নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটির জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান তাজমহল রেস্টুরেন্ট এন্ড ব্যাঙ্কুয়েট হল। জ্যামাইকার সাটফিনে ১৪৮ স্ট্রিট ও হিলসাইড এভিন্যুস্থ এ প্রতিষ্ঠানটি এখন অঙ্গ-সজ্জায় পেয়েছে ভিন্নমাত্রা। বাইরের দেয়াল জুড়ে অঙ্কিত হয়েছে বিশালকার মূর্যাল। মূর্যালটিতে ফুটে উঠেছে চিরায়ত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। শোভা পাচ্ছে ঝিলের মাঝে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। রং-তুলির চমৎকার কারুকার্য খচিত শিল্পটির নেপথ্য কারিগর টিপু আলম। দৃষ্টিনন্দন এই মূর্যালটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে গত ১৩ নভেম্বর, রোববার বিকেলে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুই কন্ঠযোদ্ধা একুশে পদকপ্রাপ্ত রথীন্দ্রনাথ রায় ও কাদেরী কিবরিয়া ফিতা কেটে মুর্যালটি উদ্বোধন করেন। এসময় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আলী হাসান মুরাদ ও সাইফুল ইসলাম সাইফ সহ অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন।
ম্যূরালের প্রেক্ষাপট উপস্থাপনকালে খ্যাতনামা শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, এটি একটি ল্যাটিন শব্দ। যখন মানবসভ্যতার বালাই ছিল না। ভাষাও আবিস্কার হয়নি। সেসময় এমন ছবির মাধ্যমে সবকিছু প্রকাশের প্রয়াস চালানো হয়েছে। এর ব্যাপ্তি ঘটে উনিশ শতকে। দেয়ালে না এঁকে ক্যানভাসে এঁকে তা দেয়ালে সেঁটে দেয়া হতো। দেয়াল এবং কখনো কখনো বাড়ির ছাদেও এমন ছবি আঁকা হতো। বলা যেতে পারে মূর্যালের মধ্য দিয়েই মানব সভ্যতার উৎপত্তি ঘটেছে। তাই আমাদের সকলের গভীর ভালবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে বাংলাদেশের স্মৃতি হৃদয়পটে ভেসে উঠার সহায়ক এই ম্যূরালের প্রতি। এমন একটি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে উদ্যোক্তা এবং আর্টিস্ট উভয়ের প্রতিই ধন্যবাদ জানিয়েছেন রথীন্দ্রনাথ রায়। অপর কন্ঠযোদ্ধা কাদেরী কিবরিয়া বলেন, এভাবে ফিতা কেটে মূর্যালের অবমুক্ত ঘটানো আমার জীবনে প্রথম। আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় পার্টি হলের অভ্যন্তরে। এসময় মূর্যালটি সম্পর্কে আলী হাসান মুরাদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত দেয়ালটিকে পথচারী ও গ্রাহকদের নিকট আকর্ষনীয় করে তুলতে চিত্রকর্ম অংকনের জন্য একটি ভাবনা কাজ করেছিলো। এসময়টায় এগিয়ে আসেন শিল্পী টিপু আলম এবং তিনি এমন একটি চিত্র অংকনের প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবটি ভালো লাগে এই কারণে যে চিত্রটি হবে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলাকে ঘিরে। নিজ দেশ ও নাড়ির টানেই আমরা প্রস্তাবটি গ্রহণ করি। যাতে পথচারীরা বাংলাদেশের সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হন।
এ পর্যায়ে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডাঃ ওয়াজেদ এ খান, বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, ঠিকানা প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান , কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ। বক্তাগণ তাজমহল পার্টি হল কর্তৃপক্ষ ও শিল্পী টিপু আলমের প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে বিপার খুদে শিল্পীরা।
অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষন ছিলো রথীন্দ্র নাথ রায় ও কাদেরী কিবরিয়ার সঙ্গীত পরিবেশনা। শিল্পীদ্বয় একক ও দ্বৈত কন্ঠে বেশ কয়েকটি গান গেয়ে মাতিয়ে রাখেন পুরো অনুষ্ঠান। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গানগুলো শ্রোতাদেরকে উজ্জীবিত করে তুলে। গান পরিবেশনের পাশাপাশি তারা স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। সমাপনী বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান সাইফুল ইসলাম সাইফ। তিনি বলেন, তাজমহলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিও জন্য আলী হাসান মুরাদ এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে অতিথিদেরকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দিত করা হয়।