করোনা মহামারীতে গত বছরও দ্বিতীয় বারের মতো কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র হজ পালিত। আত্মশুদ্ধি ও পাপমুক্তির আকুল বাসনা নিয়ে প্রায় ৬০ হাজার নারী-পুরুষ সেবার আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন।
গত বছর হজে খুতবা দিয়েছিলে সৌদি আরবের বিশিষ্ট আলেম, মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। তিনি সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদেরও সদস্য।
এদিন মসজিদে নামিরা থেকে বাংলাদেশ সময় ৩টা ৩০ মিনিটে খুতবা শুরু করেন তিনি। প্রায় ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা মূল খুতবা আরবিতে দেয়া হয়, তবে আরো ৯ ভাষায় (সংক্ষিপ্ত পরিসরে) অনুবাদ করা হয় তা, এর মধ্যে ছিল বাংলাও। খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বিভিন্ন টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে।
খুতবার শুরুতে তিনি আল্লাহতায়ালার প্রশংসা, রাসুলুল্লাহর সা:-এর ওপর দরুদ পাঠ করেন। উপস্থিত হাজীদের সুস্থতা কামনা করেন। তাদের জন্য দোয়া করেন।
খুতবায় রাসূলের সা: একটি হাদিস পড়েন, যার মূলকথা হলো- কোনো মুসলমানের যদি সক্ষমতা অর্জন হয়, তাহলে জীবনে একবার হলেও তাকে অবশ্যই হজ করতে হবে।
শায়খ শায়খ ড. বান্দার বালিলা বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমরা আমি ছাড়া কারো ইবাদত করবে না এবং কাউকে শরিক মানবে না। নবীজি সা: বর্ণনা করেছেন, তোমরা পৃথিবীতে বসবাসকারীদের ওপরে দয়া করো, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর দয়া করবেন। মুসলমানদের উচিত পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ্য ও সদ্ভাব বজায় রাখা
খতিব বলেন, উম্মতের পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। আল্লাহর রহমত থেকে সেই ব্যক্তিই নিরাশ হয় যে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। দয়াময় আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমার রহমত আমার আজাবের ওপর প্রাধান্য পায়। নবীজি সা: বলেছেন জান্নাতে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
শায়খ শায়খ বালিলা আরো বলেন, হে মানব সম্প্রদায়, আল্লাহতায়ালা তোমাদের ন্যায় ও ইনসাফের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামে মানবজাতির জন্য এমন বিধিবিধান রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে সমশ্রেণির মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। ইনসাফ ও ন্যায় বিচার ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। এটি ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। আমাদের আচার-আচরণ ও ব্যবহারে এ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে হবে।
আল্লাহতায়ালা যেভাবে তোমার ওপর অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও অন্যের ওপর অনুগ্রহ করো। আল্লাহতায়ালার রহমত অনুগ্রহকারীদের নিকটবর্তী থাকে সবসময়। আল্লাহতায়ালা পিতা-মাতার সাথে ভালো আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালার নির্দেশ হলো পিতা-মাতার পরে আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভালো আচরণ করো।
রাসূল সা: বলেছেন, নিজের অধীনস্থদের সাথে ভালো আচরণ করো। নিজের অধীনস্থ চাকর-বাকরদের তাদের শক্তি-সামর্থের ওপরে বোঝা চাপিয়ে দেবে না। অন্যকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুরা করারও নির্দেশনা দিয়েছেন আল্লাহ।
খুতবায় তিনি আরো বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমার জন্য কুরআনকে নাজিল করা হয়েছে যেন তুমি হেদায়েত পাও। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়েত দেন। নিজের আত্মশুদ্ধি কর এবং তাকওয়া অবলম্বন করো। নিজের রবের ইবাদত এমনভাবে করো যেন তিনি তোমাকে দেখছেন।
কাবার ইমাম খুতবায় আরো বলেন, আল্লাহতায়ালা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না। কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে, আল্লাহতায়ালার রজ্জুকে শক্তভাবে ধরো।এবং মতপার্থক্যের যেওনা। পরস্পরের মাঝে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা সম্পর্ক তৈরি কর। বিদ্বেষ ও শত্রুতা খতম কর। পৃথিবীতে ভারসাম্যতা তৈরি করা। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ক্ষমা করা।
কাবার ইমাম বলেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমারা নামাজ আদায় কর। নিজের মনকে হেফাজত কর। আল্লাহর ওয়াস্তে তোমার প্রতিশ্রুতি পূরণ কর। আল্লাহ বললেন, শয়তান আপনাকে বিপথগামী করার চেষ্টা করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
কাবার ইমাম খুতবায় আরও বলেছেন, যে ফজিলত হল আপনি আল্লাহর ইবাদত করেন যেন আপনি তাকে দেখছেন। যদি এটি সম্ভব না হয় তবে ভাববেন যে তিনি আপনাকে দেখছেন। আল্লাহ বলেন, কোন বান্দা যদি নিজের উপর অন্যায় করে তবে তার জন্য তওবা করার দরজা উন্মুক্ত রয়েছে। রাসুল সা: বলেছেন, যদি কোন এলাকায় কোনও রোগ ছড়িয়ে পড়ে থাকে তবে সেখানে যাবেন না।
হজের খুতবায় আরো বলা হয়, অহংকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের সাথে সদয় আচরণ করেন। আল্লাহ বলেছেন: আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি। তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, মহানবী হলেন সর্বশেষ নবী। তোমরা তোমাদের নামাজ সংরক্ষণ কর, নামাজের ব্যপারে যত্নবান হও। আল্লাহ পরাক্রমশালী, তাকে ভয় করুন এবং তাকওয়া অবলম্বন করুন। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সব মানুষের সাথেই রয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা কারো আমলকে বিনষ্ট করেন না।
-আরবি থেকে অনুলিখন- আব্দুল্লাহ তামিম ও নুরুদ্দীন তাসলিম