দেশে করোনার বিস্তার রোধে ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার, যা ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। করোনার নতুন ঢেউ মোকাবিলার প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসাবে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে-দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
এছাড়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঘরের বাইরে বের হলে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
১২ বছরের ঊর্ধ্বের সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। অর্থাৎ টিকা নেওয়ার বিষয়েও সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। করোনার বিস্তার রোধে স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দরগুলোয় স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং এসব বন্দরে কর্মরত সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
গণপরিবহণ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে-ট্রেন, বাস ও লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেকসংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিগগিরই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা জারি করবে এবং সেসব দিকনির্দেশনার বাস্তবায়নেও যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। অতীতে লক্ষ করা গেছে, কর্তৃপক্ষের দিকনির্দেশনা অমান্য করে অনেক গণপরিবহণে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধেও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি নির্দেশনায় সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কাজেই নিজে টিকা গ্রহণের পাশাপাশি অন্যকে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়েও জনগণকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় সরকারি নির্দেশনায় উন্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার অনুষ্ঠান ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন, এটাই কাম্য।
জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে পাঁচ দিন বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে। বয়স ১২ বছরের কম হওয়ায় এই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে পাঁচ দিন বিদ্যালয়ে যাওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
অতীতে লক্ষ করা গেছে, সরকারিভাবে কঠোর বিধিনিষেধ জারির আগ পর্যন্ত অনেকে সতর্ক হওয়ার দরকার মনে করেনি। সমাজে এমন বহু মানুষ আছেন, যারা প্রায় সব ব্যাপারেই উদাসীন। এসব মানুষ কেবল যে নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাই নয়, তাদের কারণে অন্যদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে করোনা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করার আগেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে বর্তমানে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বহু মানুষ। বস্তুত হাটবাজার ও গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি প্রায় উধাও। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে বিশ্বের অনেক দেশ এখন পর্যুদস্ত। কাজেই দেশে করোনা পরিস্থিতি নতুন করে ভয়াবহ আকার ধারণ করার আগেই সবাইকে সচেতন হতে হবে।