মুক্তিযোদ্ধা-লেখক ড. নূরুন্নবীকে ‘ঘুংঘুর সম্মাননা-২০২২’ দেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্কে গত সোমবার জ্যাকসন হাইটসের ‘নবান্ন পার্টি হলে’ ‘ঘুংঘুর’ নিউইয়র্ক বইমেলা সংখ্যা ২০২২ এর প্রকাশনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিশিষ্ট নাট্যশিল্পী শিরিন বকুলের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্বে ছিল ‘ঘুংঘুর’ এর মোড়ক উন্মোচন। আর দ্বিতীয় পর্বে ছিল ‘ঘুংঘুর সম্মাননা ২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠান।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঘুংঘুর এর সম্পাদক ও বিশিষ্ট লেখক হুমায়ুন কবির। তিনি ঘুংঘুর এর এই নয় বছরের পথচলা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন।
এই পর্বে ঘুংঘুর ও লিটল ম্যাগাজিনের পথচলা নিয়ে কথা বলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার। তিনি সাহিত্যে লিটল ম্যাগাজিনের ভূমিকা ও আজকের কর্পোরেট শাসিত সাহিত্যবাজার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন।
ঘুংঘুর নিয়ে আলোকপাত করেন চলতি সংখ্যার অতিথি সম্পাদক বিশিষ্ট লেখক আবেদীন কাদের। তিনি এই সংখ্যায় প্রকাশিত ভালো ও মন্দ লেখাগুলো নিয়ে কথা বলেন।
প্রথম পর্বে সাহিত্য ও চিত্রকলা নিয়ে কথা বলেন নন্দিত টিভি তারকা ও চিত্রশিল্পী বিপাশা হায়াত। তিনি বলেন, ‘আমরা সৃজনে বিশ্বাস করি। আমরা জানার আগ্রহ নিয়ে পড়ি। সেই আলো প্রজন্মের মাঝে ছড়ানোর জন্য কাজ করেই এগোতে চাই’।
সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের লেখা ‘বাবা বলতেন’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন, বিশিষ্ট আবৃত্তিকার গোপন সাহা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহ্বায়ক কবি মিশুক সেলিম। নিউইয়র্কের সাহিত্যচর্চা ও ‘সাহিত্য একাডেমি’র পথচলা নিয়ে বক্তব্য দেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন।
এই সার্বিক আয়োজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট সমাজসেবক-শিল্পপতি ও ৩১তম নিউইয়র্ক বইমেলার আহ্বায়ক গোলাম ফারুক ভূঁইয়া।
এরপরই শুরু হয় সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটি। প্রথমেই সূচনা বক্তব্য দেন ‘ঘুংঘুর’ সম্পাদনা পরিষদের সদস্য বিশিষ্ট কবি ফকির ইলিয়াস।
কবি ফকির ইলিয়াস ড. নূরুন্নবীর সহধর্মিনী ড. জিনাত নবীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই সাহসী নারী ছায়ার মতো পাশে থেকে তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েই চলেছেন।
ডঃ নবীর পরিচিতি উপস্থাপনকালে সাপ্তাহিক বাঙালী’র সম্পাদক কৌশিক আহমেদ বলেন, ড. নবী আজীবনের মুক্তিযোদ্ধা। তিনি এই সংগ্রাম আজও করেই যাচ্ছেন তার লেখালেখির মাধ্যমে। তাঁর এ পর্যন্ত ১৭টি বই বেরিয়েছে। এগুলো ইংরেজিতেও অনূদিত হয়েছে। তা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স বুক হিসেবে পঠিত হচ্ছে। তিনি প্রজন্মের কাছে সত্য ও আলোকিত কথাগুলোই জানিয়ে যাচ্ছেন লেখনীর মাধ্যমে। উত্তর প্রজন্ম জানতে পারছে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক না’জানা কথা।
অনুষ্ঠানে ড. নবী’র সংগ্রামী জীবন ও সাহিত্য নিয়ে কথা বলেন বিশিষ্ট ছড়াকার ও লেখক লুৎফর রহমান রিটন।
গতবছর ঘুংঘুর সম্মাননা প্রাপ্ত বিশিষ্ট শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম বক্তব্য রাখেন ড. নবীর জীবন ও আদর্শ নিয়ে। তিনি বলেন, এই গুণী ও ত্যাগী মানুষটির কাছে আমরা সবাই ঋণী।
এই সমাজ ও প্রজন্ম বিনির্মাণে ড. নবী যে ত্যাগ ও চেতনা বিলিয়েছেন-তা কালে কালে স্মরণ করা হবে, এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিশিষ্ট চিন্তক বেলাল বেগ।
সম্মাননা প্রদান পর্বে গীতিকার ও শব্দজন ইশতিয়াক রুপু ফুলের তোড়া তুলে দেন ড. নূরুন্নবীর হাতে। তার পরেই বেলাল বেগ, তাজুল ইমাম, লুৎফর রহমান রিটনসহ অন্য অতিথিরা সম্মাননা পদক তুলে দেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও লেখক মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন্নবীর হাতে। ড. নবী বলেন, ‘আমার পিতা আমাকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছিলেন। ন্যায়ের পক্ষে কথা বলার সাহস দিয়েছিলেন। আমি সেই আলোকেই জীবন পরিচালিত করেছি’।
তিনি ড. জিনাত নবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমি তাঁর কাছে বিশেষভাবে ঋণী। তাঁর সমর্থন ও সাহায্য ছাড়া আমার এগিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না’।
উল্লেখ্য, এর আগে ‘ঘুংঘুর সম্মাননা’ পেয়েছেন বিশিষ্ট চিন্তক বেলাল বেগ, লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস ও শিল্পী তাজুল ইমাম।
ড. নবী এর আগে একুশে পদক পেয়েছেন এবং তিনি মার্কিন মূলধারার রাজনীতির একজন হিসেবে নিউ জার্সির প্লেইন্সবরো সিটির কাউন্সিল নির্বাচিত হয়ে পঞ্চম মেয়াদের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়ে ছিলেন শব্দজন খালেদ সরফুদ্দীন, লেখক আবু সাঈদ রতন, কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি, কবি সৈয়দ মামুনুর রশীদ, কবি আহমেদ ছহুল, কবি মাসুম আহমদ প্রমুখ। বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরও ছিলেন সমাজসেবক-সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক গোলাম ফারুক ভূইয়া, অভিনেতা-চলচ্চিত্র নির্মাতা তৌকির আহমেদ, বিজ্ঞানী ড. জিনাত নবী, শহীদ সন্তান ফাহিম রেজা নূর, অঙ্কুর প্রকাশনীর মেজবাহউদ্দিন প্রমুখ।