শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫০ অপরাহ্ন

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২
  • ১৪৬ বার

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ এপ্রিল থেকে চার দফায় এই পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও পরীক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে সেই তারিখ পিছিয়ে গেছে। পরে অবশ্য পরিবর্তিত সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল ৮ এপ্রিল। কিন্তু আগামী ৮ এপ্রিল থেকেও এই পরীক্ষা শুরু করা যাবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। যদিও সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে এত বড় একটি পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পরীক্ষার কেন্দ্র কোথায় হবে তা নির্ধারণ নিয়ে এখন আবার নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। অবশ্য শুরু থেকেই অনৈতিক সুযোগসন্ধানী একটি চক্র পরীক্ষার প্রক্রিয়াগত নানা ত্রুটি ও সুযোগের ব্যবহার করতে চাইলেও এখন তারা পুনরায় মাঠে নেমে কেন্দ্র নির্ধারণের সঙ্কট তৈরি করে সরকারকেই বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে।

প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ও কেন্দ্র ঢাকার পরিবের্তে জেলা পর্যায়ে নেয়া যায় কি না এবং পরীক্ষার তারিখও নতুন করে নির্ধারণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আমিনুল ইসলাম খান সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।

এ দিকে গতকাল রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে আগামী ১ এপ্রিল থেকে নিয়োগ পরীক্ষা শুরু কথা থাকলেও সেই তারিখ পিছিয়ে সম্ভাব্য তারিখ ৮ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন ৮ এপ্রিল থেকেও এই পরীক্ষা শুরুর সম্ভাবনাও ক্ষীণ। কেননা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, এবারের প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র হবে ঢাকায় এবং একাধিক দিনে (চার ধাপে) এই পরীক্ষা নেয়া হবে। প্রশ্নের সেটও হবে কয়েকটি। পরীক্ষার খাতা বা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবে যথারীতি বুয়েট। পরীক্ষার্থীদের সিট প্ল্যানও করা হবে অটোমেটিক পদ্ধতিতে। কিন্তু ইতোমধ্যে একটি অসাধুচক্র পরীক্ষার কেন্দ্র ঢাকা থেকে সরিয়ে জেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে, পরীক্ষার কেন্দ্র ঢাকার বাইরে নিয়ে গিয়ে জেলা পর্যায়ে করা হলে এতে অনিয়ম আর স্থানীয়দের ক্ষমতার অপব্যবহারেরও যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। আর এতে যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। অন্যায় আর অবৈধ সুযোগের কাছে যোগ্য ও অধিকতর মেধাবী প্রার্থীরা পিছিয়ে পড়বে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গতকাল রোববার বিকেল ৩টা থেকে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী ৬১টি জেলার সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসারদের সমন্বয়ে অনলাইনে (জুমে) একটি জরুরি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে মূলত পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। জুম মিটিংয়ে অংশ নিয়ে অধিকাংশ জেলা শিক্ষা অফিসারদের মতামতই ছিল অধিক প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে হলে পরীক্ষার কেন্দ্র অবশ্যই ঢাকাকেন্দ্রিক করতে হবে। জেলা পর্যায়ে পরীক্ষার কেন্দ্র করা হলে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেয়া সম্ভব হবে না।

গতকালের জুম মিটিংয়ে অংশ নিয়ে সভা শেষ করে একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, এবারের পরীক্ষাটি সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান করা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এভাবে কয়েক দফায় তারিখ পেছানো হলে এবং কেন্দ্রও যদি ঢাকা থেকে সরিয়ে এখন জেলা পর্যায়ে নেয়া হয় তাহলে পরীক্ষা শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলেও অনেকের মধ্যেই পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এ ছাড়া পরীক্ষার কেন্দ্র জেলা পর্যায়ে করা হলে ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলেও পরীক্ষাটি শতভাগ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ করা সম্ভব হবে না। আমাদের মতামত হচ্ছে পরীক্ষাটি যেহেতু একটি বড় চ্যালেঞ্জ তাই ঢাকাকেন্দ্রিক পরীক্ষা হলে এখানে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাপও থাকবে না একই সাথে প্রশাসনিকভাবেও পরীক্ষাটি সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

অন্য একটি সূত্র জানায়, এবারের নিয়োগ পরীক্ষা ঢাকায় নেয়ার ঘোষণায় ইতোমধ্যে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের জনপ্রধিনিধিরা। তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের দুর্ভোগ ও ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়েই মূলত পরীক্ষার কেন্দ্র জেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এমনকি দলীয়ভাবে তারা বিষয়টি সুরাহা করতে অর্থাৎ পরীক্ষার কেন্দ্র জেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে নানাভাবে সরকার ও দলীয় উপর মহলেও চাপ প্রয়োগ করছেন।

প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের এই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সরকারকে সম্ভব সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়েছেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, যেহেতু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য এই নিয়োগটি একটি বড় ধরনের আয়োজন তাই সরকারের জন্যও এই নিয়োগ পরীক্ষাটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জেলা পর্যায়ে না হয়ে এই পরীক্ষা যদি ঢাকায় নেয়া হয় তাহলে নিঃসন্দেহে পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠার সুযোগ কম থাকবে। আর যেহেতু ইতোমধ্যে ঘোষণা হয়েই গেছে যে এই পরীক্ষা ঢাকায় নেয়া হবে এবং পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে কাজেই তারিখ ও ভেনু নিয়ে এখন কোনোমতেই বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা ঠিক হবে না। অন্যথায় পরীক্ষার নেয়ার আগেই এর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

অন্য দিকে অভিযোগ রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ভেনু ইতোমধ্যে ঢাকায় হবে এমন ঘোষণা দেয়ার পরেও একটি অসাধু চক্র সুকৌশলে একটি জেলায় কয়েকজনকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মানববন্ধন করিয়েছে। তাদের দাবি পরীক্ষার কেন্দ্র জেলা পর্যায়ে করতে হবে। যদিও সব জেলার প্রার্থীরাই চাইছেন যে, পরীক্ষার কেন্দ্র ঢাকায় করা হোক। কাজেই এক বা দুটি জেলার সাজানো মানববন্ধন দেখে সরকারের উচিত হবে না পরীক্ষার কেন্দ্র ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়া।
এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তাকে খুদে বার্তা প্রেরণ করা হলেও তিনি তারও কোনো উত্তর দেননি।

উল্লেখ্য, প্রাথমিকে এত বড় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ আগে কখনোই হয়নি। এবার প্রথমে ৩২ হাজার ৫৭৭ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও করোনার কারণে নিয়োগ পরীক্ষা যথাসময়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে আরো বেশ কিছু পদও শূন্য হয়েছে। ফলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আগের এবং বর্তমানের শূন্যপদের বিপরীতে মোট ৪৫ হাজার শিক্ষকই এই পরীক্ষা মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com