাণ্ডা। ফলে দীর্ঘ সময় না খেয়ে যেমন থাকতে হয় না, তেমন তৃষ্ণার্ত হওয়ার ভয়ও কম।

এজন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শীতল (সহজ) গনিমত হলো শীতকালে রোজা রাখা। (তিরমিযি)।

নফল নামাজ পড়া: শীতকাল তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজের বড় সুযোগ। কারণ শীতকালে রাত হয় দীর্ঘ। কেউ যদি এশার সালাতের পর রাত ৯টায় শোয় আর ভোর ৪টা পর্যন্ত টানা ঘুমায় তবু পুরো ৭ ঘণ্টা ঘুমানো হবে। আর ভোর ৪টার পরও শীতকালে প্রায় ২ ঘণ্টা রাত থাকে। একজন মুমিন চাইলে সেই ২ ঘণ্টা আল্লাহর নৈকট্য লাভে তাহাজ্জুদে কাটাতে পারেন।

তাই তো হাদিসে এসেছে- শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ পড়তে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে। (বায়হাকি)

অজু ও নামাজের অপেক্ষা: শীতকালে পরিপূর্ণভাবে অজু করা অনেক সওয়াবের কাজ। এমনকি যদি কেউ গরম পানি দিয়ে অজু করে সেও সেই পুণ্য পাবে। দিন ছোট হওয়ায় ফরজ নামাজগুলো খুব কাছাকাছি সময়ে আদায় করা হয়।

এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেব না, যার কারণে আল্লাহ পাপ মোচন করবেন এবং জান্নাতে তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন?

সাহাবিরা বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর রাসুল! নবীজি বললেন, মন না চাইলেও ভালোভাবে অজু করা, অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। (সহিহ মুসলিম)

শীতবস্ত্র বিতরণ: পর্যাপ্ত শীতবন্ত্র না থাকায় শীতকালে অনেক গরিব মানুষকে কষ্ট করতে হয়। ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের প্রকোপে নিদারুণ কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লাখো শিশু, বৃদ্ধ ও নারী পুরুষকে।

ছিন্নমূল অসহায় মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত মোকাবিলার ব্যর্থ চেষ্টা করে। আমরা চাইলে অপবায় অপচয় কমিয়ে অল্প টাকায় শীতবস্ত্র কিনে বস্ত্রহীন মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে পারি। শীতার্ত মানুষকে প্রয়োজনীয় বস্তু দিয়ে জান্নাতের মহানিয়ামত লাভে ধন্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো বজ্রহীনকে কাপড় পরাবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ রেশমি কাপড় পরাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধাতকে আহার করাবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে মহামহিম আল্লাহ তাকে জান্নাতের পবিত্র প্রতীকধারী শরাব পান করাবেন। (আবু দাউদ)

আমাদের নিকটস্থ অভাবী মানুষটিকে একটি শীতবস্ত্র কিনে দিয়ে আমরাও পেতে পারি জান্নাতের সেই সবুজ রেশমি পোশাক। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর ইসলামিক আইন গবেষণা বিভাগ (ইফতা), আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com