সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা বিসর্জন, সাপ্তাহিক ছুটি ও ঈদে মিলাদুন্নবী স:-এর টানা ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে।
বুধবার বিকেলে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ হয়। শেষ দিনে বিসর্জন উপলক্ষে হিন্দু সপ্রদায়ের লোকজনের বিশাল ভীড় জমে। অন্যদিকে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় নতুন আমেজ যোগ হয়।
প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে বুধবার দুপুর ২টার পর থেকে জেলার কক্সবাজার সদর, উখিয়া, টেকনাফ, সদর, ঈদগাহ, চৌফলদন্ডী ছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা আসতে শুরু করে। তাদের এ অনুষ্ঠানকে ঘিরেও সমাগম ঘটে পর্যটকসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখো মানুষের।
আয়োজকরা জানান, শুধু সৈকতের লাবণী পয়েন্টে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হচ্ছে। একই সময়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত এবং রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। রামু ও চকরিয়ায় পৃথক প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা। কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জল করের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম ও র্যাব-১৫- এর অধিনায়ক খায়রুল ইসলাম সরকার, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মো: মুজিবুর রহমান।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ জানান, এ বছর জেলায় ৩০৫টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে কক্সবাজার সৈকতে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জল কর জানান, দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান এটি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছরও এখানে দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে। গত বছর করোনা মহামারির কারণে এই উৎসবটি ব্যাপকভাবে পালন করা সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো: মাহফুজুল ইসলাম জানান, তিন স্তরে নিরাপত্তা জোরদারের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে। শুধু সৈকত এলাকায় প্রায় কয়েক শ‘ ফোর্স মোতায়েন করা হয়। যানজট নিরসনে সৈকতের কলাতলী থেকে আশপাশের সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়।
এদিকে সাপ্তাহিক ও পূজার ছুটি এবার একই দিনে পড়েছে। তাই কেউ পূজা উপলক্ষে, কেউ সপ্তাহ শেষে অবসর কাটাতে জড়ো হয়েছেন সৈকতে। বুধবার সকাল থেকে পর্যটকের ঢল নামে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে।
কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে হাজার হাজার পর্যটক দেখা গেছে।
শহরের বিভিন্ন রাস্তায়ও ভিড় রয়েছে। রীতিমতো দেখা দিয়েছে যানবাহন সঙ্কট। গণপরিবহণগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পর্যটকদের রিজার্ভ ভাড়া ধরতে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা কয়েক দিনের ছুটিতে কয়েক শ‘ কোটি ব্যবসা হতে পারে বলে আশা করছেন। পর্যটক আগমনে খুশি হোটেল ব্যবসায়ীরা।
হোটেল মোটেল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন, অক্টোবরের শুরু থেকে পর্যটক আগমন ভালো দেখা দিয়েছে। সব হোটেলে প্রায় বুকিং হয়েছে। যেহেতু পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে তাই এখন প্রচণ্ড ভীড় হবে।
কক্সবাজার শালিক রেস্তোরাঁর মালিক নাছির উদ্দীন জানান, সকাল থেকে পর্যটকের সমাগম দেখা যাচ্ছে। অন্য দিনের চেয়ে আজ পর্যটকের চাপ বেশি। আশা করি এই চাপ আগামী ছুটির দিন পর্যন্ত থাকবে।
ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি রেজাউল করিম জানান, টানা কয়েক দিনের ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগম এটা প্রতিবছর হয়। তবে এবার পূজার বন্ধ একসাথে হওয়ায় আরো বেশি আসছে মানুষ।
ঢাকার সাভার থেকে বেড়াতে আসা মনজুর-আফ্রিন দম্পতি জানান, কক্সবাজারে বিয়ের পর প্রথম আসছি। আসলে প্রাণ প্রকৃতি ও আল্লাহর অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করতে সমুদ্র শহরে আসা দরকার। তবে তারা পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য তদারকি করতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।
পাঁচ তারকামানের হোটেল কক্স-টুডের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবু তালেব জানান, দূর্গাপূজা ও সরকারি ছুটির কারণে কক্সবাজারে অনেক ভিআইপিরা এসেছেন। হোটেলে অনেক আগে থেকে প্রায় রুম বুকিং ছিল। সামনেও ভালো পর্যটক আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো: মুজিবুর রহমান বলেন, টানা কয়েকদিনের ছুটিতে প্রায় তিন লাখ পর্যটকের সমাগম হবে। পৌরসভার পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো: জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সবসময় প্রস্তুত। প্রতিটি পয়েন্টে সাদা পোশাকে কাজ করছে পুলিশ। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্ক বসানো হয়েছে। কোনো মানুষ যাতে হয়রানি না হয় সেটাই পুলিশ বাহিনীর লক্ষ্য।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা বিসর্জন এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে মোট পাঁচ দিনের ছুটি উপলক্ষে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। এছাড়া ছুটি না হলেও পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজারে হাজার হাজার পর্যটক আসবে।