ডায়াবেটিস মারাত্মক একটি রোগ। বিশ্বজুড়ে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। আমাদের দেশেও প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। তাই ডায়াবেটিস দেখা দিলে যাপিতজীবনে পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি। খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে। চিনি বা চিনিজাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মেদ-ভুঁড়ি কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা বা হাঁটাহাঁটি করতে হবে। নিজেকে রাখতে হবে সচল ও কর্মময়। দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে হবে শরীর ও মন। ঘুমাতে হবে দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। ধূমপান, মদ্যপান বর্জন করতে হবে। নিয়মিত ওষুধ সেবন করে রক্তে চিনির মাত্রা কাক্সিক্ষতসীমার মধ্যে রাখতে হবে। নিয়মিত পরখ করে দেখতে হবে, শরীরে কোনো জটিলতা তৈরি হচ্ছে কিনা। ডায়েট (খাদ্যাভ্যাস), ডিসিপ্লিন (শৃঙ্খলা) ও ড্রাগ (ওষুধ)- এই তিন ‘ডি’ দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে বড় ডি তথা ডায়াবেটিসকে।
ডায়াবেটিসজনিত ত্বকে সমস্যা : ডায়াবেটিসের কারণে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত রোগীকে ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। চোখের পাতা বা দেহের যে কোনো জায়গায় ফোড়া, ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। নখের গোড়ায় প্রদাহ হতে পারে। দেহের যে কোনো ভাঁজ ও কুঁচকিতে ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে ত্বকে ভয়াবহ চুলকানি দেখা দিতে পারে। রক্তে উচ্চমাত্রায় সুগার ত্বক পানিশূন্য করে ফেলে। এতে ডায়াবেটিস রোগীর ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়, চুলকানির সৃষ্টি হয়। গলার পেছনে, কুঁচকিতে এক ধরনের কালো ও খসখসে আবরণ হয়, যার নাম অ্যাকানথোসিস নেগ্রিকানস। পায়ের সামনের ত্বকে গোলাকৃতি কালো ছোপ দাগ থাকে। ত্বকের গভীর স্তরে চর্বি ও অন্যান্য স্তর ক্ষয় হতে থাকে। কারও কারও ইনসুলিন দেওয়ার স্থানে ত্বক মোটা, উঁচু বা পাতলা হয়ে যায়। ইনসুলিন অ্যালার্জিও হতে পারে।
ত্বকের নানাবিধ সমস্যা : চোখের পাতার প্রদাহ, ফোড়া; দেহের যে কোনো জায়গায় ফোড়া, ফুসকুড়ি; ত্বক ও ত্বকের নিচে প্রদাহ; নখের গোড়ায় প্রদাহ- এসবই ডায়াবেটিসে বেশি আক্রমণ করে। ছত্রাকের আক্রমণে ত্বকের ভাঁজ- স্তনের নিচে, কুঁচকি ইত্যাদি স্থানে ফুসকুড়ি, চুলকানি হয়। রক্তের উচ্চশর্করা ত্বক পানিশূন্য করে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগীর ত্বক বেশি শুষ্ক, ফেটে যায় ও চুলকানি হয়। অ্যাকানথোসিস নেগ্রিকানস এক ধরনের কালো খসখসে ত্বক আবরণ। তা ডায়াবেটিস ও স্থূল রোগীদের গলার পেছন, ঘাড়, বাহুমূল ও কুঁচকিতে দেখা যায়। পায়ের সামনের ত্বকে গোলাকৃতি কালো ছোপ দাগ থাকে। ত্বকের গভীরতর স্তরে চর্বি ও অন্যান্য স্তর ক্ষয় হয়ে ঘা হতে পারে। কারও কারও ইনসুলিন অ্যালার্জি, ইনসুলিন দেওয়ার জায়গায় ত্বক মোটা, উঁচু বা পাতলা হয়ে যায়।
সতর্কতা : ত্বকে কাটা-ছেঁড়া, প্রদাহ, ফুসকুড়ি বা ঘা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কেটে গেলে বা আঘাত পেলে আক্রান্ত জায়গা সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করুন। প্রতিদিন পায়ের যতেœ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পা পরীক্ষা করিয়ে নিন। ফুসকুড়ি বা ফোড়া ফাটানোর চেষ্টা করবেন না। গোসল বা ত্বক ধোয়ার জন্য অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করবেন না। আঙুলের ফাঁকে লোশন ব্যবহার করবেন না। ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায় শরীরের যে কোনো অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে, ত্বকও এর বাইরে নয়। ডায়াবেটিস থাকলে ত্বকের সুস্থতা রক্ষায় বাড়তি সতর্কতা দরকার।
ত্বকের যত্ন যেভাবে নেবেন : ত্বকে কাটা-ছেঁড়া, প্রদাহ, ফুসকুড়ি বা ঘা ইত্যাদি দেখলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কেটে গেলে বা আঘাত পেলে দ্রুত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং অ্যালকোহল কিংবা আয়োডিনযুক্ত কিছু না লাগিয়ে বরং অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করুন। বছরে অন্তত দুবার চিকিৎসকের কাছে পা পরীক্ষা করিয়ে নিন। ডায়াবেটিস রোগীদের উপযোগী মোজা-জুতা-স্যান্ডেল ব্যবহার করুন, প্রতিদিন পায়ের যত্ন নিন। নিজে ফুসকুড়ি বা ফোড়া ফাটানোর চেষ্টা করবেন না। ত্বক ভেজা বা আর্দ্র রাখবেন না। শীত ভেবে গোসল বা ত্বক ধোয়ার জন্য অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করবেন না। মৃদু ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন এবং গোসলের পর আর্দ্রতা রক্ষাকারী লোশন ব্যবহার করুন। আঙুলের ফাঁকে লোশন ব্যবহার করবেন না। সর্বোপরি ডায়াবেটিস রোগীদের সব বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।
লেখক : ত্বক ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, ত্বক চর্ম যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, শেরেবাংলানগর, ঢাকা