নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত ওজন পার্কে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলীতে নিহত বাংলাদেশী যুবক খন্দকার মোদাচ্ছের হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। প্রতিবাদ সভায় অবিলম্বে মোদাচ্ছের হত্যাকারীকে এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির নিরাপত্তা দাবী করা হয়েছে। সেই সাথে গান কন্ট্রোল আইন সংস্কার এবং অতিরিক্ত পুলিশী টহল বৃদ্ধির দাবী উঠেছে। শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারী) বাদ জুম্মা স্থানীয় ফরবেল ষ্ট্রীটস্থ আল আমান মসজিদ ভবনের সামনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে খন্দকার মোদাচ্ছেরের নামাজে জানাজা শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারী) বাদম জোদহর আল আমান মসজিদে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তার মরদেহ ওয়াশিংটন মেমোরিয়ালস্থ মুসলিম কবর স্থানে দাফন করা হবে। অপরদিকে খন্দকার মোদাচ্ছের হত্যার সাথে জড়িতদের সন্ধানে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ (এনওয়াইসি পুলিশ) হ্যান্ডবিল প্রকাশ করে খুনিদের ধরতে সর্বোচ্চ ৩,৫০০ ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করেছে।
জানা গেছে, খন্দকার মোদাচ্ছের হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে চলছে নানা তদন্ত। রাস্তার সিসি ক্যামেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশ বলছে, মোদাচ্ছের হত্যার ঘটনার সাথে এক ব্যক্তি জড়িত। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রতিবাদ সভা: খন্দকার মোদাচ্ছের হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার ওজন পার্কে আয়োজিত স্মরণকালের বিশাল সভায় নিউইয়র্ক ষ্টেট ও সিটির নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছাড়াও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা খন্দকার মোদাচ্ছের হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ, ঘটনা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদ সমাবেশে সর্বস্তরের হাজারো বাংলাদেশী সহ অন্যান্য কমিউনিটির বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘মোদাচ্ছের মোদাচ্ছের ইন আওয়ার হার্ট’ প্রভৃতি স্লোগানে ওজন পার্ক মুখর করে তোলেন।
প্রতিবাদ সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আল আমান মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলী। এরপর সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট কবীর চৌধুরী। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্রুকলীন বরোর ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ডিয়ানা রিচার্ডসন, ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওম্যান জেনিফার রাজকুমার, এনওয়াইপিডি’র ৭৫ প্রিসেঙ্কটের ডেপুটি ইন্সপেক্টর রোহান গ্রিফথ, সিটি কাউন্সিলওম্যান স্যান্ডি নার্স, জোআন এরোলা ও শাহানা হানিফ, সাবেক সিটি কাউন্স্যিান এরিক ডিলান, কমিউনিটি অ্যক্টিভিষ্ট অজিজ ভূইয়া, হেলাল শেখ, আনোয়ার খান, খোকন, বিএসিডিওয়াই-এর সভাপতি মিসবা আবদীন, সিওপিসিডি’র এক্সিকিউটিভ ডিরক্টের মোহাম্মদ খান প্রমুখ। নিহত খন্দকার মোদাচ্ছের ছোট ভাই অনিক খন্দকারও বক্তব্য রাখেন।
সভায় কমিউনিটির উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, বিয়ানীবাজার সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি বুরহান উদ্দিন কপিল, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট আবু নাসের, বদরুল হক, মিসবাহ আহমেদ, ড. জাহাঙ্গীর কবীর, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি, বিএসিডিওয়াই, সিটি লাইন ওজন পার্ক বিজনেস এসোসিয়েশন (সিওবিএ) প্রভৃতি সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী নিজ নিজ ব্যানার এবং ‘সেভ আওয়ার সিটি’, ‘স্টপ হেট ক্রাইম’, ‘অল লাইভস ম্যাটার’ শীর্ষক প্লেকার্ড নিয়ে যোগ দেন।
প্রতিবাদ সভায় খন্দকার মোদাচ্ছের সন্তান: দূর্বৃত্তের গুলিতে খুন হওয়া বাংলাদেশী যুবক খন্দকার মোদাচ্ছেরের একমাত্র পুত্র লাবিব খন্দকারকে শুক্রবারের প্রতিবাদ সভায় হাজির করা হয়। সভায় ৪ বছরের ফুটফুটে শিশুপুত্রকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় উপস্থিত হাজারো জনতা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ চোখের পানি ফেলেন।
খুনিদের ধরতে সর্বোচ্চ ৩,৫০০ ডলার পুরষ্কার ঘোষণা: খন্দকার মোদাচ্ছের হত্যার সাথে জড়িতদের সন্ধানে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ (এনওয়াইসি পুলিশ)-এর ক্রাইম স্টপার বিভাগ হ্যান্ডবিল প্রকাশ করে খুনিদের ধরতে সর্বোচ্চ ৩,৫০০ ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করেছে। স্থানীয় ৭৫ পুলিশ প্রিসেঙ্কট (থানা)-এর প্যাডে ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলায় হাতে লেখা প্রচারিত ‘একটি হত্যা সম্পর্কিত তথ্যের জন্য সর্বোচ্চ ৩,৫০০ ডলার পুরষ্কার’ শীর্ষক হ্যান্ডবিলে বলা হয়েছে: ‘বুধবার ফেব্রুয়ারী ০৯, ২০২২, আনুমানিক ভোর ১২:৪০ ব্রুকলীনের ৭৫ থানার অধীনে ২০০ ফরবেল রাস্তার সামনে একজন অজানা অপরাধীর গুলিতে একজন পুরুষ এর মৃত্যু ঘটে। কল করুন: ১-৮০০-৫৭৭-৮৪৭৭ (টিআইপিএস)
উপরের অপরাধ এর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে এবং অভিযুক্ত করার পরে ক্রাইম স্টপার ৩,৫০০ ডলার পুরষ্কার প্রদান করবে।
এই অপরাধের বিষয়ে তথ্য থাকলে ক্রাইম স্টপার এর সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ক্রাইম স্টপার এ সকল কলকারীর পরিচয় গোপন রাখতে পারবেন।’
উল্লেখ্য, ওজনপার্কের গ্লেনমোর এভিনিউয়ের কাছে ফরবেল স্ট্রিটে গত মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে খন্দকার মোদাচ্ছের হত্যাকান্ডের শিকার হন। এই ঘটনায় বাংলাদেশী কমিউনিটিতে উদ্বেগ-আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা অবিলম্বে মোদাচ্ছেন হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিতে প্রশাসনের কঠোর উদ্যোগ দাবী করছেন।
নিহত খন্দকার মোদাচ্ছের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ। তিনি ওজন পার্কের ২০০ ফরবেল স্ট্রীটের বাসায় মা, স্ত্রী ও ৪ বছরের সন্তান নিয়ে বিগত প্রায় দু’বছর ধরে বাস করছিলেন। খন্দকার মোদাচ্ছের জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্র্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে ওজন পার্কের গ্লেনমোড় ও ফরবেল স্ট্রিটের কর্ণারে গুলীবিদ্ধ হন। অজ্ঞাত বন্দুকধারী পরপর দু’টি গুলী করে দ্রুত চলে যায়। গুলীর শব্দ পেয়ে কে বা কারা ৯১১-এর কল করার পর খবর পেয়ে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে তাকে (খন্দকার মোদাচ্ছের) অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে জ্যামাইকা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একটি সূত্র জানায়, দূর্বৃত্তরা গাড়ি ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে তিনি বাঁধা দিলে তারা (দূর্বত্তরা) তাকে গুলি করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।