প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েই চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে সে বিষয়ে খোলাখুলি বলেছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পারস্পরিক সমতার ভিত্তিতে রাখার কথা বলেছেন তিনি। তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে কাশ্মীরের কাঁটার কথাই শোনা গেল তার মুখ থেকে।
পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে শাহবাজ শরীফ বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তবে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।’
জিও নিউজসহ দেশটির একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিরোধী দলগুলোর জোট বেঁধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরদিন গতকাল সোমবার পাকিস্তানের পার্লামেন্ট বা জাতীয় পরিষদে ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহবাজ। ইমরান খান নেতৃত্বাধীন তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) সদস্যদের বয়কটের মধ্যে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ১৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন মুসলিম লিগের (নওয়াজ) নেতা শাহবাজ।
পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদে ১৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এরপর পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ বা সিনেটের চেয়ারম্যান সাদিক সানজারানির কাছ থেকে দেশের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।
তার আগে পার্লামেন্টে ভাষণে শাহবাজ নিজের নতুন সরকারের পররাষ্ট্র নীতির আভাসে চীনকে সামনে আনেন বলে পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলোর প্রতিবেদনে উঠে আসে।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় ‘চীনের প্রিয়পাত্র’ হিসেবে পরিচিত শাহবাজ বলেন, ‘চীন ও পাকিস্তানের যে সুদীর্ঘকালের বন্ধুত্ব, তা কেউ আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) স্থাপন প্রকল্প আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়ার কথাও বলেন নতুন প্রধানমন্ত্রী।
শাহবাজ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় চীনের সাহায্যে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্পে হাত দিয়েছিলেন। ওই প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয় বলে চীন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। এ ছাড়া তিনি নিজেও বহু বার চীন সফর করেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ সতর্কতার সঙ্গে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সমতার ভিত্তিতে। অর্থাৎ পাকিস্তানের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বের যে কথা বলা হয়ে থাকে, দৃশ্যত তা অপছন্দের কথা বললেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে শাহবাজ বলেছেন, যেহেতু ইউরোপের দেশটিতে অনেক পাকিস্তানির বাস, তাই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী তিনি।
আর প্রতিবেশী দেশ ভারত প্রসঙ্গে পূর্বসূরিদের মতোই কাশ্মীরের কথা বলেছেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘যদিও তিনি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চান, তবে এটাও মানেন যে কাশ্মীর সঙ্কটের সমাধান না হলে তা বাস্তবে রূপ নেবে না।’
ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর ভারত-পাকিস্তান আলাদা দেশ হলেও কাশ্মীর নিয়ে সঙ্কট রয়েই গেছে। দুই দেশই কাশ্মীরের দাবিদার, তা নিয়ে যুদ্ধেও নামছে।
শাহবাজ বলেন, কাশ্মীরের মানুষ কী চায়, তা মেনে নেওয়া উচিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরিদের অধিকারের জন্য সরব থাকবেন বলেও জানান তিনি।