সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ অপরাহ্ন

যার আদর্শে মুগ্ধ পৃথিবী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১১ জুন, ২০২২
  • ১২৩ বার

হজরত মুহাম্মদ সা: একজন ব্যক্তিই নন, একটি জীবন্ত আদর্শ, একটি বিপ্লব। পৃথিবী আজ অবধি কত মানুষ-মহামানুষ দেখেছে, কত নামীদামি মানুষের সংস্পর্শ পেয়েছে, কিন্তু নবী মুহাম্মদ শুধু একজনই পেয়েছে। সৃষ্টিকুলে চরিত্রের সর্বোচ্চ সিংহাসন যিনি দখল করেছেন, তিনি হলেন হজরত মুহাম্মদ সা:। উত্তম চরিত্রের ফুল ফুটিয়ে পৃথিবীকে যিনি চমকে দিয়েছেন, তিনি হলেন হজরত মুহাম্মদ সা:। যার আদর্শে পৃথিবী আজও মুগ্ধ, তিনি হজরত মুহাম্মদ সা:।

চরিত্রের সর্বোচ্চ স্তর খুলুকে আজিমের অধিকারী ছিলেন নবী মুহাম্মদ সা:। জাহেলিয়াতের চরম অন্ধকার যখন পৃথিবীকে গ্রাস করে বসেছিল, সেই চরম দুর্দিনে হজরত মুহাম্মদ সা: বিশ্বশান্তির বার্তা নিয়ে দুনিয়ায় এসেছেন। হেরার যে আলোকরশ্মি তিনি আল্লাহর কাছ থেকে ধারণ করলেন, তার মাধ্যমেই তিনি মহান এক সভ্যতা বিশ্বের মানুষের কাছে উপস্থাপন করেন। মহানবী সা: সমাজের সব পর্যায়ে মানবাধিকারের এমন এক নমুনা পেশ করেন, যা আজও জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে গোটা বিশ্বের কাছে অনন্য হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর আদর্শ ও চারিত্রিক মাধুর্যের কারণে বর্বর আরব জাতি একটি সুমহান জাতিতে পরিণত হয়।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: ছিলেন মানবজাতির অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় মহান উদার, বিনয়ী ও নম্র ব্যক্তিত্ব। তিনি উত্তম চরিত্র ও মহানুভবতার একমাত্র আধার। পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, প্রতিবেশী সবার অকৃত্রিম শিক্ষণীয় আদর্শ ও প্রাণপ্রিয় ব্যক্তিত্ব নবী করিম সা: একাধারে সমাজসংস্কারক, ন্যায়বিচারক, সাহসী যোদ্ধা, দক্ষ প্রশাসক, যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক এবং সফল ধর্মপ্রচারক।
কল্যাণকর প্রতিটি কাজেই তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। তাঁর অসাধারণ চারিত্রিক মাধুর্য ও অনুপম ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ ( সূরা আহযাব-২১)।

তিনি অবিস্মরণীয় ক্ষমা, মহানুভবতা, বিনয়-নম্রতা, সত্যনিষ্ঠতা প্রভৃতি বিরল চারিত্রিক মাধুর্য দিয়েই বর্বর আরব জাতির আস্থাভাজন হতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে কারণে তারা তাঁকে ‘আল আমিন’ বা বিশ্বস্ত উপাধিতে ভূষিত করেছিল। তিনি যে বিনয়-নম্র ও সৎচরিত্রের অধিকারী ছিলেন, তা তারা একবাক্যে অকপটে স্বীকার করেছে। দুনিয়ার মানুষকে অর্থের দ্বারা বশীভূত করেননি তিনি বরং তাদের সদাচরণ, উত্তম ব্যবহার এবং সততার দ্বারা বশীভূত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন- ‘নিশ্চয় তুমি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত’ (সূরা কালাম-৪)।

কখনো তিনি মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান ও হেয়প্রতিপন্ন করেননি বা নগণ্য ভাবেননি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করে পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠতর স্বভাব-চরিত্রের অতুলনীয় আদর্শ স্থাপন করেছেন। তাঁর স্বভাব-চরিত্রের মধ্যে বিনয় ও নম্রতা ছিল সদা জাগ্রত। সর্বোত্তম আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবেই তাঁকে বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি’ (মুসনাদে আহমাদ)।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘তোমাদের যা বিপন্ন করে তা তার (মহানবী) জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, ঈমানদারদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়াময় (সূরা তাওবা ১২৮)। আয়াতের এ অংশে মহানবী সা: চারটি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে।
এক. মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁর কাছে দুঃসহ। মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন ক্ষতি তাঁকে পীড়া দেয়। বিধিবিধান পালনে যেন মানুষের কষ্ট না হয় সে দিকে সব সময় তাঁর দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকত। হাদিস শরিফে এসেছে- আমি বক্রতাবিহীন সহজ ধর্ম নিয়ে এসেছি (মুসনাদে আহমাদ-২১০৮)।

দুই. তিনি মানুষের মঙ্গলকামী। মানুষের হেদায়াতের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী। মানবতার মুক্তির ব্যাপারে তাঁর প্রচেষ্টার অন্ত নেই। মহানবী সা: ইরশাদ করেন, ‘যেসব বিষয় তোমাদের জান্নাতে পৌঁছে দেবে আর যা তোমাদের জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেবে, তার সবই আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করে দিয়েছি’ (মুসনাদে আহমাদ -১৫৩)।

তিন ও চার নাম্বার গুণ হলো- তিনি ঈমানদারের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ও করুণাময়। উম্মতের প্রতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া ও অনুগ্রহ বোঝাতে আল্লাহ ‘রউফ’ ও ‘রহিম’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন। এই দুটি শব্দ আল্লাহর করুণা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। মহানবী সা: ছাড়া আল্লাহ এই দুটি শব্দ আর কারো জন্য ব্যবহার করেননি (তাফসিরে মুনির)।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিআতুস সুফফাহ আল ইসলামিয়া হামিউস সুন্নাহ গাজীপুর

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com