রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৬ অপরাহ্ন

চোখ রাঙাচ্ছে ওমিক্রন, ফের দ্রুত বাড়ছে সংক্রমণ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১১৭ বার

দুনিয়া জুড়ে ফের করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রম মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। ওমিক্রনের কারণে বিশ্বব্যাপী করোনার সুনামি শুরু হয়েছে। প্রতিবেশী দেশেও ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব চলছে। বাংলাদেশও ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত ১০ জনের দেহে ওমিক্রন শনাক্তের খবর পাওযা গেছে। বিশ্বজুড়ে ওমিক্রনের কারণে সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাকে সুনামির সঙ্গে তুলনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচএ)। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন সংস্থাটি। এ পরিস্থিতিতে দেশে স্বাস্থ্যবিধি উধাও।

ওমিক্রন নিয়ে প্রস্তুতিও খুবই ঢিলাঢালা। দুই সপ্তাহ ধরেই সংক্রমণ শনাক্তের হার ফের ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিনই করোনার শনাক্ত বাড়ছেই। ফের দৈনিক শনাক্ত ৫শ’ অতিক্রম করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার আবার পৌনে ৩ শতাংশে উঠেছে। এতে করোনাভাইরাসের আবারো পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা জনস্বাস্থ্যবিদদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ করোনার আরেকটি ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে দেশে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। শীতের মৌসুম হওয়ায় যতধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান হওয়া সম্ভব, সবই হচ্ছে। বিয়ে, পিকনিক, ঘোরাঘুরি, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে স্থানীয় নির্বাচনও। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ, মিছিলগুলোতে অনুপস্থিত থাকছে স্বাস্থ্যবিধি।

এদিকে দেশে আরও তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। তারা সবাই ঢাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে একজন পুরুষ ও দু’জন নারী। পুরুষের বয়স ৬৫ এবং ২ নারীর বয়স ৪৯ ও ৬৫ বছর। জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জার (জিআইএসএআইডি) থেকে এই তথ্য জানা গেছে। জিআইএসএআইডি’র তথ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত ১০ জনের ওমিক্রন শনাক্তের তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকার ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভসের তথ্য অনুযায়ী, তাদের সবাই ঢাকার বাসিন্দা। প্রতিষ্ঠানটি গত সোমবার এই রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটের মধ্যে বাংলাদেশেও দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। এক দিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা ১১ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ।

দেশের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, যেভাবে ওমিক্রন ধেয়ে আসছে, তাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এটা প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই। সবার মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। আর ওমিক্রনে যেহেতু মৃদু উপসর্গ তাই এটার চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই। যে যেখানে আছেন, সেখানেই চিকিৎসা সেবা পাবেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ওমিক্রন বিশ্বব্যাপী যেভাবে সুনামির মতো ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে অনেকে দিগ্বিদিক হারিয়ে ফেলছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়বে। তাই সময় থাকতে সচেতন হতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ওমিক্রনে সারা দেশে সুনামি শুরু হয়েছে। করোনার দুই বছরে আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। ওমিক্রন প্রতিরোধ করতে সঠিক কৌশলগত পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রতিরোধে শতভাগ জনগোষ্ঠীকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করতে হবে। সময় থাকতে সবার স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। মাস্ক পরার পাশাপাশি হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে ৮০ ভাগ নয়, শতভাগ মানুষকে দুই ডোজ টিকাসহ বুস্টার ডোজ টিকা দিতে হবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা এবং সংস্থাটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, কোথাও স্বাস্থ্যবিধি নাই। এখনও মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে, মৃত্যু হচ্ছে। শহর কিংবা গ্রাম কেউ মাস্ক পরছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশিত ১৫ দফার মধ্যে রেস্টুরেন্ট, গণপরিবহনের জন্য যেসব নির্দেশনা ছিল সেগুলোর বালাই নেই।?? স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি করতে কেবল নির্দেশনাই যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতে হবে। কাউকে একক দায় দিয়ে লাভ নেই। নির্বাচনি কর্তৃপক্ষ, কমিউনিটি সেন্টার, রেস্টুরেন্টসহ যেসব জায়গায় ভিড় হচ্ছে; সেই কর্তৃপক্ষকে দায় নেওয়ার কাজটা করাতে হবে সরকারকে। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই করোনার আরেকটি ঢেউয়ের আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আরেকটি ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তা চলিত বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ আসতে পারে। তিনি বলেন, গতবছর এপ্রিলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে হয়েছিল থার্ড ওয়েভ। এর আগে আলফা-বিটা দিয়ে হয়েছিল সেকেন্ড ওয়েভ। মাঝখানে কমে গিয়েছিল। কিন্তু সেটা শূন্যে নামেনি। তিনি বলেন, সবাইকে টিকা নিতে হবে। টিকা না নিলে ঝুঁকিটা বেশি থাকবে। সংক্রমণ বাড়লে মৃত্যুও বাড়বে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, সংক্রমণ বেশি ছড়ায় হাসপাতাল থেকে। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বেশি নজরে রাখতে হবে।

নতুন করে ৫১২ জন শনাক্ত: দেশে ফের প্রতিদিন দৈনিক করোনার শনাক্ত বাড়ছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮ হাজার ৭২ জনে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৫১২ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫৩৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২ দশমিক ৭৪ শতাংশে পৌঁছেছে। যা আগের দিন ছিল ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯০ জন এবং এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ১০১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে ৮৫২টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৫২২টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১৮ হাজার ৬৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৪৮৮ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচানয় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২ জনের মধ্যে একজন পুরুষ এবং এক জন নারী। দেশে মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৭ হাজার ৯৫৭ জন এবং নারী ১০ হাজার ১১৫ জন। তাদের মধ্যে বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬১ থেকে ৭০ বছরের ১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ২ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগে ১ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদ্বয় সরকারি হাসপতালে মারা গেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com