মানবতার সেবার নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দি অপটিমিস্টস’র বার্ষিক ফান্ড রেইজিং ও অপটিমিষ্টস কমিউনিটির পূনর্মিলণী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অবহেলিত শিশু-কিশোর-কিশোরীদের মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালাতে প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ফেয়ার ব্যাঙ্কুইটে ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানের আযোজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ইউএস কংগ্রেসওম্যান করোলিন মেলোনী ও নিউইয়র্ক ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওম্যান জেনিফার রাজকুমার। কমিউনিটি সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য অনুষ্ঠানে টাইম টেলিভিশন-কে বিশেষ সম্মাণনা প্রদান করা হয়। কংগ্রেসওম্যান কেরোলিন মেলোনীর কাছ থেকে টাইম টেলিভিশন-এর পক্ষে অ্যাওয়ার্ডটি গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক আবু তাহের। এছাড়াও অনুষ্ঠানে টিবিএন২৪, এস্টোরিয়া ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ইন্ক ও বাংলাদেশী আমেরিকান সোসাইটি-কেও সম্মাণনা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দি অপটিমিস্টস-এর সভাপতি শাহেদুল ইসলাম। বাংলাদেশ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন দি অপটিমিস্টস-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রধান মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুস সালাম চৌধুরী। এছাড়াও সংস্থার জেনারেল সেক্রেটারী একেএম শহীদুল করীম শুভেচ্ছা বক্তব্য ছাড়াও বোর্ড অব ডিরেক্টর জাহেদা বেগম হেনা সংস্থার কর্মকান্ড ভিডিও’র মাধ্যমে তুলে ধরেন।
শাহেদুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, দি অপটিমিস্ট সকলের প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের এক একটি ডলার কাউন্টেবল। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং এর সকল হিসেব নিকাশ সবার জন্য উন্মুক্ত। সংস্থার ওয়েবপেইজে গিয়ে যে কেউ যেকোন সময় সবকিছু জনতে পারবেন। তিনি এই মহৎ কাজে আরো ভূমিকা রাখার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে দি অপটিমিস্টস-এর কর্মকান্ড ভিডিও’র মাধ্যমে তুলে ধরা হয় এবং বাংলাদেশ সেবা গ্রহণকারী কয়েকজন কিশোর-কিশোরীর অভিমত ভিডিও’র মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে অপটিমিষ্টস-এর ফান্ড রেইজ করতে প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী তাজুল ইমাম ও ড. ওবায়দুল্লাহ মামুন-এর একটি করে চিত্রকর্ম এবং শিল্পী আখতার আহমেদ রাশা’র হাতে তৈরী একটি চিত্রকর্ম তিনটি নিলামে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে কংগ্রেসওম্যান কেরোলিন মেলোনী ও ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওম্যান জেনিফার রাজকুমার তাদের বক্তব্যে দি অপটিমিস্টের কর্মকান্ডর প্রশংসা করেন এবং আগামী দিনে এর প্রসারে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানে জেনিফার রাজকুমার তার পক্ষ থেকে দি অপটিমিষ্ট-কে প্রোকশেমোশন প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে দি অপটিমিস্টস-এর সাবেক সভাপতি রানা চৌধুরী, মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট এডভোকেট মজিবুর রহমান, বাংলাদেশী আমেরিকান সোসাইটি’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আমিন মেহেদী, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সবেক সাধারণ সম্পাদক জেড চৌধুরী জুয়েল, এস্টোরিয়া ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ইনক সোহেল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক জাবেদ উদ্দিন, উপদেষ্টা এমাদ চৌধুরী, কোধাধ্যক্ষ এমদাদ রহমান তরফদার, সদস্য রুবেল আহমেদ, ফাহিমুজ্জামান, এই-এইচ ড্রিম ফাউন্ডেশন ইনক’র সভাপতি আলী হোসেন, মূলধারার রাজনীতিক মেহেরুন্নেসা জোবায়দা মেরী, জয় চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। যৌথভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মিনহাজ আহমেদ সাম্মু ও ফাতেমা শাহাব রুমা।
এদিকে দি অপটিমিস্টস’র ২০তম সাধারণ সভা উপলক্ষ্যে ‘দি নিউ হোপ’ শীর্ষক একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়। এতে সংগঠনের কর্মান্ডের তথ্য ছাড়াও আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। মধ্যাহ্ন ভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
উল্লেখ্য, অসহায় মানুষের মাঝে আশার প্রদীপ জ্বালানোই লক্ষ্যে ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে মৌলভীবাজার জেলায় দি অপটিমিষ্টস’র গোড়াপত্তন ঘটে। সংস্থাটি ২০০৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের এনজিও বিষয়ক বুরোর থেকে বিদেশী সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত হয়। এই সংস্থা ‘চাইল্ড স্পন্সরশীপ’ ও ‘স্পেশাল স্পন্সরশীপ’-এর মাধ্য তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। আর শিক্ষার্থী নির্বাচনে পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ও মেধাকে গ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। ২০২০ সালের হিসেবে দি অপটিমিস্টস-এর মাধ্যমে দেশের ২৪টি জেলার ১,২০৯জন শিক্ষার্থী সুবিধা ভোগ করছে। এছাড়াও সিএসপি কর্মসূচীর আওতায় বৃত্তি, শিক্ষা উপকরণ, পোষাক, জুতা ও মোজা, টুথপেষ্ট ও টুথব্রাশ, স্বাস্থ্য সেবায় ৯,৫০০ টাকা আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এবং এসএসপি কর্মসূচীর আওতায় ২১,৮০০ টাকার আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। ২০২০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী দি অপটিমিস্টসের ১,২০৯ জন স্পন্সর রয়েছেন।
অনুষ্ঠনে যোগদানাকারী স্পন্সর এ-এইচ ১৬ ড্রিম ফাউন্ডেশনের সভাপতি আলী হোসেন এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে দি অপটিমিস্টসের কর্মকান্ডের প্রশংসা করে বলেন, ভালো কাজের সাথে থাকতে পারলে ভালোই লাগে। বিশেষ করে দেশের অবহেলিত শিশু-কিশের-কিশোরীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পেরে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি- এটাই শান্তি। তিনি বলেন, আমরা প্রবাসে অনেকেই অনেক অর্থ বিভিন্নভাবে খরচ করছি। যার কোন রিটার্ন নেই। আমার মনে হয় এক একজন প্রবাসী যদি দি অপটিমিস্টসের কর্মসূচীতে এগিয়ে আসেন তবে দেশ, দেশের অবহেলিত শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।