আল্লাহ কুরআনের সূরা নাহলে এমন তিনটি আদেশ বা নির্দেশ দিয়েছেন যার বিপরীতে আবার তিনটি কাজকে নিষেধ করেছেন। কুরআনে বর্ণিত আদেশ আর নিষেধগুলো মানবজীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বহন করে। আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আদল (ন্যায়পরায়ণতা), ইহসান (সদাচরণ) ও আত্মীয়স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন; তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো’ (সূরা নাহল-৯০)।
প্রথমত আল্লাহ আদলের নির্দেশ দিচ্ছেন। আদল শব্দের আসল ও আভিধানিক অর্থ সমান করা। স্বল্পতা ও বাহুল্যের মাঝামাঝি সমতাকেও আদল বলা হয়। (ফাতহুল কাদির) ইবনে আব্বাস বলেন, এর অর্থ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।
কারো মতে আদল হচ্ছে ফরজ। আবার কারো মতে আদল হচ্ছে ইনসাফ। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য অর্থ হচ্ছে আভিধানিক অর্থ। কারণ কোনো কিছুতে বাড়াবাড়ি যেমন খারাপ তেমনি কোনো কিছুতে কমতি করাও খারাপ।
তার পরের নির্দেশ হচ্ছে ইহসান করা। এর আভিধানিক অর্থ সুন্দর করা। যা ওয়াজিব নয় তা অতিরিক্ত প্রদান করা। যেমন অতিরিক্ত সাদকা। (ফাতহুল কাদির) প্রসিদ্ধ হাদিসে জিবরিল এ স্বয়ং রাসূল সা: ইহসানের যে অর্থ বর্ণনা করেছেন তা হচ্ছে ‘ইবাদতের ইহসান’। এর সারমর্ম এই যে, আল্লাহর ইবাদত এভাবে করা দরকার, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি এ স্তর অর্জন করতে না পারো, তবে এটুকু বিশ্বাস তো প্রত্যেক ইবাদতকারীরই থাকা উচিত যে, আল্লাহ তার কাজ দেখছেন (ফাতহুল কাদির)।
তৃতীয় নির্দেশ হচ্ছে আত্মীয়দের দান করা। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আত্মীয়কে তার প্রাপ্য প্রদান করা’ (সূরা ইসরা-২৬)। অর্থাৎ অর্থ দিয়ে আর্থিক সেবা করা, দৈহিক সেবা করা, অসুস্থ হলে দেখাশোনা করা, মৌখিক সান্ত¡না ও সহানুভূতি প্রকাশ করা ইত্যাদি সবই উপরোক্ত প্রাপ্যের অন্তর্ভুক্ত। মোটকথা, তাদের যা প্রয়োজন তা প্রদান করা (ফাতহুল কাদির)। ইহসান শব্দের মধ্যে আত্মীয়ের প্রাপ্য দেয়ার কথাও অন্তর্ভুক্ত ছিল; কিন্তু অধিক গুরুত্ব বোঝানোর জন্য একে পৃথক করে বলা হয়েছে। আর উপরের তিনটি নির্দেশ হচ্ছে এই আয়াতের ইতিবাচক নির্দেশ (ফাতহুল কাদির)।
নির্দেশের পর আবার তিন প্রকার কাজ করতে নিষেধ করেছেন- অশ্লীলতা, যাবতীয় মন্দ কাজ এবং জুলুম ও উৎপীড়ন। তিনটি সৎ কাজের মোকাবেলায় আল্লাহ তিনটি অসৎ কাজ করতে নিষেধ করেন। অর্থাৎ আল্লাহ অশ্লীলতা, অসৎ কর্ম ও সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেছেন।
প্রথমটি হচ্ছে ‘ফাহশা’ যার অর্থ অশ্লীলতা-নির্লজ্জতা। কথায় হোক বা কাজে প্রকাশ্য মন্দকর্ম অথবা কথাকে অশ্লীলতা বলা হয়, যাকে প্রত্যেকেই মন্দ মনে করে। সব রকমের অশালীন, কদর্য ও নির্লজ্জ কাজ এর অন্তর্ভুক্ত। এমন প্রত্যেকটি কাজ যা কুৎসিত, নোঙরা, ঘৃণ্য ও লজ্জাকর। তাকেই অশ্লীলতা বলে। যেমন- কৃপণতা, ব্যভিচার, উলঙ্গতা, সমকামিতা, মুহাররাম আত্মীয়কে বিয়ে করা, চুরি, শরাব পান, গালাগালি করা, কটু কথা বলা ইত্যাদি। এভাবে সর্বসমক্ষে বেহায়াপনা করা ও খারাপ কাজ করা এবং খারাপ কাজকে ছড়িয়ে দেয়াও অশ্লীলতা নির্লজ্জতার অন্তর্ভুক্ত। যেমন- মিথ্যা প্রচারণা, মিথ্যা দোষারোপ, গোপন অপরাধ জনসমুক্ষে বলে বেড়ানো, অসৎ কাজের প্ররোচক গল্প, নাটক ও চলচ্চিত্র, উলঙ্গ চিত্র, মেয়েদের সাজগোজ করে জনসমুক্ষে আসা, নারী-পুরুষ প্রকাশ্যে মেলামেশা এবং মঞ্চে মেয়েদের নাচগান করা ও তাদের শারীরিক অঙ্গভঙ্গির প্রদর্শনী করা ইত্যাদি।
নিষিদ্ধ এর পরের বিষয়টি হচ্ছে- ‘মুনকার’ তথা দুষ্কৃতি বা অসৎ কর্ম, যা এমন কথা অথবা কাজকে বলা হয় যা শরিয়ত হারাম করেছে। যাবতীয় গোনাহই এর অন্তর্ভুক্ত। কারো কারো মতে, এর অর্থ শিরক। (ফাতহুল কাদির)।
এর পরের জিনিসটি হচ্ছে সীমালঙ্ঘন করা। আবার জুলুমও হতে পারে। অর্থাৎ এর মাধ্যম জুলুম ও উৎপীড়ন বোঝানো হয়েছে। নিজের সীমা অতিক্রম করা এবং অন্যের অধিকার লঙ্ঘন করা ও তার ওপর হস্তক্ষেপ করা। তা আল্লাহর হক হোক অথবা বান্দার হক। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর আদেশ-নিষেধসমূহ মেনে চলার তৌফিক দান করুক। আমীন।