ফের কৃষক আত্মহত্যার খবর এলো ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে৷ কিন্তু কারো কোনো হেলদোল নেই৷ দিনের পর দিন ধরে এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ রাজনীতিও ধরে নিয়েছে, এটাই স্বাভাবিক৷
সরকার আসে, সরকার যায়, দিন বদলায় না৷ বদলায় না সাধারণ মানুষের যন্ত্রণার কাহিনী৷ আরো একবার সেই রূঢ় বাস্তবের সামনে দাঁড়াল ভারত৷ তথ্য বলছে, গত এক মাসে মহারাষ্ট্রে আত্মহত্যা করেছেন ৩০০ জনেরও বেশি কৃষক৷
ভারতে কৃষক আত্মহত্যা নতুন কিছু নয়৷ ঋণের জালে জর্জরিত কৃষক আত্মহত্যা করছেন অনেক দিন ধরেই৷ যা নিয়ে ছবি হয়েছে, গল্প লেখা হয়েছে, রাজনীতিতে উত্থালপাথাল হয়েছে৷ লং মার্চ করেছেন কৃষকেরা৷ দিল্লিতে এসে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার জন্য ধর্না দিয়েছেন৷ কিন্তু বাস্তব বদলায়নি৷ কৃষকের সমস্যার যে কোনো সুরাহা হয়নি, আরো একবার তা প্রমাণ হয়ে গেল।
মহারাষ্ট্র বরাবরই কৃষক আত্মহত্যাপ্রবণ জায়গা৷ গত কয়েক বছরে রাজ্যে খরা হয়েছে ভয়ঙ্কর৷ হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে৷ অথচ ফসল ফলানোর জন্য কৃষকেরা যে ঋণ নিয়েছিলেন, সব সময় তা মাফ হয়নি৷ ফলে দেনায় বিধ্বস্ত কৃষক আত্মহত্যা করেছেন৷ এ বছরের বিষয়টি ঠিক উল্টা৷ পূজার পর ফসল ঘরে তোলার কিছুদিন আগে অকাল বর্ষণ হয় মহারাষ্ট্রে৷ আর তাতেই ফের নষ্ট হয় ফসল৷ মাথায় হাত পড়ে কৃষকদের৷
সময়টা ছিল নির্বাচনের৷ ফলে বিধ্বস্ত কৃষকদের বহু আশ্বাস দিয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতারা৷ ক্ষতিপূরণও দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু সামান্য ক্ষতিপূরণই যে যথেষ্ট নয়, রাজনীতিকরা তা আগেও কোনো দিন বোঝেননি, এখনো বোঝেন না৷ খানিক ক্ষতিপূরণ, সামান্য ঋণ মওকুফ যে সমস্যার সমাধান নয়, ৩০০ কৃষকের আত্মহত্যা তা আরো একবার প্রমাণ করে দিল৷
কৃষক আত্মহত্যার বিরুদ্ধে বহু দিন ধরে লড়াই করছেন বিদর্ভের বিজয় জওয়ানদ্ধিয়া৷ এই ঘটনার পরে ফের সোচ্চার হয়েছেন তিনি৷ তার বক্তব্য, ”সরকার যদি সত্যিই কৃষকের আত্মহত্যা বন্ধ করতে চায়, তা হলে চাষের পুরো প্রক্রিয়াতেই বদল আনতে হবে৷ চাষিদের সঙ্গে বাজারের সরাসরি সংযোগ তৈরি করতে হবে৷ কারণ, বাজারে খাদ্য দ্রব্য চড়া দামে বিক্রি হলেও চাষিরা তার সুবিধা পান না৷ সমস্ত মুনাফাই চলে যায় মহাজনের ঘরে৷ যে দামে এখন চাষিকে ফসল বিক্রি করতে হয়, তাতে এক বছর চাষের ক্ষতি হলেই তারা বিপুল ক্ষতির শিকার হন৷ ফলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন৷ সরকার যদি সরাসরি এই বেচাকেনার জায়গায় ঢুকতে পারে এবং চাষিদের মুনাফা বাড়াতে পারে, তাহলেই একমাত্র এই মর্মান্তিক বাস্তব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে৷”
বিজয়ের কথা নতুন নয়৷ বহু দিন ধরে বহু ব্যক্তি এ কথা বলে চলেছেন৷ ভোটের সময় রাজনৈতিক দলগুলোও এ সব কথাই বলে৷ কিন্তু ভোট হয়ে গেলে, পরিস্থিতি ফিরে যায় সেই তিমিরেই৷ সাধারণ মানুষের কথা ভাববেন, এত সময় সম্ভবত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নেই৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে