অবরুদ্ধ কাশ্মির উপত্যকা থেকে আধাসামারিক বাহিনীর সাত হাজার জওয়ান প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। বিশেষ মর্যাদা রদের সময় বিশ্বের অন্যতম সামরিকায়িত এলাকটিতে নতুন করে যেসব সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল তা প্রত্যাহার করা যাবে কি না, এ-সংক্রান্ত একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা শেষে এমন সিদ্ধান্ত নিলো মোদি সরকার।
গত মঙ্গলবার বিজেপির সভাপতি অমিত শাহর দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাশ্মির থেকে সেনা প্রত্যাহারের এই ঘোষণা দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্সের (সিএপিএফ) ৭২ কোম্পানি জওয়ানকে কাশ্মির থেকে তাদের পুরনো কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সিএপিএফ একটি কোম্পানি গঠন করা হয় প্রায় ১০০ জওয়ানের সমন্বয়ে। গত ৫ আগস্ট ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদাসংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সময় সময় সিআরপিএফ, বিএসএফ, আইটিবিপি এবং এসএসবি থেকে সমন্বয় করে এই জওয়ানদের উপত্যকায় পাঠানো হয়।
গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ জারি হওয়ার পর সেন্ট্রাল পুলিশ ফোর্সের ২৪ কোম্পানি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ), সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স, ইন্দো-তিব্বতিয়ান বর্ডার পুলিশ ও সশস্ত্র সীমা বল-এর ১২টি করে কোম্পানিকেও তাদের কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
আগস্টে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রথমে রাজ্যসভা ও পরে লোকসভায় ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঘোষণা দেয়ার আগেই এমন কিছু একটা যে ঘটতে চলেছে, তা রাজনৈতিক আলোচনায় ছিল। কাশ্মিরের মর্যদা বাতিলের আগে গত ২৭ জুলাই ১০০ কোম্পানি সশস্ত্র বাহিনী উপত্যকায় পাঠানো হয়। মোদি সরকার গত আগস্টে ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য কাশ্মিরের সাংবিধানিক মর্যাদা রদ করে তাকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দিখণ্ডিত করে। এমন সিদ্ধান্তের আগে থেকেই সেখানকার মানুষকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। মোবাইল, টেলিফোন, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়, যা সম্প্রতি কিছুটা চালু হয়েছে।
বিতর্কিত ওই অঞ্চলটির সব দোকানপাট দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকে। গ্রেফতার করা হয় হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মী। তখন থেকে সেখানকার অর্থনীতিতের অচলাবস্থা চলছে। উপত্যকার অর্থনীতির চাকা নিয়ন্ত্রণকারী ফলের বাণিজ্যে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া পর্যটনসহ অর্থনীতির বাকি খাতগুলোর অবস্থাও নাজেহাল।
গত ৩১ অক্টোবর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে জম্মু ও কাশ্মিরের রাজ্যের মর্যাদা রদ করে পৃথক দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়। এর একটি জম্মু ও কাশ্মির, অন্যটি লাদাখ। এখন এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দু’টি পরিচালনা করছেন দুই লেফটেন্যান্ট গভর্নর।
প্রচণ্ড শীতে পাইপের পানিও জমাট
এ দিকে প্রচণ্ড শীতেও কাঁপছে ভূস্বর্গখ্যাত ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মির ও লাদাখ। চলতি মৌসুমের সবেচেয়ে শীত রাত কাটিয়ে শ্রীনগরসহ গোটা উপত্যকার মানুষ একটু রোদের পানে তাকিয়ে আছে। দেশটির আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বড়দিনের আগের রাতে সবচেয়ে শীতল রাতে কাটিয়েছেন কাশ্মিরবাসী।
আবহাওয়া দফতরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গত মঙ্গলবার জম্মু-কাশ্মির ও লাদাখজুড়ে ন্যূনতম তাপমাত্রা হিমাঙ্কের চেয়ে কয়েক ডিগ্রি নিচে নেমে গেছে। শ্রীনগরে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সেই রাতে। সেখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে নামলে স্বাভাবিকভাবে ব্যাহত সেখানকার জনজীবন। তীব্র ঠাণ্ডায় জেরে উপত্যকার ‘রাজধানী’ শ্রীনগরসহ জম্মু-কাশ্মিরে পানি সরবরাহও প্রায় বন্ধ। কেননা পাইপের মধ্যে দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার সময় তা জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর একইভাবে কাশ্মিরে তীব্র ঠাণ্ডা নেমেছিল।
আবহাওয়া দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, উত্তর কাশ্মিরের গুলমার্গের স্কি-রিসোর্টে মঙ্গলবার রাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রেকর্ড করা রয়েছে। তার আগের রাতে সেখানে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দক্ষিণ কাশ্মিরের পেহেলগামে গত রাতের তাপমাত্রা মাইনাস ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। গোটা কাশ্মিরজুড়ে বরফের চাদর, সড়কে বাড়িতে কিংবা গাড়িতে বরফের স্তূপ জমে আছে। স্বাভাবিক চলাচল আর যাতায়ত দুরূহ হয়ে পড়ায় ঘর থেকে বের হতে পারছে না সাধারণ মানুষ। সূত্র : এনডিটিভি।