কর্ণাটকে হিজাব নিয়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাজ্যের হাইকোর্টে বিষয়টি শুনানি চলাকালীন ভুয়া তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতেরও চেষ্টা করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় বিপজ্জনক ধারণা ও সংগঠনগুলোকে মূলধারায় ফেরানোর চেষ্টা চলছে।
হিজাব বিতর্ক দুটি ভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এক, সকলের জন্য সমান আচরণ নিশ্চিত করে এমন নৈর্ব্যক্তিক আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পাবলিক ইনস্টিটিউটগুলোতে স্বার্থান্বেষী এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন করা যেতে পারে কিনা। দুই, হিজাব ‘ব্যক্তিগত পছন্দ’ হলে তাতে মানুষের অধিকার ও পছন্দের স্বাধীনতা আছে।
হিজাব বিতর্কে যখন বিদেশি প্রকাশনাগুলোতে একতরফা ও বিকৃত বিবরণ উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তখন কর্ণাটকের ছাত্রদের উসকে দেওয়া ও অতীতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত সংগঠনগুলোকে মূলধারায় ফেরানোয় চেষ্টা চলছে। বিষয়টি নিয়ে কর্ণাটকে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার (পিএফআই) অস্থিতিশীলতা তৈরি নানা ষড়যন্ত্রের ঘটনার কথা বলা হয়েছে। সন্ত্রাসী কার্যক্রমেরও অভিযোগ রয়েছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে।
এই প্রকাশনায় লেখার আগে লেখক আলোচনা করেছেন কেন পাবলিক ইনস্টিটিউশনগুলো পরিচিত এবং কেন তাদের সর্বদা নৈর্ব্যক্তিক আইন মেনে চলতে হবে। দ্বিতীয় বিষয়, হিজাব একটি ‘ব্যক্তিগত পছন্দ’ কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে; এমনকি বিষয়টি আদালতে শুনানি চলছে।
কংগ্রেস নেতৃত্ব হিজাবকে ‘ব্যক্তিগত পছন্দ’ বলার পক্ষে বলে মনে হচ্ছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদ্রা সম্প্রতি টুইট করেছেন,‘বিকিনি বা ঘুঙঘাট হোক, জিন্স বা হিজাব হোক না কেন, তিনি কী পরতে চান তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একজন নারীর।’
কংগ্রেস নেতা শশী থারুর টুইটে বলেছেন, ‘এটি ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। কোনো নারীকে কিছু পরতে বা না পরতে বাধ্য করা উচিত নয়; তাকে তার জন্য যা সঠিক তা করতে দিন…।’
কিছু দলীয় আইনপ্রণেতা ইতোমধ্যে হিজাবের পক্ষে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছেন। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা গেলে কংগ্রেসের বর্তমান অবস্থানটি বিপরীত।
বোম্বে প্রেসিডেন্সি ইয়ুথ কনফারেন্সে ১৯২৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ভাষণে নেহেরু বলেছিলেন, ‘ধর্মের নামে নারীদের এখনো অবরুদ্ধ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় আগের যুগের সেই ‘‘বর্বর’’ পর্দা প্রথায় রাখা হয়েছে। হতাশাগ্রস্ত বা অবদমিত শ্রেণিগুলো বিশ্বের কাছে চিৎকার বলে ধর্মকে কতটা কুখ্যাতভাবে শোষণ করা হয়েছে তাদের দমাতে এবং সামনের দিকে অগ্রসর হতে।’
১৯৩১ সালের ৭ জানুয়ারি কন্যা ইন্দিরাকে পণ্ডিত নেহেরু এক চিঠিতে বলেছিলেন, ‘ভারতের নারীদের দেখ, কত গর্বের সঙ্গে তারা সংগ্রামে সবার থেকে এগিয়ে আছে। ভদ্র, তবুও সাহসী এবং অদম্য। দেখ, কীভাবে তারা অন্যদের গতি এনে দেয়। যে পর্দা আমাদের সাহসী এবং সুন্দরী নারীদের লুকিয়ে রাখত এবং দেশের জন্য অভিশাপ ছিল, এখন তা কোথায়? জাদুঘরের তাকে এটি জায়গা নিতে দ্রুত পেছনে পড়ে যাচ্ছে না? যেখানে আমরা অতীত যুগের ধ্বংসাবশেষ রাখি ?’
‘একটি আত্মজীবনী’তে নেহেরু উল্লেখ করেছেন, ‘মুসলিম নারীরা শাড়ি পরেছে এবং পর্দা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে।’
ইতোমধ্যে, দেশের কিছু জায়গায় “পেহেলে হিজাব, ফির কিতাব” চিৎকার করে পোস্টার দেখা গেছে। তবে তরুণদের মূল্যায়ন করতে হবে যে “পছন্দের স্বাধীনতার” নামে অস্পষ্টতাবাদী রাজনীতিকে আরও এগিয়ে নেওয়া উচিত কিনা। একই সময়ে, ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদেরও নিশ্চিত করতে হবে যে সংগঠন এবং মতাদর্শগুলো জাতি ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল, তারা মূলধারায় না আসে; যেমনটি রাজস্থানে দেখা গিয়েছিল।
ভারত যখন তার সম্ভাবনা উপলব্ধি করার জন্য কাজ করছে তখন সম্মিলিত সংকল্প এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ আমাদের যৌথ ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করে। অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েরা, হিন্দু-মুসলিম, সোনালি ভবিষ্যৎ রচনার জন্য হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে। তাই অদূরদর্শী রাজনীতির মাধ্যমে, অথবা মেকি তথ্য উপস্থানকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
শ্রেণিকক্ষে হোক বা গ্রামাঞ্চলে, আমাদের সম্মিলিত শক্তিই সেই শক্তিকে পরাজিত করবে যারা ভারতকে অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। সূত্র : বিজনেস ওয়ার্ল্ড