কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ইরানের হামলায় ভূপাতিত ইউক্রেনের বিমানে থাকা নিহত যাত্রীদের জন্য ‘ন্যায়বিচার’ চাইবেন তিনি।
অ্যালবার্টা অঙ্গরাজ্যের এডমন্টনে অনুষ্ঠিত এক স্মরণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন মি. ট্রুডো। ওই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ১৭৬ জনের মধ্যে ৫৭ জনই কানাডার নাগরিক। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি ইরানের কাছে জবাব চাইবেন।
‘জবাব না পাওয়া পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেব না’, বলেন ট্রুডো। এরই মধ্যে ‘ভুল’ করে বিমানটি ভূপাতিত করার দায় স্বীকার করেছে ইরান। যদিও প্রথমদিকে তারা ক্রমাগত অস্বীকার করছিলো।
ইরানে দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভ
বিমান ভূপাতিত করা নিয়ে ‘মিথ্যে’ বলায় ইরানে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভ চলছে। বিধ্বস্ত বিমানের নিহত আরোহীদের মধ্যে একটি বড় অংশ ছিলেন ইরানের নাগরিক। রাজধানী তেহরান ও অন্যান্য শহরে বিক্ষোভকারীরা ইরানের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ারও খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তেজনা বাড়ার মধ্যেই প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করলেও পরে “অনিচ্ছাকৃতভাবে” বিমানে আঘাত হানার কথা স্বীকার করে ইরান।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে যাওয়ার সময় গত বুধবার তেহরানের কাছে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ইরাকে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর পরই এ ঘটনা ঘটে।
গত ৩ জানুয়ারি বাগদাদে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে যুক্তরাষ্ট্র হত্যার করার প্রতিশোধ হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ইরান, কানাডা, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, আফগানিস্তান এবং সুইডেনের নাগরিক রয়েছে।
রোববার বিক্ষোভে কী হয়েছিল?
ব্যাপক হারে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন সত্ত্বেও নতুন বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। দাঙ্গা পুলিশ, মোটরবাইকে করে এলিট রেভল্যুশনারি গার্ডের সদস্য এবং সাধারণ পোশাকে নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিয়োজিত ছিলেন।
এক ভিডিওতে দেখা যায় যে, প্রোপাগান্ডা বর্জনের প্রতীকী কার্যক্রম হিসেবে শহীদ বেহেশতী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাটিতে আঁকা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পতাকায় পা না ফেলে তা এড়িয়ে যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা।
সামাজিক মাধ্যমের কিছু ভিডিওতে দেখা যায় যে, বিক্ষোভকারীরা সরকারি বিরোধী স্লোগান দিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে: “তারা মিথ্যা বলছে যে আমাদের শত্রু আমেরিকা, আমাদের শত্রু এখানেই।” বিক্ষোভকারীদের অনেকেই নারী।
সামাজিক মাধ্যমের ফুটেজে, তেহরানের আজাদি স্কয়ারে বিক্ষোভকারীদের হাতে তালি দিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। বিবিসি পার্সিয়ান সার্ভিস বলে, ওই বিক্ষোভকারীদের বাঁধা দেয় নিরাপত্তা বাহিনী, ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসও।
আধা-রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ফার্স জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করছিল। এছাড়া অন্য শহরগুলোতেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিবিসির আরব সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক সিবাস্টিয়ান ইউশার বলেন, যারা বিক্ষোভ চালিয়ে নেয়ার কথা ভাবছেন তাদের মনে রাখতে হবে যে অতীতে নিরাপত্তা বাহিনী কিভাবে বিক্ষোভের ঘটনা সামাল দিয়েছে।
শনিবার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। তারা প্রাথমিকভাবে নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানাতে এটা করে। কিন্তু স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে বিক্ষুব্ধ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় যাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়।
ইরানের বেশ কিছু সংবাদপত্র বিমান বিধ্বস্তে নিহতের জন্য স্মরণানুষ্ঠানের খবর ছেপেছে যেখানে শিরোনামে “লজ্জাজনক” এবং “অমার্জনীয়”র মতো শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
কিন্তু ইরানের সরকারপন্থী একটি সংবাদপত্র প্রশংসা করে সংবাদ ছেপেছে, যেখানে ভুল করে বিমান ভূপাতিতের কথা স্বীকার করে নেয়াকে ‘সৎ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোববার তেহরানে সোলেইমানিকে সমর্থন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
রোববারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, সরকারিবিরোধী বিক্ষোভকারীদের টার্গেট করা ইরানের উচিত হবে না। তিনি বলেছেন, “বিশ্ব দেখছে। আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দেখছে।”
এরই মধ্যে ইরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তেহরানে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। তারা একে “আন্তর্জাতিক আইনের ঘোর লঙ্ঘন” বলে উল্লেখ করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, রব ম্যাকায়ারকে একটি স্মরণানুষ্ঠান থেকে গ্রেফতার করা হয়, যেখানে তিনি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন। নিহতদের মধ্যে ব্রিটিশ নাগরিকও ছিলেন।
ম্যাকায়ার বলেন, বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে শুরু করলে তিনি সেখান থেকে সরে যান এবং বিক্ষোভে তার কোন হাত নেই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়, ইরান রোববার রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল “প্রচলিত আচরণ না মেনে অবৈধ র্যালিতে তার অংশগ্রহণের বিষয়ে” অভিযোগ জানাতে।
রোববার যুক্তরাজ্যের দূতাবাসের বাইরে ব্রিটেনের পতাকা পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। বিবিসি।