প্রাক-ইসলামী যুগে আরবদের বেশির ভাগ নাগরিকই গোত্রীয় আইন ও রীতিনীতি ছাড়া অন্য কিছু মেনে চলতে অভ্যস্ত ছিল না। তাদের প্রিয় বস্তু ছিল তিনটি—মদ, নারী ও যুদ্ধ। গোত্রে গোত্রে, পরিবারে পরিবারে একবার যুদ্ধ বেধে গেলে কয়েক পুরুষ পর্যন্ত চলত। বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য অনেক সময় রক্তের স্রোত প্রবাহে আনন্দ লাভ করত। যেহেতু যুদ্ধে অর্জিত সম্পদ তাদের অন্যতম উপজীবিকা, তাই শিশুকাল থেকেই তাদের অশ্ব পরিচালনা, শত্রুদের আক্রমণ এবং দ্রুতবেগে পলায়ন—এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হতো। এ ছাড়া তীর-ধনুক, তরবারি ও বর্শা চালনায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
প্রাচীন আরবে সামরিক কৌশল সম্পর্কে দুটি পদ্ধতির কথা জানা যায়।
প্রথম পদ্ধতি : এ পদ্ধতি আল-কার ওয়া আল-ফার, যথাক্রমে আক্রমণ ও পলায়ন কৌশল হিসেবে অভিহিত। আধুনিক সামরিক পরিভাষায় যাকে গেরিলা যুদ্ধ বলা হয়। কোনো কোনো সময় নিয়মিত যুদ্ধের সম্মুখীন হলে সাধারণত তারা রসদপত্রের বাহন কিংবা ক্ষুদ্র অংশের ওপর রাত্রিকালে আক্রমণ করত। এতে উদ্দেশ্যও সফল হতো এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কম হতো। আরবের লোকরা শুধু দেশের ভেতরই এ পদ্ধতিতে যুদ্ধ করত না, আরব সীমান্তবর্তী সিরিয়া, মিসর ইত্যাদি অঞ্চলেও একই পদ্ধতিতে আক্রমণ পরিচালনা করে ধন-সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে আসত।
দ্বিতীয় পদ্ধতি : যুদ্ধের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিটি বড় ও দীর্ঘস্থায়ী। সেনাবাহিনীকে পাঁচ ভাগ করা হতো। তা হলো, আল-কালব (কেন্দ্র), আল-মাইমানা (দক্ষিণ বাহু), আল-মাইসারা (বাম বাহু), আল মুকাদ্দিমা (অগ্রভাগ) ও আল-সিকা (পশ্চাদরক্ষী)। এ পদ্ধতিটিকে খামিস (পাঁচ) হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আরবদের যুদ্ধপ্রীতি
যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকা দিনগুলোকে ‘আইয়াম আল-আরব’ (আরবের যুগ) বলা হতো। (History of Arabs, P. 87-89; সিরাতে মুস্তফা, পৃষ্ঠা ৫৬; সিরাতুন্নবী : ৪/২৬৮)
তাগলিক গোত্র ও বকর গোত্রের দাহিস নামে এক ঘোড়া যুবিয়ান গোত্রের আল-গাব্বা নামক এক উটের মধ্যে প্রতিযোগিতায় যুবিয়ানদের অনিয়মের আশ্রয়কে কেন্দ্র করে কয়েক দশক ধরে এ যুদ্ধ চলতে থাকে। বিখ্যাত মুয়াল্লাকা কবি আনতারা বিন শাদদাদ আল-আবশির হস্তক্ষেপের ফলে এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। (সিরাতে মুস্তফা, পৃষ্ঠা ৫৭ ও ৫৮; কিতাব আল আগানি : ৪/১৪০-১৫২; History of Arabs, P. 82.)
কুরাইশ ও হাওয়জিন গোত্রের মধ্যে এক যুদ্ধ পাঁচ বছর স্থায়ী ছিল। যুদ্ধটি হারাম মাসে শুরু হয়েছিল বলে একে ফুজ্জার (গর্হিত) যুদ্ধ নামে অভিহিত করা হয়। আর একটি যুদ্ধ হয়েছিল মদিনার আউস এবং খাজরাজ গোত্রের মধ্যে। মহানবী (সা.)-এর মদিনা সনদের ফলে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে।