যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশি মোদাসসার খন্দকারের খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জুমার নামাজের পর ওজন পার্কের আল-আমান জামে মসজিদের সামনে উক্ত সমাবেশে প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, পুলিশ কর্মকর্তা, সামাজিক সংগঠনের সদস্য, সমাজকর্মী এবং বিভিন্ন ধর্মের নেতারা উপস্থিত হয়ে বিচার চাই, বিচার চাই শ্লোগানে মুখরিত করে তোলেন ওজন পার্ক এলাকা।
বক্তারা বলেন, মোদাসসার হত্যাকাণ্ডকে একটি পরিকল্পিত ‘ঘৃণ্য অপরাধ’। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন বক্তারা। সমাবেশে উপস্থিত হয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, মানুষের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, তার সবটা দিয়েই খুনিদের আটকের চেষ্টা করবেন তারা। এসময় তারা নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, তারা যেন ন্যায়বিচার পান, পুলিশের পক্ষে সেজন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
খায়রুল ইসলাম খোকনের সঞ্চালনায় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বোরহান উদ্দিন কফিল, কবির চৌধুরী, মিসবাহ আবদীন, মোহাম্মদ খান, হেলাল শেখ, ওয়ালিউর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা নিউইয়র্ক স্টেট ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ডায়ানা রিচার্ডসন, এসেম্বেলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার, ডিস্ট্রিক্ট ৩৭’র কাউন্সিল ওম্যান স্যান্ডি নার্স, ডিস্ট্রিক্ট ৩২’র কাউন্সিল ওম্যান জোয়ান আরিওলা, ডিস্ট্রিক্ট ৩৯’র কাউন্সিলি ওম্যান শাহানা হানিফ। এনওয়াইয়পিডি’র ব্রুকলিন নর্থের কমান্ডিং অফিসার জুডিথ হ্যারিসন, ডেপুটি ইন্সপেক্টর রোহান গ্রিফিথসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
বক্তব্য রাখেন মোদাসসার খন্দকারের ছোট ভাই অনিক খন্দকার। এসময় মোদাসসারের শিশু পুত্র লাবিব খন্দকারও উপস্থিত ছিলেন।সভায় ক্ষুব্ধ কন্ঠে বক্তারা বলেন- শুধু অভিবাসী, শুধু মুসলিম, শুধু সংখ্যালঘু? এসব কারণেই মোদাসসার হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। খুনীদের গ্রেফতার, হেইট ক্রাইম ও গান ভায়োলেন্স মুক্ত নিরাপদ কমিউনিটি সবার নাগরিক অধিকার। কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ সভা করে যৌথ রেজুলেশন মেয়র অফিস এবং এনওয়াইপিডিতে প্রেরণ করবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা তদন্ত এবং খুনীদের গ্রেফতারের দাবী জানাই।
সাবেক ডিটেক্টিভ ওয়ালিউর রহমান প্রশ্ন রেখে বলেন- সিটি কার? ক্রিমিনালের নাকি নাগরিকদের? অথচ ক্রিমিনাল হেঁটে বেড়াই কউিনিটিতে আর নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে। প্রতিদিন মানুষ মরে। সিটি কাউন্সিল কি করে? সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে।
মোদাসসার খন্দকারের ছোট ভাই অনিক খন্দকার বলেন- বাবা, মা, তিনি, ভাইয়ের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা আমরা মরে গেছি এই হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে। আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ দুনিয়াতেই ঘাতকের শাস্তি দিবেন।
দুই এসেম্বলিওম্যান বলেন- আমরা ব্রুকলিনে আর একটি প্রাণও হারাতে চাইনা। গান ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। আলবানিতে এনিয়ে আমরা কথা বলবো সেখানে মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি তুল ধরা হবে। মোদাসসারের পরিবার একা নয় তাদের সাথে আমরা আছি।
সিটি কাউন্সিলওম্যানবৃন্দ মেয়র এরিক এডামস্’র বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন-মোদাসসার হত্যাকান্ড এবং গান ভায়োলেন্স একটি নীল নক্সার অংশ। মেয়রসহ আমরা সেটি মনে করি। আমরা শোকাহত বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটির পাশে দাঁড়িয়েছি। কমিউনিটিতে বসবাসরত সকল মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে গান ভায়োলেন্সকে রুখে দিতে হবে। যতো দ্রুত সম্ভব এই হত্যাকান্ডের বিচারে কমিউনিটির পাশে থাকবেন তারা।
হত্যাকাণ্ডের তিন দিনপার হলেও পুলিশ এখনো কাউকে আটক করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আল আমান জামে মসজিদের ভাইস প্রেসিডেন্ট কবির চৌধুরী বলেন, খুনিদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া না গেলে, তারা ভবিষ্যতে আরো দুঃসাহস দেখাবে। তাই ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।
ব্রুকলিন থেকে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান কাউন্সিল ওম্যান শাহানা হানিফ বলেছেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের কাছে প্রথম উদ্দেশ্য। পুলিশের সঙ্গে আমাদের প্রত্যেককে তৎপর হতে হবে। নিউ ইয়র্ক শহরে অস্ত্রের অবাধ ব্যবহার রোধে তার জায়গা থেকে সম্ভাব্য সবকিছুই করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হত্যাকান্ডে জড়িতদের সন্ধানে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ-এনওয়াইপিডির পক্ষ থেকে হ্যান্ডবিল প্রকাশ করা হয়েছে। খুনিদের বিষয়ে তথ্য দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। খন্দকার মোদাসসার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের পাশাপাশি চলছে আরো নানা তৎপরতা। মসজিদ, বিভিন্ন বাড়ি, দোকান ও রাস্তার সিসি ক্যামেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।