বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ পূর্বাহ্ন

শেষ দেখতে চায় সন্দিহান বিএনপি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২০
  • ২৬৬ বার

আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে বিএনপি সন্দিহান। দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো কিছুর কাছে নতিস্বীকার করবে না তারা।

যত বাধা বা চাপ সৃষ্টি করা হোক না কেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাঠে থাকতে বদ্ধপরিকর। যত আতঙ্ক ছড়ানো হোক ভোটের মাঠ ফাঁকা ছেড়ে দেবে না। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দলটি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়বে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ক্ষমতাসীনরা নানা অপকৌশল প্রয়োগ করছে। ভোটার ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বড় ভয় ইভিএম। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যেখানে কারচুপির কারণে ইভিএম থেকে সরে আসছে, সেখানে আমাদের নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহারে বাধ্য করছে। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার বিএনপি সমর্থিত দক্ষিণের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাজউদ্দিন আহমেদ তাজকে গ্রেপ্তার করায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বিএনপিতে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কার্যত বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়াতেই তাজউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যেই বোঝা যাচ্ছে সরকার কী ধরনের নির্বাচন করতে চায়। সরকার চায় আমরা ভোট ছেড়ে চলে যাই। তবে গ্রেপ্তার-হুমকি যা-ই আসুক, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবে।’

দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবা একাত্তর সালে জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিলেন। আমিও সেই আদর্শে বিশ্বাসী। আমিও জনগণের অধিকার আদায়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ব এবং মাঠে থাকব।’ উত্তরের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালও স্পষ্ট করে বলেছেন, এবার আর মাঠ ছাড়বেন না।

বিএনপি কাউন্সিলর প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি মিডিয়া মাসুদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, যারা ফৌজদারি অপরাধের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ অবস্থায় আজ শনিবার বিকাল ৪টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। জানা গেছে, এই বৈঠকে দলীয় মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনসহ সার্বিক প্রস্তুতি এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনাসহ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সূত্রে জানা যায়, দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, গ্রেপ্তার করে যতই আতঙ্ক সৃষ্টি করুক বিএনপি এ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবে। নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গিয়ে তারা দুটি বিষয়কে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন, এক. আওয়ামী লীগের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে।

দ্বিতীয়. আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অথবা কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না তা জনগণের কাছে প্রমাণিত। এবার দলটি প্রমাণ করতে চাইছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অথবা ইভিএমের মাধ্যমে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। যদিও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে কার্যকর কোনো আন্দোলন থেকে বিরত থেকে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে সহজভাবে নেননি নেতাকর্মীরা।

নানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, একদিকে নীতিনির্ধারকরা বলছেন আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। পরক্ষণে তারাই আবার নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। নেতাকর্মী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির এমন সিদ্ধান্ত নিয়েই তৃণমূল পর্যায়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গতকাল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ঢাকা সিটি নির্বাচন কেমন হতে পারে তার শঙ্কা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ঢাকা সিটি নির্বাচন, আমি বলব, এটা একটি লোকদেখানো। হইচই হবে, মিছিল হবে, টেলিভিশনে মিছিলও দেখবেন, সবাই সেøাগান দেবেন। নির্বাচনের দুই-একদিন আগে দেখবেন সব ঠাণ্ডা। একদিকে গ্রেপ্তার, ভয়-ভীতি-আতঙ্ক; অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচার। এ ধরনের নির্বাচনকে আমি বলব, গণতন্ত্রের প্রহসন ছাড়া অন্য কিছুই নয়।

বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, সিটি নির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন। গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, সরকার সিটি নির্বাচনে ঝামেলা করছে। আমাদের জনপ্রিয় প্রার্থীরা যেন ভোট না করতে পারেন সে জন্য গ্রেপ্তার শুরু করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীকে বলেছে, প্রার্থী হলে অসুবিধা হবে, গ্রেপ্তার করা হবে। এভাবে পুলিশ ভয় দেখাচ্ছে।

ঢাকা উত্তরের বিএনপি সমর্থিত ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ফেরদৌসী আহম্মেদ মিষ্টি আমাদের সময়কে বলেন, কেবল নির্বাচন কমিশন আমাদের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছে। এখনো প্রতীক বরাদ্দ দেয়নি এবং প্রচার-প্রচারণাও শুরুই হয়নি। সেখানে প্রার্থীদেরই গ্রেপ্তার শুরু হয়েছে। তাদের শঙ্কা, সামনে নেতাকর্মীদেরও গ্রেপ্তার শুরু হবে। ফলে কোনো প্রার্থী গ্রেপ্তার না হলে তার কোনো কর্মী বাইরে থাকবে না বলে মনে হচ্ছে।

একই শঙ্কা প্রকাশ করে ঢাকা উত্তরের বিএনপি সমর্থিত ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আতাউর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, সরকারের যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয় তা হলে তারা নিজেদের স্বার্থেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। সে ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার, হামলা-মামলা, ভোট কারচুপি সব কিছু থেকে বিরত থাকবে। যদি জনগণ ভোট দিতে পারে তা হলে ধানের শীষের মেয়রপ্রার্থী ও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলররাই শতভাগ জয়লাভ করবেন।

বিএনপি নেতারা বলেন, গ্রেপ্তারের পরও পালিয়ে হোক আর কৌশলে হোক কিছু নেতাকর্মী ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে থাকবেন। সুযোগ পেলে জনগণও ভোট দিতে যাবে। কিন্তু ফল পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েও বিএনপিতে শঙ্কা। তাদের ভাষ্য, ইভিএম এমনভাবে প্রস্তুত করা যেতে পারে, যাতে ভোটার যে কোনো প্রার্থীকে ভোট দিলেই তা কোনো পূর্বনির্ধারিত প্রার্থীর পক্ষে রেকর্ড হয়ে যাবে। আবার ইভিএমের ভোট কাগজে রেকর্ড হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। এটা নিরপেক্ষ ভোট হওয়ার কোনো নমুনা হতে পারে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের ইভিএমের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জেদ করেছেন জনগণকে ইভিএম গেলাবেন। জনগণের বাইরে যখন নির্বাচন কমিশন কোনো কিছু জেদ করে চাপিয়ে দেয় তখন বুঝতে হবে এই ইভিএমেরে পেছনে অনেক রহস্য আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com