‘রমজান মাস, যাতে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, যা বিশ্বমানবের জন্য হেদায়াত, সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী।’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৮৫)
পবিত্র ও আকাক্সিক্ষত মাহে রমজানের আর বেশি দেরি নেই। আসুন আমরা রমজানের জন্য নিজেদেরকে তৈরি করি।
রমজান উপলক্ষে আমরা ঘরের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে ফেলি। যেমন, ১. কাপড়চোপড় ধোয়া, ঘর পরিষ্কার করা, বাসাবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা। ২. আমাদের মহিলাদের এক নম্বর কাজ হচ্ছে ঈদের পিঠা বানানো। পিঠা বানাতে গিয়ে আমরা রমজানে অনেক বেশি ঝামেলা করে ফেলি। ৩. আদা রসুন জিরা গরমমসলা ব্লেন্ডার করা। ৪. যারা সেলাই মেশিনে নিজের বাড়ির কাজ করেন তারা আগে আগে করে ফেলি।
রোজা রেখে কাজগুলো হাতে নিলে ইবাদতে বিঘœ ঘটে। হাতের কাজ শেষ না করে অনেকে জোহরের নামাজ পড়তে চায় না ময়লা কাপড়-চোপড় নিয়ে তখন নামাজ কাজা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পরিপূর্ণ মানসিক প্রশান্তিসহকারে রমজানের রোজা রাখার জন্য এখন থেকেই নিজেকে তৈরি করি। যে কাজগুলো করে রাখা সম্ভব তা অবশ্যই করে ফেলি। সাংসারিক কাজের অস্থিরতা থেকে মুক্ত থাকার জন্য এখনই নিয়ত করি।
আমরা নিজেরা রোজা রাখব ছোটদেরকে রোজা রাখার জন্য উৎসাহিত করব, তাদের রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলব। ছোট থেকে অভ্যাস না করলে বড় হয়ে রোজা রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। রোজার মাসে মা বাবার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে ছেলে-মেয়েকে সাত বছর হলেই নামাজ শিক্ষা দেয়া। ১০ বছর বয়সে না পড়লে শাসন করা। রমজান মাসে পরম আদরে মমতায় ডেকে তুলে সাহরি খাওয়ানো, রোজার নিয়ত শিখানো, তারপর কুরআন তেলাওয়াত করা। ফজর পড়ে ঘুমানো। দিনের বেলায় খেতে চাইলে খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখা।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানো। রোজা অবস্থায় মিথ্যা না বলা, অন্যের নামে বদনাম না করা, অযথা হাসি-গল্প গুজব না করা। জিকির করা, ভালো কাজ করা, ভালো কথা বলা, সত্য কথা বলা। ছোট সোনামণিদের জোহর নামাজের পরে ঘুমিয়ে দেয়া। এই ঘুমও সওয়াবের কাজ এটা বুঝিয়ে বলা। অযথা সময় নষ্ট না করে ঘুমালেও আল্লাহ খুশি হন।
হে মুমিনগণ তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে কিংবা সফরে থাকবে, সংখ্যা পূরণ করে নেবে। (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৮৪)
রান্নাবান্না ও প্রয়োজনীয় কাজ ব্যতীত বাকি সময়টা আমরা তাসবিহ তাহলিল জিকির কুরআন তেলাওয়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। দুই খতম তিন খতম তেলাওয়াতের জন্য তাড়াহুড়ো করে পড়ার কোনো দরকার নেই ধীরেসুস্থে অর্থসহ অল্প অল্প পড়ব, বুঝে পড়ব, সহিহভাবে তেলাওয়াত করার চেষ্টা করব।
যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। (বুখারি: ১৮৯৯, মুসলিম: ১০৭৯) অবসরে দুনিয়াবি আলোচনায় লিপ্ত হব না। কারণ দুই থেকে তিনজন মহিলা একসাথে হলে গিবত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অনর্থক কথা না বলে ঘুমিয়ে থাকব। ঘুমও ইবাদতের সমতুল্য সওয়াবের কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির প্রত্যাশায় রমজানের রোযা পালন করবে তার অতীতের গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি : ৩৮)
উপরোক্ত কাজগুলো সঠিকভাবে করার তৌফিক আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের দান করুন। আমিন।