ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে আফগানিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থা। ২০০১ সালে তালেবান শাসনের অবসানের পর গত ২০ বছরে দেশটিতে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার অন্যতম প্রধান নির্দেশক। এই সময়কালে দেশটিতে এক কোটির কাছাকাছি শিশু শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু এ বছর মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান আবারো আফগানিস্তান দখল করে নিলে শিক্ষা ব্যবস্থা আগের মতোই মুখ থুবড়ে পড়ে।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, বর্তমানে ৪০ লাখেরও বেশি আফগান শিশু স্কুলে যেতে পারছে না। এর বেশিরভাগই মেয়ে শিশু। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দেশটির মানবিক সংকট সামনের দিনগুলোতে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। সঙ্গে তালেবানের শাসনতো রয়েছেই।
ফলে গত দুই দশকে দেশটিতে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছিল তা এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। তালেবান ক্ষমতায় আসার পরই দেশটির লাখ লাখ শিক্ষকের বেতন প্রদান বন্ধ রয়েছে। বেতনের দাবিতে শিক্ষকরা আন্দোলনও করেছেন। কিন্তু তালেবান এর কোনো ব্যবস্থা করতে আগ্রহী হয়নি। সব মিলিয়ে এখন আফগানিস্তানে বিশ্বের সবথেকে বড় ‘শিক্ষা সংকট’ দেখা যাচ্ছে।
দেশটির ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ চরম ক্ষুধা নিয়ে বেঁচে আছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। এরমধ্যে ৯০ লাখই আছে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে। এই চরম সময়ে অনেক পরিবারই আর সন্তানের শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত নয়। এছাড়া এমন পরিস্থিতি মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে দেশটির শিক্ষার মানও খারাপ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তানে শিক্ষাকে অবশ্যই রাজনীতির উপরে স্থান দিতে হবে। এখন যেহেতু তালেবানই আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ করে তাই দেশটিতে শিক্ষার মান ও সুযোগ নিশ্চিত করার দায়িত্বও তাদের। কিন্তু এটি যেহেতু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ তাই আন্তর্জাতিক সরকারগুলোকেও এজন্য এগিয়ে আসতে হবে।
তালেবান ক্ষমতায় এসেই দেশটির মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ কেড়ে নিয়েছে। এতদিন পার হয়ে গেলেও এখনো আফগান মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি গোষ্ঠীটি। তালেবানের আগেও আফগান সমাজের কট্টোর রক্ষণশীলতার কারণে নারীদের শিক্ষার বিষয়টি সহজ ছিল না। দেশটিতে শিক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য আগে থেকেই ছিল। তবে গত ২০ বছরে পরিস্থিতির উন্নয়ন ছিল স্পষ্ট। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আবার সব আছড়ে পড়েছে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আফগানিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকাংশেই বিদেশি সাহায্যের উপরে নির্ভরশীল। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে সাহায্য পাঠানো বন্ধ রেখেছে পশ্চিমা দেশগুলো। আফগানিস্তানে যতদিন বিদেশি সেনারা ছিল ততদিন দেশটিতে ২ লাখ ২০ হাজার শিক্ষক সরকারি বেতন পেতেন। গত ৬ মাস ধরে তাদের বেতন বন্ধ রয়েছে। আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বেতন দিতে ব্যাপক পরিমাণ বাজেট পেলেও এখন আর সেই দিন নেই। এই সমস্যার সমাধান না করে শিক্ষা ব্যবস্থার অচলাবস্থা কাটার কোনো সুযোগ নেই।