শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ পূর্বাহ্ন

মালয়েশিয়া যেতে পাঁচ গুণ ব্যয়

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২
  • ১৫৩ বার

মালয়েশিয়া সরকারের বাছাই করা সিন্ডিকেট সদস্যদের মাধ্যমে একজন কর্মীকে বিদেশে যেতে কমপক্ষে সোয়া ৪ লাখ টাকার মতো খরচ করতে হচ্ছে। দালালদের হাত ঘুরে এলে এই টাকার পরিমাণ আরো বাড়ছে। এর মধ্যে কর্মীর পাসপোর্ট ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া শুধু ঢাকাতেই বিমান ভাড়াসহ সিন্ডিকেটকে প্রসেসিং ফি বাবদ দুই লাখ টাকার বেশি দিতে হচ্ছে। যার বেশির ভাগই হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাকি টাকা খরচ হচ্ছে মালয়েশিয়ায় চাহিদাপত্র কেনাসহ অন্যান্য খাতে। যদিও শ্রমবাজার খোলার লক্ষ্য দুই দেশের মধ্যে হওয়া এমওইউ চুক্তি অনুযায়ী মালয়েশিয়াগামী একজন কর্মীর জন্য অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৯ হাজার টাকা।

গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় সরেজমিন গিয়ে, কোম্পানির নামে কর্মীর চাহিদাপত্র কেনা ও শ্রমবাজারের বাস্তব পরিস্থিতি নিজে দেখে এসে একাধিক ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তারা বলেন, আসলে সরকারের পক্ষ থেকে যে ৭৯ হাজার টাকা মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেই টাকায় কিন্তু একজন শ্রমিকও দেশটিতে যেতে পারছে না। তাদের মতে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় একজন শ্রমিককে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে কমপক্ষে মেডিক্যাল করানো, চাহিদাপত্র কেনা, বিমান টিকিট, বিএমইটি ফি ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে সোয়া তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অবশ্য এসব টাকার বৈধ কোনো ডকুমেন্ট নেই। কর্মীদেরও কোনো মানি রিসিট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দিচ্ছে না।

তারা বলছেন, মালয়েশিয়ায় একজন কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকায় প্রসেসিং খরচ বাবদ মোট ২ লাখ ১০ হাজার টাকার মতো আদায় করছে। এর মধ্যে সিন্ডিকেটের সার্ভার ও প্রসেসিং ফি এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। বাকি টাকার মধ্যে ৩৫-৪০ হাজার টাকা বিমান টিকিট ক্রয় করা ছাড়াও সাংবাদিক ম্যানেজ করাসহ বিভিন্ন খাতে আদায় করা হচ্ছে।

গতকাল মালয়েশিয়ার ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির একাধিক সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে একজন কর্মী বাংলা টাকায় ৩৬ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছে। ওভারটাইম মিলিয়ে ৪৫-৫০ হাজার টাকা আয় করার সুযোগ রয়েছে। তবে এর জন্য একজন শ্রমিককে কমপক্ষে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে যেতে হচ্ছে।

দালালের মাধ্যমে গেলে সেটি আরো বাড়বে কি না সেই হিসাব এজেন্সিগুলোর কাছে নেই। তবে একটি এজেন্সি একজন কর্মী পাঠিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারে না। এটা নির্ধিদ্বায় আমরা বলতে পারি। সিন্ডিকেট সদস্যরা যদি প্রসেসিং ফি আমাদের কাছ থেকে কমিয়ে নেয় তাহলে শ্রমিকদের অভিবাসন খরচ কমে যাবে। কিন্তু সিন্ডিকেট সদস্যরা তো প্রতিযোগিতা করে মালয়েশিয়ায় গিয়ে মার্কেটিং শুরু করেছে। তাদের দাবি, ২৫ সিন্ডিকেট থাকার সময় যে কাজের রেট সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার রিংগিট ছিল সেটিই এখন পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার রিংগিট দিয়ে কিনতে হচ্ছে। যার কারণে শ্রমিকদের খরচও বেড়েছে। সরকারের এসব বিষয়ে মোটেও মনিটরিং নাই, ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলছেন, অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে আছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার এই না জানি বন্ধ হয়ে যায়। শুনছি তাদের জাতীয় নির্বাচনের পর আবারো নতুন হাওয়া আসতে পারে। শুধু সিন্ডিকেট হওয়ার কারণে।

বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্লানটেশন কাজ কিনতে লাগছে ২ হাজার ৫০০ রিংগিট। ফ্যাক্টরি পাঁচ হাজার ৫০০ রিংগিট, কনস্ট্রাকশন পাঁচ হাজার রিংগিট ও সার্ভিস সেন্টারের কাজ কিনতে পাঁচ হাজার ৫০০ রিংগিট খরচ করতে হচ্ছে এজেন্সি বা তাদের প্রতিনিধিদের। কাজও নিম্নমানের।

কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রসঙ্গে এজেন্সি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একজন শ্রমিকের মেডিক্যাল করানো বাবদ সাত হাজার টাকা আদায় করছে মেডিক্যাল সেন্টার। এর সাথে মালয়েশিয়ার মাইগ্রাম ফি তিন হাজার মিলিয়ে ১০ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

গতকাল শুক্রবার এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানের বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি টেলিফোন ধরেননি। এ দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শর্ত উপেক্ষা করে রিক্রুটিং এজেন্সির নামে ফেসবুকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। এসব বিজ্ঞাপনে অনেক অসহায় বিদেশগামী প্রতারিত হতে পারে বলে ভুক্তভোগীরা মনে করছেন। এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের আরো তৎপর হওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালনা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন এ খাতের সাথে সম্পৃক্ত অভিবাসন বিশ্লেষকরা।

উল্লেখ্য, অনেক নাটকীয়তা আর ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে সম্প্রতি মালয়েশিয়ার বন্ধ থাকা শ্রমবাজার খুলতে সক্ষম হয়েছে সরকার। শ্রমবাজারটি যাতে কিছু চিহ্নিহ্নত চক্রের কারণে আবারো বন্ধের রোষানলে না পড়ে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য সাধারণ জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com