রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫১ পূর্বাহ্ন

সান্ধ্য কোর্সে নেতিবাচক প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২২
  • ২৬২ বার

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সান্ধ্য, উইকেন্ড ও এক্সিকিউটিভ প্রভৃতি কোর্স সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তারা মনে করে এ ধরনের কোর্স বন্ধ হওয়া জরুরি। তবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী ইউজিসির পূর্ব অনুমোদনক্রমে ডিপ্লোমা, শর্ট কোর্স, ভোকেশনাল ও ট্রেনিং প্রোগ্রাম পরিচালনা করার পক্ষে মত দিয়েছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্ব পালনকারী ইউজিসি। বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন মতামত তুলে ধরেছে কমিশন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে ইউজিসির এই প্রতিবেদন পেশ করে।

প্রতিবেদনে দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সান্ধ্য কোর্স বন্ধ এবং গবেষণার মান বৃদ্ধির জন্য সফটওয়্যার ব্যবহারের সুপারিশ করেছে ইউজিসি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, গবেষণার জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছাতে সমন্বিত উদ্যোগ ও বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিং নির্ধারণী সূচকের সঙ্গে সংগতি রেখে একটি নীতিমালা চায় ইউজিসি। তদুপরি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণাকর্মের মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য সফটওয়্যার (যেমন-ঞঁৎহরঃরহ) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং বাংলা গবেষণাপত্র ও পুস্তকের জন্যও এ ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উদ্যোগ নিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর আমাদের সময়কে বলেন, তিনটি ইনস্টিটিউশন করার যে সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলোর জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি করছি আমরা। অটোনোমাস বডি না হলে এসব প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ের জন্য ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি ও গবেষকদের জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির সুপারিশ করা হয়েছে। কীভাবে গবেষকদের দেশে ধরে রাখা যায় সে সংক্রান্ত পলিসি তৈরি করা, কীভাবে গবেষকরা সুবিধা পেতে পারেন; এসব নিয়েও কাজ করবে ওই ইনস্টিটিউশন।

ইউজিসির সুপারিশে বলা হয়, উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধি ও সমুন্নত রাখতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির অভিন্ন নীতিমালা করতে হবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইউনিভার্সিটি ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কোলাবরেশন বাড়াতে হবে। এর জন্য চাহিদাভিত্তিক, উদ্দেশ্যমুখী ও ফোকাসনির্ভর প্রোগ্রাম চালুর মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিতে পারে।

উচ্চশিক্ষায় জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত ও গবেষণাগারের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য আর্থিক বরাদ্দ রাখার পাশাপাশি ফলাফলভিত্তিক কারিকুলাম প্রণয়ন করা যেতে পারে। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টিগ্রেটেড ইউনিভার্সিটি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন সমুন্নত রেখে একটি ‘সমন্বিত আর্থিক নীতিমালা ও ম্যানুয়েল’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। দেশে উচ্চশিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা যে কোনো বিচারেই অপ্রতুল। কাজেই, জাতীয় বাজেটে উচ্চশিক্ষায় খাতওয়ারি বরাদ্দ চিহ্নিত করে অর্থ সংস্থানের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। ২০২২ সালের মধ্যে উচ্চশিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আলোচনা করে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাবে বিশ্ববিদ্যালয়। যার ফলে পণ্যের উৎকর্ষ বাড়ানো ও তাতে বৈচিত্র্য আনা যাবে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির ঘটনা বাড়ছে। এ নিয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় গবেষণাপত্র চুরির বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা যাচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি আবশ্যক।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com