শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন

২০০ বছরে সেই তিমিরেই জীবন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৪ জুন, ২০২২
  • ১২২ বার

এই ভূখণ্ডে চা শ্রমিকদের শ্রম-ঘামের ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের। আজ তারা নানা বৈষম্যের শিকার। তাদের ভূমি অধিকার নেই; মেলেনি চা শ্রমিক দিবসের জাতীয় স্বীকৃতিও। প্রতিদিন ১২০ টাকার মজুরিতে সংসার চালাতে হয় তাদের। তারপরও এ শিল্প বাঁচাতে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন দেশের লক্ষাধিক শ্রমিক।

এ অবস্থায় আজ শনিবার দেশে দ্বিতীয়বারের মতো পালিত হচ্ছে জাতীয় চা দিবস। এ উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলে অবিস্থত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন চা গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল আজিজ।

দেশে চা বাগানের সংখ্যা ১৬৩টি। সবচেয়ে বেশি বাগান আছে মৌলভীবাজার জেলায়; ৯৭টি। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি পংকজ কন্দ জানান, সারাদেশে কর্মরত চা শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, নারী-পুরুষের সর্বোচ্চ দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা। তিন শ্রেণির বাগান রয়েছে। অনেক বাগানে নারী শ্রমিকদের ৮৫ টাকাও মজুরি দেওয়া হয়। যদিও সবার একই পারিশ্রমিক হওয়ার কথা। শ্রমিকরা বলছেন, এই মজুরি দিয়ে তাদের সংসার চালনো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সন্তানদের লেখাপড়া তো দূরের কথা, এই টাকা দিয়ে তিন বেলা খাবারই হয় না।

চা শ্রমিক নেতা পরিমল সিং বারাইক বলেন, ‘মজুরি ১২০ টাকা, আর কিছু রেশন। এই দিয়েই মা-বাবা-সন্তান নিয়ে জীবন অতিবাহিত করেন চা শ্রমিকরা। শ্রমিকদের গল্প এখনকার এই আধুনিক যুগেও কল্পকথার মতোই মনে হবে।’

শ্রীমঙ্গল রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চা শ্রমিক নেতা বিজয় বুনার্জী বলেন, ‘বর্তমানে চা বাগানে জনসংখ্যা বেড়েছে। প্রতি ঘরে অন্তত দুই-তিনজন করে কাজ করার সক্ষমতা থাকলেও বাগানে কাজ করে মাত্র একজন করে। কোনো কোনো পরিবারের কাজ আবার অস্থায়ী। তাদের দৈনিক বেতন মাত্র ৮৫ টাকা। শিক্ষা, চিকিৎসা ও স্যানিটেশনও অপ্রতুল।’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার বলেন, ‘এখন চা শ্রমিকদের মূল দাবি ভূমি অধিকার এবং ২০ মে রাষ্ট্রীয়ভাবে চা শ্রমিক দিবস পালনের স্বীকৃতি।’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকদের অবস্থা খুবই খারাপ। শ্রমিকরা যে ১২০ টাকা মজুরি পান, সেটা দিয়ে সংসারের জিনিসপত্র কেনা যায় না। মালিকপক্ষের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে মজুরি বৃদ্ধি করার। সেই চুক্তি অনুযায়ী দ্রুত মজুরি বাড়ানো দরকার।’

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে বাংলাদেশ চা সংসদের সিলেটের চেয়ারম্যান জি এম শিবলী বলেন, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বাগান মালিকরাও কাজ করছেন। বর্তমান বেতন ১২০ টাকা হলেও এর সঙ্গে ঘর, চিকিৎসা, রেশন, জ্বালানি সংযুক্ত করলে তাদের বেতন পড়ে প্রায় সাড়ে ৩০০ টাকা। দুই বছর পর পর চা শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে মালিক পক্ষের দ্বিবার্ষিক চুক্তি হয়। এ সময় বাধ্যতামূলক বেতন বাড়ানো হয়। আগামী চুক্তিতেও বেতন বাড়বে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. একেএম রফিকুল হক বলেন, ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুদানের পরিপ্রেক্ষিতে চা বাগানের শ্রমিক পোষ্যদের শিক্ষার মান উন্নয়নে বাংলাদেশ চা বাগান শ্রমিক শিক্ষা ট্রাস্ট গঠিত হয়। ট্রাস্ট গঠনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২৬ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে অন্যান্য সুবিধাও অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com