বিপিএলে বড় ম্যাচে বেশির ভাগ সময়ে জ্বলে ওঠা ক্রিস গেইল আবার খেললেন টর্নেডো ইনিংস। ক্রিজে গিয়ে ঝড় তুললেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও। শেষের দিকের দারুণ বোলিংয়ে লক্ষ্যটা নাগালেই রাখতে পেরেছিল রাজশাহী রয়্যালস। শুরুর মন্থর ব্যাটিংয়ে কাজটা হয়ে পড়েছিল ভীষণ কঠিন। তবে ব্যাটিং তাণ্ডবে রোমাঞ্চকর ম্যাচে দলকে নাটকীয় জয় এনে দিয়েছেন আন্দ্রে রাসেল। দলকে নিয়ে গেছেন ফাইনালে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ২ উইকেটে জিতেছে রাজশাহী। আগামী শুক্রবারের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্স।
গেইল ও মাহমুদউল্লাহর বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ১০ ওভারে ১১১ রান তুলেছিল চট্টগ্রাম। শেষ ১০ ওভারে দলটি যোগ করতে পারে কেবল ৫৩ রান। সব মিলিয়ে ২০ ওভারে করে ৯ উইকেটে ১৬৪ রান।
রাজশাহীর শেষ ৩১ বলে প্রয়োজন ছিল ৮২ রান। সেই সমীকরণ মিলিয়েছেন রাসেল। ৭ ছক্কা ও দুই চারে ২২ বলে অপরাজিত ৫৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংসে তিনিই জয়ের নায়ক।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত জিয়াউর রহমানকে হারায় চট্টগ্রাম। প্রথম ওভারটি মোহাম্মদ ইরফানকে মেডেন খেলেন জিয়াউর, পরের ওভারের প্রথম বলে বাঁহাতি পেসারকে ছক্কায় উড়িয়ে খোলেন রানের খাতা। পরে আরও চারটি ডট বল খেলে ফিরে যান বোল্ড হয়ে।
অন্য প্রান্তে ততক্ষণে শুরু হয়েছে গেইল ঝড়। আবু জায়েদ চৌধুরীর ওভারে দুই চারের সঙ্গে হাঁকান এক ছক্কা। শোয়েব মালিকের অফ স্পিনে তুলে নেন তিন চার ও এক ছক্কা।
চার দিয়ে রানের খাতা খোলা ইমরুল কায়েসকে বোলিং এসেই থামান আন্দ্রে রাসেল। নতুন ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ শুরু করেন চার দিয়ে। পরের বলে বাঁচেন রিভিউ নিয়ে। দ্রুত গেইলের সঙ্গে জমে যায় অধিনায়কের জুটি।
প্রথম ৬ ওভারে চট্টগ্রামের ইনিংসে সিঙ্গেল ছিল কেবল একটি। পাওয়ার প্লের পরও ব্যাট চালাতে থাকেন গেইল। ২১ বলে পৌঁছান ফিফটিতে। আফিফ হোসেনকে ছক্কায় আমন্ত্রণ জানানোর পর ফিরেন বোল্ড হয়ে। ক্যারিবিয়ান বাঁহাতি ওপেনারের ২৬ বলে খেলা ৬০ রানের ইনিংস গড়া পাঁচ ছক্কা ও ছয় চারে।
সেই ওভারেই আফিফকে পরপর দুটি ছক্কা হাঁকানো মাহমুদউল্লাহকে থামান মোহাম্মদ নওয়াজ। তিনটি করে ছক্কা ও চারে চট্টগ্রাম অধিনায়ক ১৮ বলে করেন ৩৩। সেই ওভারেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান নুরুল হাসান সোহান।
দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর ধাক্কা আর সামাল দিতে পারেনি চট্টগ্রাম। অলক কাপালীর বলে চাডউইক ওয়ালটনের দারুণ এক ক্যাচ শর্ট মিডউইকেটে মুঠোয় জমান লিটন দাস।
শেষ দিকে আসেলা গুনারত্নে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে এনে দেন লড়াই করার মতো একটা সংগ্রহ।
দুটি করে উইকেট নেন ইরফান ও নওয়াজ।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি রাজশাহীর। রুবেল হোসেনকে ওড়ানোর চেষ্টায় দ্রুত ফিরেন আফিফ হোসেন। রান আউট হয়ে যান আরেক ওপেনার লিটন। মাহমুদউল্লাহকে তুলে মারার চেষ্টায় মিডঅফে ক্যাচ দেন কাপালী।
প্রথম ১০ ওভারে রাজশাহী তুলতে পারে কেবল ৬৪ রান। ইরফান শুক্কুর ও মালিকের জুটি এগোয় মূলত এক-দুইয়ের ওপর নির্ভর করে।
৪৭ বল স্থায়ী ৪৬ রানের জুটি ভাঙেন জিয়াউর। তাকে ওড়ানোর চেষ্টায় মিড অফে ধরা পড়েন মালিক। পাকিস্তানের অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের ২২ বলে খেলা ১৪ রানের ইনিংসে নেই কোনো বাউন্ডারি।
লম্বা সময় ক্রিজে থাকলেও টাইমিং করতে ভুগছিলেন শুক্কুর। বাঁহাতি কিপার-ব্যাটসম্যানের সংগ্রাম শেষ হয় মেহেদি হাসান রানার বলে ওয়ালটনকে সহজ ক্যাচ দিয়ে। ৬ চারে ৪২ বলে করেন ৪৫ রান।
ক্রিজে গিয়েই ঝড় তুলেছিলেন নওয়াজ। লংঅন থেকে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে দুর্দান্ত এক ডাইভিং ক্যাচে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে থামান ইমরুল। ভাঙে ১০ বল স্থায়ী ৩৩ রানের জুটি। ছক্কা মেরেই ফিরে যান ফরহাদ রেজা, গোল্ডেন ডাকের স্বাদ পান কামরুল ইসলাম রাব্বি।
তবে রাসেল ছিলেন অবিচল। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন আবু জায়েদ। ইনিংসের ১৫তম ওভারের শেষ বলে প্রথম ছক্কা পেয়েছিল রাজশাহী। এরপর থেকে ছক্কা বৃষ্টিতে রান এসেছে বানের জলের মতো। সেখানে নায়ক রাসেল, শেষ ছক্কায় দলকে ফাইনালে নিয়ে ছেড়েছেন মাঠ।