যারা নামাজ পড়ে না তাদের অনেকে বলে থাকে- নামাজ না পড়লেও ঈমান ঠিক আছে। তাদের এই কথাটি একেবারে মিথ্যা।
আসলে নামাজ নেই, ঈমান নেই। নামাজ নেই, মুসলমানিত্ব নেই। নামাজ মুমিন হওয়ার দলিল ও প্রমাণ। হাদিসের ভাষায়- নামাজ ঈমান ও কুফরির মধ্যে পার্থক্যকারী। যে নামাজ ছেড়ে দিলো সে কুফরি করল। আল্লাহর ভাষায়, জাহান্নামিদের জিজ্ঞেস করা হবে, কোন্ জিনিস তোমাদের জাহান্নামে নিয়ে এলো? তারা বলবে, আমরা নামাজি ছিলাম না।
রাসূলুল্লøাহ সা: ও খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে মুসলমান দাবিদার কোনো বেনামাজি ছিল না। এতটুকু জানা যায়, রাসূলুল্লাহ সা:-এর ইন্তেকালের পর কিছু মানুষ জাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল যদিও তারা নামাজ পড়ত। আবু বকর রা:-এর শাসনামলে তাদেরকে মুরতাদ ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল (মুরতাদের শাস্তি হত্যা যেটি কার্যকর করবে রাষ্ট্র)। নামাজ না পড়ার শাস্তি প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানিফা রহ: ন্যূনতম শাস্তির কথা বলেছেন। তা হলো- বেনামাজিকে জেলখানায় আবদ্ধ করে রাখা হবে যতক্ষণ না তওবা করে বা মৃত্যু ঘটে।
নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বান্দার যত চাওয়া-পাওয়ার সম্পর্ক। আমরা নামাজে দণ্ডায়মান হয়ে প্রতি রাকাতে বলি (আল্লাহরই শেখানো), ‘আমরা তোমারই গোলামি করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই।’ আবার আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ তাকবিরে তাহরিমার মাধ্যমে নামাজ শুরু এবং সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজের সমাপ্তি। এই সময়ের মাঝে আপনার যা প্রয়োজন তা সবই আল্লাহর কাছে পেশ করুন বিশেষ করে সালাম ফেরানোর আগে ও সেজদায় গিয়ে। দোয়া মাছুরা এমনি একটি দোয়া যা আল্লাহর রাসূল সা: তাঁর প্রিয়তম সাথী আবু বকর রা:-কে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আপনার প্রয়োজন আপনিই পেশ করুন। আল্লাহ আপনার অতি নিকটে এবং আপনার সব ডাক তিনি শুনেন।
বর্তমানে বেশির ভাগ পরিবারে অশান্তি। নামাজের অনুপস্থিতি এর অন্যতম কারণ। না পরিবারপ্রধান নামাজ পড়েন, আর না সন্তান নামাজ পড়ে। অথচ আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, নিজে নামাজ পড়ার সাথে সাথে সন্তানকে নামাজ পড়ার তাগিদ দিতে। লোকমান আ: তাঁর সন্তানকে শিরক না করার পাশাপাশি নামাজ আদায়ের কথাও বলেছেন। রাসূলুল্লাহ সা: সন্তানের সাত বছর বয়সে নামাজের জন্য তাগিদ দিতে বলেছেন। বর্তমানে মসজিদে শিশু খুঁজে পাওয়া যায় না। শিশু দেখলে কিছু অজ্ঞ লোক বিরক্ত হয়। কাতারের ভেতরে ওদের দৌড়াদৌড়িতে নামাজের কোনো ক্ষতি হয় না। রাসূলুল্লাহ সা:-এর নাতিদ্বয় সেজদার সময় তাদের নানাকে রীতিমতো ঘোড়া বানিয়ে পিঠে চেপে বসত। বলবেন কি, তাঁর নাতিরা দুষ্টু ছিল? এগুলো শিশুসুলভ আচরণ।
আপনার সন্তান কথা শুনে না, অসামাজিক, কারো সাথে মেলামেশা করে না- সবই সত্য। আপনি আদর করে তাকে মসজিদমুখী করুন। ১০ বছর বয়সে সন্তান মসজিদে না গেলে মারতে বলেছেন। কে বলেছেন? দয়ার সাগর রাহমাতুল্লিল আল আমিন মুহাম্মদ সা:। স্কুলে না গেলে, পড়তে না বসলে কত বকাঝকা করেন অথচ নামাজের জন্য আপনার মধ্যে কোনো পেরেশানি নেই।
নামাজ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। ‘নিশ্চয়ই’ শব্দ ব্যবহার করে আল্লাহ গ্যারান্টি দিয়েছেন। হ্যাঁ, নামাজে অভ্যস্ত হলে আপনার সন্তান ভালো হয়ে যাবে। বলবেন, অনেক নামাজি আছে যারা ঘুষ খায়, সুদ খায় ও নানাবিধ অন্যায় করে। ওরা আসলে নামাজি না, ওরা ভণ্ড, প্রতারক, লোকদেখানো কাজ করে, এক একজন কাট্টা মুনাফিক। ওদের নামাজে ভীতিমিশ্রিত বিনয় নেই এবং আল্লাহর জন্যও নামাজ পড়ে না।
আপনি জানেন কি? যে লোক জামাতের সাথে ফজর আদায় করল সে আল্লাহর হিফাজতে চলে গেল। তার কি আর কোনো ভয় আছে বা দুশ্চিন্তা থাকতে পারে? নামাজ আপনাকে নির্ভাবনার জীবন দেবে। নামাজ আপনাকে প্রভুর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেবে এবং সেজদায় গিয়ে সব ব্যথা-বেদনা ও অপ্রাপ্তি তাঁকে বলে আপনি ফ্রেশ বা হালকা হয়ে যান। আপনার ভাবনাটা আল্লাহকেই ভাবতে দিন এবং তিনিই আপনার জন্য যথেষ্ট।
আসুন, আমরা নিজেরা নামাজে আন্তরিক হই এবং সন্তানকে নামাজের জন্য দরদের সাথে বলি। আল্লাহ চাইতে বলেছেন এবং আমরা তাঁরই কাছে চাই। তিনি দেবেন, কীভাবে দেবেন, কখন দেবেন সেটি তাঁর ব্যাপার। আল্লাহই তাঁর বান্দাদের মন আপনার দিকে ঝুঁঁকে দেবেন। জীবনের দীর্ঘ সময় নামাজ পড়েননি এবং কত অন্যায় করেছেন সে খবর কেবল আল্লাহই জানেন। আপনি তওবা করুন ও পরিশুদ্ধ হোন, পেছনের সব গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন। আপনার ধারণার চেয়েও আল্লাহ বেশি উদার ও দয়ার্দ্র। বারবার চান, তাতে তিনি বিরক্ত হন না বরং খুশি হন। তাঁর ভাণ্ডার অফুরন্ত এবং তিনি কৃপণ নন। তাৎক্ষণিক না পেলে বুঝবেন, এর মধ্যে হিকমত আছে এবং বান্দার কল্যাণ বিবেচনা করেই দেন না। তাই হতাশ হবেন না এবং ধৈর্যহারাও হবেন না।
লেখক : সাবেক উপাধ্যক্ষ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ