রিজিক আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রাণিকুলের জন্য অনন্য এক নিয়ামত। সব প্রাণীর জীবন-ধারণের সব উপকরণের দায়িত্ব মহান আল্লাহ তায়ালা নিজেই গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বান্দার তাকদিরে যা লিখে রেখেছেন এবং যতটুকু লিখে রেখেছেন, সে তা পাবেই। তাকদিরে লেখার বাইরে বেশিও পাবে না, আবার একবিন্দু কমও পাবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা সব সৃষ্টির রিজিকদাতা।
ঊর্ধ্বজগত ও নিম্নজগতের এমন কোনো সৃষ্টি নেই যে তাঁর রিজিকের অন্তর্ভুক্ত নয়। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবাই তাঁর দয়ার সাগরে ডুবে আছে। মহান আল্লাহ তায়ালা পরম দয়ালু এবং তাঁর মেহেরবানির শেষ নেই। রিজিক সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহরই’ (সূরা হুদ-৬)। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সঙ্কুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত এবং সব কিছু দেখছেন’ (সূরা আল-ইসরাইল-৩০)।
মানুষ এক সময় ভালো ও পর্যাপ্ত রিজিক ও নিয়ামত ভোগ করলেও হঠাৎ কোনো এক অদৃশ্য কারণে রিজিক কমে যেতে শুরু করে। কিন্তু মানুষের রিজিক কমে যাওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। বান্দা যখন আল্লাহর মনোনীত বিধান ইসলামী দ্বীন থেকে গাফেল হয়ে যায় তখন বান্দার রিজিক কমতে থাকে। যখন মানুষ গোনাহ করতে থাকে, ইবাদত থেকে দূরে সরে যায়, আল্লাহকে কম স্মরণ করে, দোয়া করা থেকে বিরত থাকে ইত্যাদি কারণে তখনো রিজিক তথা জীবিকা কম হতে থাকে। মানুষের রিজিক কমে যায়, যা মানুষ অনুমান করতে পারে না। তা ছাড়া আল্লাহ তায়ালা বান্দার পরীক্ষা নেয়ার জন্য রিজিক কমিয়ে দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে সীমাহীন সম্পত্তি দান করেন’ (সূরা আল-বাকারাহ-২১২)।
রিজিক বৃদ্ধি করার কিছু বিশেষ আমল রয়েছে। আল্লাহর কাছে তাওবা করা, বেশি করে ইস্তিগফার করা, পিতা-মাতার আনুগত্য করা, হারাম পরিত্যাগ করা, জাকাত দেয়া, ওমরাহ করা, নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা, আত্মীয়স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, রিজিক সম্পর্কিত বিভিন্ন সূরা পাঠ করা ইত্যাদি আমল করার মাধ্যমে বান্দা তার রিজিক বৃদ্ধি করতে পারে। মানুষ মনে করে, রিজিক বা জীবিকা আসে চাকরি, ব্যবসা বা চাষাবাদের মাধ্যমে। কিন্তু কুরআনের ঘোষণা হলো, রিজিকের সিদ্ধান্ত হয় আসমানে। আল্লাহ বলেন, ‘আকাশে রয়েছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু’ (সূরা জারিয়াত-২২)।
রিজিকের জন্য আমরা কত রকম চিন্তা করে থাকি! দুনিয়ার খেয়ালে মগ্ন হয়ে শুধু দুনিয়ার জীবনে একটু ভালো থাকার জন্য অর্থাৎ এই ক্ষণস্থায়ী জীবন সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে কাটানোর জন্য আমরা অনেক পাপকাজে লিপ্ত হয়ে যাই। দুনিয়াবি জীবনকে সুখ এবং বিলাসিতার চাদরে মুড়িয়ে দেয়ার জন্য অন্যায় কাজ করি, দুর্নীতি করি, ঘুষ খাই, হারাম পন্থায় অর্থ উপার্জন করি। যা আমাদের গুনাহের পাল্লাকে ভারী করে দেয়।
কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা অশেষ রহমতের অধিকারী। আমরা কত অন্যায় পাপ কাজ করি। তবুও মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের রিজিককে একেবারে চিরতরের জন্য বন্ধ করে দেন না। তবুও আমরা আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করি না। আল্লাহ চাইলেই আমাদের রিজিককে বন্ধ করে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি আমাদের রিজিককে বন্ধ করেন না। তিনি আমাদের পাপ থেকে সরে আসার অনেক সুযোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমরা সেই সুযোগকে কাজে না লাগিয়ে পাপের পর পাপকাজে লিপ্ত হতে থাকি। আর এসব পাপকাজে শয়তান আমাদের এভাবে ওসওয়াসা দিতে থাকে যে, বান্দা তুমি অনেক পাপ করেছ, আল্লাহ কখনো তোমাকে ক্ষমা করবেন না। সে জন্য পাপকাজ ছেড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করে পরকালে জান্নাত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে বরং আরো বেশি পাপকাজ করতে থাকো, এই দুনিয়ার জীবনই সব কিছু। কিন্তু আল্লাহ যে পরম দয়ালু। অসীম ক্ষমতার অধিকারী, আমরা তা ভুলে যাই। আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(আমার এ কথা) ঘোষণা করে দাও; হে আমার ইবাদতকারীরা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ; তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু’ (সূরা জুমার-৫৩)।
আমাদের উচিত রিজিকের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে দোয়া করা এবং আমাদের আগত-অনাগত গুনাহ নিয়ে আল্লাহর কাছে সব সময় ক্ষমা প্রার্থনা করা। বান্দার উচিত আল্লাহর রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে সে অনুযায়ী কাজ করা এবং নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে থাকা। রিজিকের জন্য দোয়া করতে হবে। কারণ দোয়া কখনো বিফলে যায় না।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়