গত ৩ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ড্রোন হামলায় ইরানের মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে হত্যা করা হয়। এর পরপরই ট্রাম্প উদ্বিগ্ন অবস্থায় ঘোষণা দেন, পাল্টা হামলা করলে ইরানের ৫২টি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। কিন্তু ইরান ৮ জানুয়ারি ইরাকস্থ দু’টি মার্কিন ঘাঁটিতে ডজনখানেক মিসাইল নিক্ষেপ করার পরপরই ট্রাম্প পাল্টা হামলার পরিবর্তে ‘শান্তি’র প্রস্তাব জাতিসঙ্ঘে প্রেরণ করেন। ইরানও প্রতি উত্তরে সুর নরম করে ফেললে আপাতত মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের রণধ্বনি ক্ষীণ হয়ে আসে। এখন প্রশ্ন জাগে, ট্রাম্পের এত তর্জন-গর্জন কেন হঠাৎ ইথারে মিলিয়ে গেল? ইরানও কেন ‘যত গর্জেছে ততটুকু বর্ষেনি’? বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দুই পক্ষই নিজেদের অভ্যন্তরীণ শক্তিমত্তা, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশ্বপ্রতিক্রিয়া, জাতীয় আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ইত্যাদি পর্যালোচনা করেই বর্তমান অবস্থান গ্রহণ করেছে।
ইরান ১২টি ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করে ইরাকে দু’টি মার্কিন ঘাঁটির সমূহ ক্ষতি করেছে বলে দাবি করছে। কিন্তু এতে কোনো মার্কিন সেনা বা নাগরিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। ফলে একটি প্রশ্ন সামনে চলে আসে, এই হামলার দিন ও তারিখ কি যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই জানত? যুক্তরাষ্ট্র আগেই কূটনৈতিক চ্যানেলে ইরানকে অনুরোধ করেছিল পাল্টা আক্রমণটা যেন ‘সমানুপাতিক’ হয়। এদিকে ইরান চাপের মুখে ছিল প্রতিশোধমূলক হামলা করার জন্য। এ ব্যাপারে ইরানি জনগণের মাঝে একটি অলিখিত জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল। সোলাইমানির জন্য শোকমিছিল জাতীয় বিক্ষোভ মিছিলে রূপান্তরিত হয়েছিল। চাপ প্রশমনের জন্য ইরাকের মার্কিন স্থাপনায় হামলা জরুরি হয়ে পড়েছিল। তবে আপাতত এই সামরিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই ইরান নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখছে হিসাব কষেই। কারণ তাদের তেলক্ষেত্রগুলো অধিকাংশই উপসাগরের তীরে অবস্থিত যা মার্কিন এবং উপসাগরীয় বৈরী রাষ্ট্রগুলোর দূরপাল্লার অস্ত্রের নাগালে। ওইগুলোর নিরাপত্তার কথা নিশ্চয়ই ইরান মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মুহূর্তে একটা সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়ানোর সামর্থ্য তাদের নেই। এমনিতেই মার্কিন অবরোধে তাদের অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি হুমকির মুখে। অন্য দিকে ইসরাইল, সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সাথে ইরানের সম্পর্ক বৈরী। ওই সব দেশ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থরক্ষা করে চলেছে। সম্প্রতি সৌদি আরব মার্কিন অস্ত্র সংগ্রহ করে উল্লেখযোগ্য ফায়ার পাওয়ার অর্জন করে ফেলেছে। তা ছাড়া, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইসরাইলের সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন বলে খবর পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় ইরান শুধু এক ডজন ব্যালিস্টিক মিসাইল খরচ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে আপাতত মনে হচ্ছে। সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদি ছায়াযুদ্ধের মাধ্যমেই ইরান তাদের প্রতিশোধ প্রক্রিয়াকে ধরে রাখতে পারে। কারণ ইরান নিজের সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনায় রেখেই জেনারেল সোলাইমানির রণকৌশল অবলম্বনে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে তুলেছে। লেবাননে হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনে ইসলামী জিহাদ, ইরাকে হাশেদ আল শাবি, ইয়েমেনে হুতি এবং সিরিয়ায় একাধিক মিলিশিয়া বাহিনী রয়েছে যারা ইরানের পক্ষে ও আমেরিকার বিরুদ্ধে যেকোনো হামলা চালাতে প্রস্তুত। তাই মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি প্রদর্শন করতে ইরানকে বেশ আত্মবিশ্বাসী বলেই মনে হয়েছে। মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আমেরিকাকে সেই আত্মবিশ্বাসের জানান দিয়েছে এবং নিজেরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। অন্য দিকে, ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমানটি ভুলক্রমে ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুর্ঘটনার স্বীকার হওয়ায় ইরান একটু অপরাধবোধের শিকার হয়েছে বলে অনুমান করা যায়।
অন্য দিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হঠাৎ নীরবতা বা পিছু হটা বেশ রহস্যজনক মনে হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এতে রহস্যের কিছু নেই; বরং তিনি বাস্তবতার আলোকে পরিকল্পিতভাবেই পিছু হটেছেন। হয়তো বা তার সোলাইমানি হত্যার পেছনে শুধু নির্বাচনী উচ্চাভিলাষের কথাই বিবেচনায় রেখেছিলেন। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে তার হিসাবে ভুল ছিল।
সার্বিকভাবে তার পিছু হটার দুই ধরনের কারণ রয়েছে বলে গবেষকরা মনে করেন। সেগুলো হলো ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক। ক) ভূ-রাজনৈতিক কারণ : (১) গত নভেম্বর থেকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে ইরানে বিক্ষোভ এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সরকারের কঠোর দমননীতির কারণে যে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছিল তা সোলাইমানির হত্যার মধ্য দিয়ে মিলিয়ে গেছে। সমগ্র জাতি এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে মার্কিনবিরোধী অবস্থান নিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রদর্শন করেছে। (২) ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে প্রতিশোধের প্রশান্তি নিয়ে এখন তারা সংযত থেকে শুধু মার্কিন পাল্টা হামলার এবং অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে উদ্বেগ নিয়ে প্রচারণা চালালে তা ইরানের পক্ষে যাবে। (৩) উত্তেজনার কারণে ইরানের দ্বারা হরমুজ প্রণালীর যাতায়াত ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়লে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য বেড়ে যাবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র চাপের মুখে পড়ে যেতে পারে। (৪) সম্প্রতি ইরাকে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং নাগরিক সুবিধার অপ্রতুলতার প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে, যাতে হামলার জন্য শিয়া গ্রুপগুলোকে দায়ী করা হয়। কিন্তু সোলাইমানি হত্যার প্রতিবাদে ইরাকি জনগণ ও সরকার এককাতারে চলে আসে এবং ‘অপ্রতিরোধ্য’ মার্কিনিদের চ্যালেঞ্জ করার ব্যাপারে শিয়া মিলিশিয়াদের তৎপরতার যৌক্তিকতাই প্রমাণিত হয়। ফলে ইরাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার মার্কিনিসহ সব বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য মার্কিন সরকারের ওপর চাপ দিতে শুরু করে। (৫) মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনায় ইরানের দুই বৈরী দেশ ইসরাইল ও সৌদি আরব আবশ্যিকভাবে এই সম্ভাব্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। কারণ এরই মধ্যে ইসরাইল ইরানের মিসাইল হামলার টার্গেট তালিকায় আছে বলে জানা যায়। অন্য দিকে সৌদি তেলক্ষেত্রে সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ক্ষয়ক্ষতি এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। কাজেই তারাও এখন চাচ্ছে এই অঞ্চলে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরনের সঙ্ঘাত না হোক। সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলোচনার উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটনে গিয়েছেন বলে জানা যায়। (৬) ইউরোপ ইরানকে পারমাণবিক চুক্তিতে ধরে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাড়াবাড়ির কারণে ছয় দেশীয় এই চুক্তিটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই চুক্তি থেকে ইরান কার্যত বের হয়ে গেলে ইরানের অপেক্ষাকৃত ভৌগোলিকভাবে নিকটবর্তী হিসেবে সমগ্র ইউরোপ উদ্বেগের মধ্যে পড়ে যাবে। কাজেই ট্রাম্পের এ ধরনের অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর ঘটনার অবতারণা করার জন্য কোনো ইউরোপীয় দেশই তাকে সমর্থন করতে পারে না। ফলে ট্রাম্প সোলাইমানি ইস্যুতে একঘরে হয়ে পড়েছেন বলা যায়। (৭) ‘আইএস’ বিরোধী যুদ্ধে শরিক হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের সৈন্য মার্কিন বাহিনীর সাথে ইরাকে অবস্থান করায় ওই সব দেশ এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। (৮) ইরানের মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে ভেতর থেকেই প্রচণ্ড প্রতিবাদ দেখা গেছে। প্রায় ৭০টি শহরে মার্কিন নাগরিকদের প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। আর ডেমোক্র্যাট নেতৃবর্গ এই অপরিণামদর্শী আক্রমণের জন্য ট্রাম্পের সরব সমালোচনা করেছেন।
খ) সামরিক কারণগুলো : (১) ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রয়েছে ইরানে। কিছু আছে ‘স্কাড’ মিসাইল যেগুলোর আঘাত হানার দূরত্ব হলো ৭৫০ কিলোমিটার। আর বাকিগুলো হলো উত্তর কোরিয়ার ‘নো ডং’ মিসাইল যেগুলো ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো খুব নিচু দিয়ে গিয়ে যেকোনো রাডারকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক ‘সেন্টার ফর দ্যা ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’ এর প্রতিরক্ষা শিক্ষা বিভাগের পরিচালক হ্যারি কাজিয়ানস ‘সিএনবিসি’কে বলেছেন, বিশ্বের তাবৎ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও মধ্যপ্রাচ্যে যদি নিয়ে যাওয়া হয়, তবুও আমরা ইরানকে নিবৃত্ত করতে পারব না। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়ে ইরান আসলে ‘পরাশক্তি’। এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সব সামরিক ঘাঁটিসহ ইসরাইল ও সৌদি আরবে অনায়াসে আঘাত হানতে সক্ষম। (২) মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ‘ছায়াবাহিনী’ তৎপর রয়েছে, যারা যেকোনো মার্কিন ঘাঁটিতে আক্রমণের সক্ষমতা রাখে। আফগানিস্তান থেকে শুরু করে ইরাক, সিরিয়া, ইসরাইল, ইয়েমেন ও সৌদি আরবের যেকোনো মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে তারা গেরিলা বা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থকে তছনছ করে দিতে পারে। অর্থাৎ ইরানে মার্কিন সামরিক হামলার মানে হবে ‘ভিমরুলের চাকে ঢিল ছোড়া’র মতো। (৩) ইরানের বিপ্লবী গার্ডবাহিনীর নৌবহরে মিসাইলবাহী স্পিডবোট এবং মিডগেট সাবমেরিন রয়েছে যেগুলো খুব দ্রুত এবং সহজেই পারস্য উপসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ এবং অন্য সব তেলবাহী বাণিজ্যিক জাহাজের বিরুদ্ধে মোতায়েন করা সম্ভব। (৪) ইরানের মনুষ্যবিহীন উড়োজাহাজে (টঅঠং) সারভেইল্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি তাতে বিস্ফোরক সংযুক্ত করে বোমা নিক্ষেপের জন্যও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাপ্তাহিক ‘জেম’স ডিফেন্স উইকলি’ পত্রিকার সামরিক বিশেষজ্ঞ জেরেমি বিন্নি বলেন, “If you look at ships, tanks, jet fighters, Iran looks very weak. But if you’re looking at anti-ship missiles, ballistic missiles, UAVs and things like that then it looks a lot more capable.” (The Daily Star, 08.01.2020). অর্থাৎ ইরানের যুদ্ধজাহাজ, ট্যাংক, যুদ্ধ বিমানের কথা বিবেচনা করলে মনে হবে, তারা খুবই দুর্বল। কিন্তু তাদের জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, মনুষ্যবিহীন বিমান ইত্যাদির কথা চিন্তা করলে মনে হবে, ইরান অনেক বেশি সামরিক ক্ষমতার অধিকারী। কাজেই ইরান আক্রমণ করলে পুরো অঞ্চলব্যাপী ৬০ হাজার মার্কিন সৈন্য অত্যন্ত নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। অন্য দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য তথা পুরো এশিয়া অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এবং চূড়ান্তভাবে মার্কিন বাহিনী এই পুরো অঞ্চল থেকে অপসারিত হতে হলে তাদের অর্থনীতিতে ধস নেমে আসতে পারে; যা কাটিয়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুব সহজ হবে না। (৫) সোলাইমানির মৃত্যুতে ইরাক ও সিরিয়ায় আবার ‘আইএস’ এর উত্থান ঘটতে পারে। ‘আইএস’কে দমনের জন্য ইরাক ও সিরিয়ায় শিয়া মিলিশিয়াদের সহযোগিতা নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত প্রয়োজন। অন্যথায় ‘আইএস’ আবার বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আর ইরানের সাথে যুদ্ধ বাধলে ‘আইএস’ এবং শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীগুলো ঐক্য গড়ে একযোগে মার্কিন বাহিনী দমনে নামা অসম্ভব নয়।
আসলে ইরান নিজেদের সামরিক ঘাটতিকে পূরণ করার লক্ষ্যে খুবই পরিকল্পিতভাবে অসম প্রতিযুদ্ধ কৌশল, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, বিস্ফোরকবাহী ড্রোন, জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, স্মার্ট সাবমেরিন এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মিলিশিয়া বাহিনীর জাল বিস্তার ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ হয়ে সামরিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। ইরানের এ ধরনের প্রস্তুতি হঠাৎ মোকাবেলা করার শক্তি বা সাহস-কোনোটিই এই মুহূর্তে ট্রাম্পের নেই। অনেকের মতে, ইরানের সাথে সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় মাসখানেকের প্রস্তুতির প্রয়োজন। তা ছাড়া আমেরিকানরা যুদ্ধের জন্য সমর্থন কিংবা ট্রাম্পকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়ার ক্ষমতা প্রদান, কোনোটাই করতে প্রস্তুত নয়। একই সাথে ট্রাম্প ইরানের ত্বরিত প্রতিশোধ গ্রহণের সাহস এবং সামর্থ্য দেখেও কিছুটা ভড়কে গেছেন বলে মনে হয়। সব মিলিয়ে এ যাত্রায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আপাতত পিছু হটেছেন। তবে এটাই তার শেষ অবস্থান নাও হতে পারে। তার মতো অস্থির চিত্তের ব্যক্তি সত্যি সত্যিই যুদ্ধ লাগিয়ে দিলে বিশ্ববাসী অবাক হবে না।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং পিএইচডি গবেষক, (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।