মো. জামাল উদ্দিন রফিক ও ফরিদ উদ্দিন রুমি- দুই ভাই। বড় ভাই ফরিদ উদ্দিন রুমি আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করেন। এর পর বুয়েট থেকে নেন উচ্চতর ডিগ্রি। আর ছোট ভাই জামাল উদ্দিন রফিক খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
মেধাবী এ দুই সহোদর পড়ালেখা শেষে আলোকিত কর্মজীবনের পথে হাঁটেননি; বরং হেঁটেছেন অন্ধকার ধরে অন্ধকারতম এক গন্তব্যের দিকে। দুই ভাই যোগ দেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির উলফ প্যাকে। প্রকৌশল বিদ্যা কাজে লাগিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর বোমা হামলাও চালান তারা। তবে শেষরক্ষা হয়নি। তারা ধরা পড়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিটিটিসি) ইউনিটের হাতে। আর এর পরই বেরিয়ে এসেছে জঙ্গিবাদের অন্ধকার গলিপথে দুই ভাইয়ের ছুটে চলার গল্প।
গত বছর ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে, ২৬ মে মালিবাগে, ৩১ আগস্ট সায়েন্সল্যাব মোড়সহ ঢাকা শহরে মোট ৫টি স্থানে পুলিশকে টার্গেট করে আইইডি হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ঘটনার দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসÑ এমন খবর দেয় সাইট ইন্টেলিজেন্স। এসব ঘটনার তদন্তে
নেমে এ দুই ভাইয়ের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার খবর পান সিটিটিসির কর্মকর্তারা। প্রত্যেকটি হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন ছোট ভাই জামাল উদ্দিন রফিক। তিনি নিজে ৪টিতে সরাসরি অংশও নেন।
সিটিটিসি কর্মকর্তারা জানান, কুয়েটে পড়ার সময় ৮টি সাংস্কৃতিক সংগঠনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন রফিক। এমন সংস্কৃতিমনা একজন মানুষই ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন জঙ্গিবাদের মতো চরমপন্থায়, যা নতুন চিন্তার কারণ বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। রফিক ‘ইন্ট্রোভার্ট’ প্রকৃতির হওয়ায় তার জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সহজে ধরতে পারেননি প্রিয়জনরা।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, বড় ভাই রুমি অপেক্ষাকৃত সহজ-সরল প্রকৃতির। রফিক নিজে জঙ্গিবাদে জড়ানোর পর নানা কৌশলে বড় ভাই রুমিকেও ভেড়ান।
গত রবিবার রাতে রাজধানীর শনিরআখড়া এলাকা থেকে এক সহযোগীসহ ছোট ভাই জামাল উদ্দিন রফিককে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। গতকাল ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে তোলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির এসআই মোখলেসুর রহমান। আদালত শুনানি শেষে তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে সিটিটিসির সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) এসকে ইমরান হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এই দুই ভাইয়ের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের তক্কা মোড় এলাকায়। গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পায় সিটিটিসি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বোমাসহ বিস্ফোরকদ্রব্য ও লিকুইড জব্দ করা হয়েছিল। এ সময় ওই বাসা থেকে রুমিকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি।
সিটিটিসি জানায়, রফিক ঢাকার একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। এর পাশাপাশি তিনি আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেছেন। সেখান থেকে অর্জিত আয়ে ছোট সেল গঠন করে জঙ্গিবাদ কার্যক্রমের রসদ সংগ্রহে ব্যয় করেন। বর্তমানে নব্য জেএমবি এমন ছোট ছোট সেল গঠন করে বিচ্ছিন্নভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এই প্রক্রিয়াকে ‘উলফ প্যাক’ বলা হচ্ছে। নব্য জেএমবির এই গ্রুপটির অপর দুই সদস্যও রফিকের হাত ধরে জঙ্গিবাদে যুক্ত হয়।
সূত্র জানায়, রফিক এবিটি থেকে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, আইএস মতাদর্শ অনুসরণ করে নেটওয়ার্কিংয়ে থাকতে পারছে। এ জন্য তিনি নব্য জেএমবিতে যুক্ত হন।