দরুদ অত্যন্ত বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ আমল। দরুদ পড়া রাসূল সা:-এর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন। দরুদ শরিফের ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে অসংখ্য বক্তব্য রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা:-এর প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশ দিয়ে কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা রাসূলের ওপর দরুদ পড়েন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার প্রতি দরুদ পড়ো’ (সূরা আহজাব-৫৬)।
প্রিয় নবীজীর প্রতি দরুদ পাঠের ফজিলত অনেক। হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে আমার প্রতি একবার দরুদ পড়বে, আল্লাহ তাকে ১০ বার রহমত করবেন’ (সহিহ মুসলিম)।
আনাস ইবনে মালেক রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে আমার প্রতি একবার দরুদ পড়বে, আল্লাহ তাকে ১০ বার রহমত করবেন এবং তার ১০টি গোনাহ মাফ করে দেবেন আর তার মর্যাদা ১০ গুণ বাড়িয়ে দেবেন’ (নাসায়ি)।
দরুদ পাঠের অশেষ সওয়াব, রহমত ও মাগফিরাত রয়েছে। প্রিয় নবীর প্রতি মহব্বত নিয়ে দরুদ পাঠ করা উত্তম ইবাদত। বিশ্বনবী সা: তাঁর উম্মতকে তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করার জন্য বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তাকে এক কিরাত (ওহুদ পর্বত সমান) সওয়াব দেবেন। যে আমার প্রতি ১০০ বার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ পাক তাকে ১০০ হাজত পূর্ণ করে দেবেন, যার মধ্যে ৭০টি আখিরাতে ও ৩০টি পার্থিব।’
হজরত ওমর বিন খাত্তাব রা: থেকে বর্ণিত- নবী সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই বান্দার দোয়া, মুনাজাত আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝোলানো থাকে, তার কোনো কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না ও কবুলও হয় না যতক্ষণ না প্রিয় নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করা হয়’ (তিরমিজি)।
নবী করিম সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি অধিক পরিমাণ দরুদ পাঠ করবে কিয়ামতের দিন পুলসিরাতের অন্ধকারে সে আলোকময় হবে এবং আমার সুপারিশের নিকটবর্তী হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, আল্লাহর অনেক ফেরেশতা জমিনে বিচরণরত আছেন। আমার উম্মতের সালাম তারা আমার কাছে পৌঁছে দেয় (নাসায়ি)।
হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে কেউ আমাকে সালাম পাঠালেই আমার রূহকে ফিরিয়ে দেবেন, যেন আমি তার সালামের জবাব দিতে পারি’ (আবু দাউদ)।
কারো সামনে রাসূলের নাম উচ্চারিত হলে তার উচিত হবে রাসূল সা:-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা। এ সম্পর্কে হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক (অর্থাৎ সে অপমানিত হোক) যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে অথচ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করেনি’ (তিরমিজি)।
রাসূল সা:-এর পবিত্র রওজা মোবারকের কাছে গিয়ে তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করলে রাসূল সা: তা সরাসরি শুনতে পান। এ ব্যাপারে হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কবরের কাছে এসে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে আমি তা সরাসরি শুনতে পাই আর যে ব্যক্তি দূর থেকে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে, তা আমার কাছে পৌঁছে দেয়া হয় (শোয়াবুল ইমান)।
সুতরাং আসুন, আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালন করি। রাসূল সা:-এর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশস্বরূপ তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করি।
লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, পাংশা, রাজবাড়ী