বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ অপরাহ্ন

নির্ধারিত সময়ে আদায় হচ্ছে না ইডিএফের ঋণ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২
  • ১২৮ বার

খেলাপি হয়ে যাচ্ছেন রফতানিকারকরা। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে অনেকেই পরিশোধ করতে পারছেন না। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) ব্যবহারকারীরা। ইডিএফ তহবিলের অর্থও অনেকেই এখন যথাসময়ে ফেরত দিতে পারছেন না। যথাসময়ে ফেরত দিতে না পারায় বাধ্যবাধকতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্ট থেকে সমপরিমাণ অর্থ সমন্বয় করে নিচ্ছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ পরিস্থিতিতে উভয় সঙ্কটে পড়েছে ব্যাংকিং খাত। এক দিকে রফতানিকারকরা ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে এ জন্য ব্যাংকের আয় থেকে অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে, পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদে আসলে পরিশোধ করতে গিয়ে ব্যাংকের নিট আয় কমে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত দুই বছরের করোনার প্রাদুর্ভাবে তারা সময়মতো বিদেশী ক্রেতাদের সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারেননি। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিদেশী ক্রেতারা পণ্য নিতে সময়ক্ষেপণ করেছে। অনেকের রফতানির অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। ইডিএফ থেকে ঋণ নিয়ে পণ্য উৎপাদন করেছেন, কিন্তু বিদেশী ক্রেতারা সময়মতো পণ্য না নেয়ায় বা অর্ডার স্থগিত করায় রফতানি আয় নির্ধারিত সময়ে দেশে আসেনি। এর ফলে ইডিএফের তহবিল থেকে নেয়া ঋণ ব্যাংকের পরিশোধ করতে পারেননি। এভাবে ধীরে ধীরে ডেডলক হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে নিট পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অনেকেই অর্থ অভাবে যথাসময়ে ইডিএফ তহবিল থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক পর্যায়ে ছয় মাসের পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে প্রথমে তিন মাস পরে আরো তিন মাস বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এখন তা ধীরে ধীরে বর্ধিত সময় তিন মাসে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া। তুলার দাম দ্বিগুণেরও বেশি পরিমাণ বাড়ছে। ফলে আগে ইডিএফ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ঋণসীমা ব্যবহার করে যেখানে ১০ টন তুলা আমদানি করা যেত, এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় ৪ টন আমদানি করা যাচ্ছে। অপর দিকে রফতানি আদেশও বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এক দিকে ডেডলক বেড়ে যাওয়ায় ইডিএফের বিদ্যমান তহবিল ব্যবহার হয়ে গেছে; অপর দিকে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সর্বোচ্চসীমা ব্যবহার করে নির্ধারিত পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। এ কারণে তিনি তহবিলের আকার বাড়িয়ে কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন অর্থাৎ ১ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার দাবি জানান।
জানা গেছে, অনেক সময় রফতানিকারক পুঁজির অভাবে রফতানিমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করতে পারে না। কাঁচামালের অভাবে পণ্য উৎপাদন করতে না পারায় যথাসময়ে পণ্যও সরবরাহ করা যায় না। এতে প্রভাব পড়ে সামগ্রিক রফতানি আয়ের ওপর। রফতানি আয় বাড়াতে ব্যবসায়ীদের পুঁজির জোগান দেয়ার জন্য ১৯৮৯ সালে রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন তহবিলের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ডলার। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে বর্তমানে ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এ তহবিল বরাদ্দ দেয়া হয়। এ জন্য রফতানিকারকের সুদ পরিশোধ করতে হয় দুই শতাংশ হারে। এর মধ্যে এক শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এক শতাংশ পায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক।

রফতানিকারক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে আবার ওই ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ ফেরত দিয়ে থাকে। একজন রফতানিকারক সর্বোচ্চ তিন কোটি ডলার ঋণ সুবিধা পান এ তহবিল থেকে। আর তারা এ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন বা ৬ মাসের জন্য এ ঋণ সুবিধা পান। কেউ ছয় মাসের মধ্যে ঋণ ফেরত দিতে না পারলে উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারলে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরো ৯০ দিন বা তিন মাস বাড়ানো হয়। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ২৭০ দিনের জন্য এ ঋণ সুবিধা পান রফতানিকারকরা। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এ সুবিধা ছিল প্রথমে ৬ মাস, পরে আরো ৬ মাস।
ইডিএফ তহবিলের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ইডিএফ থেকে অর্থ নেবে। আবার গ্রাহক ব্যাংককে পরিশোধ করলে ব্যাংক তাদের ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ রেখে বাকি অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেবে; অর্থাৎ কোনো গ্রাহক অর্থ ফেরত না দিলে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক তার সাথে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্ট (এফসি) থেকে সমন্বয় করে নেবে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতিতে অনেক রফতানিকারকই রফতানি উন্নয়ন তহবিলের অর্থ ফেরত দিতে পারছেন না। এতে তারা দুই ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। প্রথমত, ইড়িএফ ঋণ ২৭০ দিন পরিশোধ করতে না পারলেই তা খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। আর খেলাপি হলেই ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট থেকে এক শতাংশ সুদসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমন্বয় করা নিচ্ছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর আয় থেকে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সমন্বয় করায় তাদের বৈদেশিক মুদ্রা আটকে যাচ্ছে। এর ফলে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এক দিকে খেলাপি বাড়ছে, অন্য দিকে এ তহবিলের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। কারণ, শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। সেই সাথে ৬ মাসের পরিবর্তে ৯ মাস তহবিল আটকে যাচ্ছে। এ কারণে ৭ বিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন দৈনিক যে পরিমাণ আদায় করা হচ্ছে, ওই পরিমাণ আবার বিতরণ করা হচ্ছে। এ কারণে আগে যেখানে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তহবিল ব্যবহারের আবেদন করার সর্বোচ্চ দুই দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তহবিল ছাড় করত, এখন তা ৭ দিন কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ দিন লেগে যাচ্ছে। অর্থাৎ চাহিদা অনুযায়ী তহবিল সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ কারণে তহবিলের আকার বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com