মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪১ অপরাহ্ন

৪০০ মানুষ আশ্রয় নেওয়া স্কুল গুঁড়িয়ে দিল রাশিয়া

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২
  • ১২২ বার

ইউক্রেনের মারিওপোল শহরের একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরীর ওই স্কুলে ৪০০ সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। শনিবারের হামলায় স্কুলটি গুঁডিয়ে যায়। গতকাল রবিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

টেলিগ্রামে দেওয়া হালনাগাদ তথ্যে মারিওপোল শহর কাউন্সিল জানায়, শহরের একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। ৪০০ সাধারণ মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কর্মকর্তারা বলছেন, রুশ সেনাদের হামলায় স্কুল ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন ধ্বংসস্ত‚পের নিচে আটকা পড়েছেন। রাশিয়ার জোরদার হামলার মুখে নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা স্কুলটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

অবশ্য হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি। এ ছাড়া মারিওপোলের সঙ্গে যোগাযোগ এখন খুবই কঠিন হওয়ায় স্কুলে রাশিয়ার হামলার দাবিটি বিবিসি তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

পৃথক এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর তীব্র এ হামলা ও পাল্টা হামলার মধ্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিওপোলের রাস্তায় লড়াই চলছে। এই পরিস্থিতিতে মারিওপোল শহরের রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মরদেহ। এ ছাড়া বহু বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আগুনে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মারিওপোল শহরের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। প্রায় তিন লাখ বেসামরিক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে শহর থেকে বের হতে পারেননি। অল্প কিছু বেসামরিক নাগরিক যারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন, তারা মারিওপোলের ভয়ানক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে জানিয়েছেন, খাবার সরবরাহ ফুরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শহরে বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

ইউক্রেনীয় আইনপ্রণেতা ইয়ারোস্তাভ ঝেলজনিয়াকের বোনও কয়েক দিন আগে মারিওপোল শহর থেকে পালিয়ে যান। ঝেলজনিয়াক বিবিসিকে বলেন, রুশ আক্রমণ শুরুর দুই সপ্তাহ পর তাদের কোনো খাবার ছিল না। এ ছাড়া দোকানও বন্ধ ছিল। আর তাই সে (ঝেলজনিয়াকের বোন) জানিয়েছিল, চুরির মাধ্যমে কিছু খাবার জোগাড় করা বা না খেয়ে মারা যাওয়া- এ দুটির মধ্যে একটিকে আমাদের বেছে নিতে হতো। তিনি আরও বলেন, মানুষ সব সময় ভয়ে থাকে যে কোনো বোমা, কোনো অস্ত্র বা কোনো বিস্ফোরণ তাদের হত্যা করবে। শহরের রাস্তায় রাস্তায় অনেক লাশ পড়ে আছে, অনেক বাড়িঘরে আগুন লেগেছে, অনেক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি ভেতরে আশ্রিত মানুষসহ অনেক বোমা শেল্টার বা আশ্রয়কেন্দ্রও ধ্বংস হয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দার মারিওপোল শহর দখল করা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এ শহর আজভ সাগরে ইউক্রেনের কৌশলগত বন্দর এবং ডনবাস অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর কাছেই অবস্থিত।

এদিকে ইউক্রেনে ফের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করেছে রাশিয়া। দেশটির দক্ষিণের মাইকোলাইভ অঞ্চলে সাঁজোয়া যানে জ্বালানি সরবরাহ করা হয় এমন একটি ডিপো লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। হামলায় ওই ডিপো ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে উত্তর ইউক্রেনের ওভরুচ শহরের একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর ১০০ জনেরও বেশি সদস্য এবং অনেক বিদেশি ভাড়াটে সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। সমুদ্র থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ওই হামলা চালানো হয়।

এর আগে শনিবার ইউক্রেনে প্রথমবারের মতো নতুন কিনজাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানোর দাবি জানায় রাশিয়া। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে রোমানিয়া সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে ভ‚গর্ভস্থ একটি অস্ত্রাগার ধ্বংস করতে ওই ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার করা হয় বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

 

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কী?

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বিভিন্ন সময় হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রে তার দেশের বিনিয়োগের কথা তুলে ধরেছেন, যা শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে।

পরিসংখ্যানও বেশ চমকপ্রদ। রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মতে, কিনঝাল ২ হাজার কিলোমিটার (১ হাজার ২৪০ মাইল) দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ঘণ্টায় এ ক্ষেপণাস্ত্রের ছোটার গতি ৬ হাজার কিলোমিটার। তবে এই ক্ষেপণাস্ত্র কী রাশিয়ার অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র বা কামানের গোলার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক, যা ব্যাপক মৃত্যু এবং ধ্বংসের কারণ হতে পারে?

কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের পারমাণবিক নীতি বিশেষজ্ঞ জেমস অ্যাক্টন বলছেন, আমি এ ক্ষেপণাস্ত্রকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছি না। আমি জানি না হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়া কতটা সুবিধা পাচ্ছে।’

গত বছরের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন গর্ব করে বলেছিলেন, ‘রাশিয়া হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই অস্ত্র ট্র্যাক করা কঠিন। কারণ এটি মাঝপথেই দিক পরিবর্তন করতে পারে।’

রাশিয়া শনিবার রোমানিয়ার সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউক্রেনের ডেলিয়াটিন গ্রামের ভূগর্ভস্থ একটি অস্ত্রাগারে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর একটি ভিডিও টুইট করেছে।

জুরিখের সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের ডমিনিকা কুনারতোভা বলেছেন, ‘এটি এক ধরনের প্রদর্শনীর লক্ষণ। এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হলেও এটিকে আমাদের ‘বিচ্ছিন্ন মুহূর্ত’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। কারণ রাশিয়ার কাছে এই ক্ষেপণাস্ত্র খুব বেশি নেই।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com