একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাঙালির রুখে দাঁড়ানোর অবিস্মরণীয় একটি প্রেক্ষাপটের ধারাবিবরণী হিসেবে ‘দামাল’ সিনেমার প্রিমিয়ার শো’তেই প্রবাসের মুক্তিযোদ্ধা এবং জনতার ব্যাপক প্রশংসা কুড়ালো। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের পাশাপাশি এক কোটি শরণার্থীর জন্য তহবিল সংগ্রহের অভিপ্রায়ে ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিম’র গৌরবোজ্জল ভূমিকা এই সিনেমায় প্রতিভাত হওয়ায় নতুন প্রজন্মের প্রবাসীরাও আপ্লুত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর ক্ষেত্রে ‘দামাল’ অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন দর্শকেরা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং এক সময়ের চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক আবুল বাশার চুন্নু সিনেমাটি দেখার অনুভূতি প্রকাশকালে বলেন, আমেরিকায় নতুন প্রজন্মই শুধু নয়, ফুটবল খেলা দেখতে আগ্রহী ভিনদেশীরাও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অবহিত হতে সক্ষম হবেন। দামাল শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসের ধারাবিবরণী।
মুক্তিযোদ্ধা চুন্নু আরো বলেন, ছবিটি দেখার সময় ৫১ বছর আগের সেই স্মৃতিতে ফিরে গিয়েছিলাম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতে বাঙালির ত্যাগ-তিতিক্ষা, আত্মত্যাগ সংগ্রাম, সকল শ্রেণির জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা সকলে মিলে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে এনেছি। কিন্তু নতুন প্রজন্ম অনেকেরই আমাদের সেই ত্যাগের কথা অজানা। এই চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত সকলকে অভিনন্দন।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের ১৫টি শহরে মুক্তি উপলক্ষে ১৮ নভেম্বর শুক্রবার ‘দামাল’র এই প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকার ‘মাল্টিপ্লেক্স’ সিনেমা হলে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেলর ড. মনিরুল ইসলাম।
ড. মনিরুল ইসলাম নিজের অনুভূতি ব্যক্তকালে বলেন, ছবির প্রিমিয়ার দেখে অত্যন্ত আনন্দিত। ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের উপর নির্মিত। বাংলাদেশের যে গৌরবার্জিত ইতিহাস আছে তা ব্যাপকভাবে এদেশে প্রচারিত হবে। এ ধরনের সিনেমা যদি বেশি করে দেখাতে পারি, তাতে আমাদের বেশ কয়েকটি সুবিধা আছে। প্রথমত আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে যারা জানে না তারা বেশি করে জানার সুযোগ পাবে। আর যাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি আছে, যাদের মধ্যে জানার ঘাটতি আছে, তাদেরকে বেশি করে জানতে সহযোগিতা করবে ‘দামাল’ সিনেমা। আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, আমাদের নতুন প্রজন্ম এই ছবির মাধ্যমে বাঙালির ইতিহাস, সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত হতে পারবে। আমরা চেষ্টা করবো এ ধরনের ছবির মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে।
বায়োস্কোপ ফিল্মসের অন্যতম ডিরেক্টর নওশাবা রশিদ বলেন, বায়োস্কোপ ফিল্মসের লক্ষ্য হচ্ছে সুস্থ চলচিত্রের প্রচার করা। এই লক্ষ্য ধরেই গত ৫ বছর যাবৎ বাংলাদেশের ভালো ভালো চলচিত্র যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ‘দামাল’ একটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা। এটা শুধু ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে না, তখনকার সময় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল যেভাবে ফুটবল খেলে মুক্তিযুদ্ধের জন্য ফান্ড রেইজ করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি জনসমর্থন জুগিয়েছিল তা ইতিহাস থেকে জানা যাবে।
এসময় চ্যানেল আইয়ের পরিচালক জহির উদ্দিন মাহমুদ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীত শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় ও শহীদ হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ প্রতিদিন উত্তর আমেরিকা সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক লাবলু আনসার, খাতনামান রিয়েল এ্যাস্টেট ব্যবসায়ী নুরুল আজিম, সংগীত শিল্পী চন্দ্রা রায়, অভিনেত্রী বন্যা মির্জা, বিশ্ববাংলা টোয়েন্টিফোর টিভির সিইও আলিম খান আকাশ, যমুনা টিভির যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি আজিমউদ্দিন অভি, সাপ্তাহিক নবযুগ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগর, চ্যানেল আই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহম্মদ ও শাহ ফারুক, একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি শামীম আল আমিন, বাংলাদেশ প্রতিদিন উত্তর আমেরিকা সংস্করণের স্টাফ রিপোর্টার আবুল কাশেম, এটিএন বাংলা যুক্তরাষ্ট্রের কানু দত্ত, কম্যুনিটি লিডার নাজিম উদ্দিন এবং মিনহাজ সাম্মু, বায়োস্কোপ ফিল্মসের সিইও রাজ হামিদ, বায়োস্কোপ ফিল্মসের অন্যতম ডিরেক্টর নওশাবা রশিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন, লায়ন্স ক্লাবের আহসান হাবিব, দৈনিক সমকালের নিউইয়র্ক প্রতিনিধি তোফাজ্জল লিটন-সহ বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণী পেশার দর্শকরা সেখানে ছিলেন।
নিউইয়র্কের জ্যামাইকা মাল্টিপ্লেক্স ছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়ার নর্থ হলিউড, সান ফ্রান্সিসকো, টেক্সাসের ডালাস, হিউস্টন, ম্যারিল্যান্ডের বাল্টিমোর, শিকাগো, ওরল্যান্ডো, মায়ামি, ডেট্রয়েট, রিনো, পোর্টল্যান্ড, বোস্টনসহ ১৫টি শহরে একইসাথে মুক্তি পেয়েছে ‘দামাল’। আগামী ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় পর্যায়ে রিগ্যাল, হারকিনস, সিনেমার্কের ৫০টি থিয়েটারে মুক্তি পাবে ছবিটি।
ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটিডে ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের গল্প অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন রায়হান রাফী। দামালের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম, সিয়াম আহমেদ, শরিফুল রাজ, সুমিত, রাশেদ অপু, সাঈদ বাবু, শাহনাজ সুমি, সৈয়দ নাজমুস সাকিব প্রমুখ।