শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

না.গঞ্জে ঘাতক স্বামীর লোমহর্ষক জবানবন্দি : হত্যার পর স্ত্রীর লাশ টুকরা করে ফ্রিজে রেখেছিল

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১২৩ বার

প্রথমে দেহ থেকে মাথাটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ টুকরা টুকরা করে তা ঢুকিয়ে রাখা হয় ফ্রিজে। সুযোগ মতো একটি একটি টুকরা ফ্রিজ থেকে বের করে ফেলা দেয়া হয় পাশের পুকুরে। তানজিনা আক্তার (২৮) নামের এক তরুণীকে নির্মমভাবে হত্যা করেন স্বামী রাসেল। হত্যার পর পালিয়ে থাকার জন্য রাসেল বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে ২৫টি মোবাইল এবং ১৫টি সিম ব্যবহার করে এবং তার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে ধরা পড়তে হয়।

ঘটনার ১০ মাস পর তানিজনা হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ শাখা। একইসাথে বৃহস্পতিবার পুকুরের পানি সেচে একের পর এক উদ্ধার করা হয় তানজিনার টুকরা টুকরা করা দেহের হাড়গুলো। এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয় তানজিনার ঘাতক স্বামী রাসেলকে। তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উদ্ধার করা হয় তানজিনার দেহের টুকরা অংশগুলো।

রাসেলের মুখে তার স্ত্রী হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা শুনে পিবিআইর কর্মকর্তারাও হতভম্ব । গা শিহরে উঠার মতো বর্ণনা শুনে অনেকে স্তম্বিত হয়ে পড়ে। নারায়ণগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো: নুর মহসীনের আদালতে বৃহস্পতিবার স্বাকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ঘাতক রাসেল।

তানজিনা (২৮) রংপুর জেলার আ. জলিলের মেয়ে। রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার এনায়েতপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে রাসেল মিয়ার সাথে তানজিনার বিয়ে হয়েছিল। তারা স্বামী-স্ত্রী ফতুল্লার মাসদাইর বাড়ৈভোগ এলাকার সিরাজ খানের বাসায় ভাড়া থাকতেন। সেখানে পরকীয়ার জের ধরে পারিবারিক কলহে ঝগড়া করে রাসেল তার স্ত্রী তানজিনাকে গলা কেটে হত্যা করেন।

জানা যায়, ২০২১ সালে ৫ এপ্রিল ওই ডোবা থেকে তানজিনার দেহবিহীন মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ মামলা করে। এ মামলা পিবিআই তদন্ত পেয়ে রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত শুরু করে। তখনো তানজিনার পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জ পিবি আই উপপরিদর্শক (এসআই) শাকিল হোসেন বলেন, রাসেল তার স্ত্রীর দেহ কয়েক টুকরো করে বাড়ির পাশের ওই ডোবায় ফেলে দেয়। তখন রাসেল তার বাড়িওয়ালা সিরাজ খানকে জানান, তার স্ত্রী তানজিনা করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন। এর পর তিনি বাসা ছেড়ে চলে যান।

তিনি আরো জানান, গত ২২ ফেব্রুয়ারি রংপুর থেকে রাসেলকে গ্রেফতারের পর জানা যায় মাথাটি যে ডোবায় পাওয়া গেছে, সেখানেই দেহ কয়েক টুকরা করে ফেলে দেয়া হয়েছে। এতে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ডোবায় সেচ মেশিন দিয়ে পানি সরানোর পর একের পর এক উদ্ধার করা লাশের টুকরা টুকরা হাড়গুলো।

পিবিআই-এর নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, রাসেলের সাথে তানজিনার প্রেম ছিল। পরে তারা স্বামী পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু পরকীয়ার কারণে তাদের সংসারে কলহ দেখা দেয়। ২০২১ সালের ২৯ মার্চ তানজিনাকে ঘরে থাকা বটি দিয়ে গলা কেটে ও শরীরের অংশগুলো টুকরো করে ফ্রিজে রেখে দেন রাসেল। ৪ এপ্রিল বস্তাবন্দি করে সেগুলোও পাশের ডোবায় ফেলে দেন। ঘটনার পর হত্যায় ব্যবহৃত বটি ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে ওই বাড়ি থেকে চলে যান রাসেল।

পিবিআই জানায়, ফতুল্লা থানাধীন বাড়ৈভোগ বটতলা ডোবার মধ্যে গত বছর ৫ এপ্রিল অজ্ঞাত মহিলার (২৮) খণ্ডিত মাথা পাওয়া যায়। পরে থানা পুলিশ অজ্ঞাত মহিলার গলা কাটা মাথা উদ্ধার করে বিধি মোতাবেক সুরতহালের পর ময়নাতদন্ত করেন।

ফতুল্লা থানা পুলিশ মামলা দায়ের করে। মামলা নং- ১৯। পরে মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেয়ায় হয় । প্রথম তদন্ত কর্মকর্তার বদলির কারণে পরে পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) সাইফুল আলম মামলাটি তদন্ত শুরু করেন।

তদন্তকালে তিনি তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার এনায়েতপুর হতে মোঃ রাসেলকে (২৯) গ্রেফতার করে পিবিআই, নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে হাজির হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামি স্বীকার করে যে গলাকাটা মাথাটি তার স্ত্রী তানজিনার (২৮)।

রাসেল পুলিশকে জানান, ২০১৯ সালে ভিকটিম তানজিনা এবং আসামি রাসেল স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ফতুল্লা থানাধীন পশ্চিম দেওভোগ আদর্শ নগর রঙ্গিলা রোডস্থ মোঃ নোয়াবের বাড়ির ৩য় তলায় বাসায় বসবাস শুরু করেন। কিন্তু বিবাহের পর থেকেই ভিকটিম তানজিনা আসামি রাসেলের মৃত বোনের স্বামী মোস্তফাসহ বিভিন্ন পরপুরুষের সাথে গোপনে কথা বলা শুরু করেন। এর সূত্র ধরে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। গত বছর ২৯ মার্চ রাত অনুমান ০৩:০০ ঘটিকায় রাসেল শবে বরাতের নামাজ শেষে বাড়ী ফিরে ভিকটিম তানজিনাকে অন্যত্র মোবাইলে কথা বলতে দেখে রাগান্বিত হয়ে ভিকটিমকে মারপিট শুরু করে। একপর্যায়ে আসামি রাসেল ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ঘরে থাকা রান্নার কাজে ব্যবহার করা বটি দিয়ে তানজিনার গলায় আঘাত করেন। এতে তার গলা কেটে রক্ত বের হয়, জ্ঞান হারিয়ে ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। পরে আসামি বটি দিয়ে ভিকটিমের ধর থেকে মাথা কেটে আলাদা করে ফেলেন। এবং হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ টুকরা টুকরা করে ফ্রিজে রেখে দেন।

পরে বিভিন্ন সময়ে খণ্ডিত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ তার বাসার ছাদ থেকে পাশের ময়লার স্তুপের মধ্যে ফেলে দেন। সর্বশেষ গত বছর ৪ এপ্রিল গভীর রাতে ভিকটিমের খণ্ডিত মাথা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভর্তি করে দেওভোগ বাড়ির পিছনে ডোবার মধ্যে ফেলে দেন। এই ঘটনার পরে আসামি তার ভাড়া বাসা ছেড়ে হাড়িপাতিল ও হত্যার কাজে ব্যবহৃত বটি নিয়ে গোপনে পালিয়ে যান। এরপর তিনি সোনারগাঁ থানাধীন ছোট সাদিপুর এলাকায় জনৈক ফিরোজ হোসেনের একটি টিন শেড ঘর ভাড়া নেয়। পরে ভিকটিমের স্বজনরা তার খোঁজখবর না পেয়ে ভিকটিম তানজিনার ভাগিনা পলাশ ফতুল্লা থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করে।

ওই জিডির সূত্র ধরে থানা থেকে আসামিকে ফোন দিলে তিনি সোনারগাঁ থেকে পালিয়ে যান, তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ করে দেন। পরে রাসেল বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে ২৫টি মোবাইল এবং ১৫টি সিম ব্যবহার করে এবং তার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন।

আসামির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার ভাড়া বাসা থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত বটি ও লাশ সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত ফ্রিজ উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। ভিকটিম তানজিনার ব্যবহৃত মোবাইলটি ধৃত আসামি রাসেলের বোন আশার হেফাজত থেকে জব্দ করা হয়। আসামির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমের দেহের অন্যান্য খণ্ডিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং তার অংশ বিশেষ উদ্ধার করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com