ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের বিকল্প ভাবছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে দুই মেয়র পদে কোনো ছাড় দিতে নারাজ দলটির নীতি নির্ধারকেরা। দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিতে যা যা করার তার সবই করা হবে। ভোটের দিনের কৌশল হিসেবে ভোর থেকেই কেন্দ্রে অবস্থান নিবেন দলীয় নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করা হবে ভোট গণনা পর্যন্ত। দলের হাইকমান্ড থেকে ইতোমধ্যেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এক অনুষ্ঠানে নির্বাচনের দিন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কেন্দ্র দখলের নির্দেশ দেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি যাতে কেন্দ্র কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কেন্দ্র পাহারায় থাকবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটির এ নির্বাচনে কোনোভাবেই হারতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। কারণ এ নির্বাচনে হারলে নির্বাচনের ফলাফলকে সরকারবিরোধী জনমত হিসেবে নিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়ে উঠতে পারে বিএনপি। বিশেষ করে মুজিববর্ষে বাংলাদেশে আসা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সামনে এ ফলাফল উপস্থাপন করে নতুন জাতীয় নির্বাচনের দাবি তোলা হতে পারে, যা সরকারের জন্য একটি অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া ঢাকার মেয়র পদ হারালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে সরকারের। তাই যেকোনো মূল্যে এ নির্বাচনে জিততে চায় সরকার। সেই লক্ষ্যে যত ধরনের কৌশল নেয়া দরকার তার সবই নেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটির মধ্যে দক্ষিণ সিটি নিয়ে খানিকটা স্বস্তি থাকলেও উত্তর সিটি নিয়ে কিছুটা ভয় রয়েছে আওয়ামী লীগের। দক্ষিণ সিটিতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যতম সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস প্রার্থী হওয়াকে প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, তাপস সরাসরি পলিটিক্যাল লোক। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হওয়ায় তার বিজয়কে প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে নেয়া হয়েছে। ফলে দক্ষিণ সিটির সব নেতাকর্মী তার পক্ষে একাট্রা। তাপসের প্রচারেও সেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। এ ছাড়া নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত সরকার সমর্থকরাও বিষয়টি আমলে রাখবেন বলে বিশ্বাস তাদের। অন্য দিকে উত্তর সিটিতে আতিকুল ইসলাম রাজনীতির কেউ নন। ফলে শেষ পর্যন্ত নেতাকর্মীরা তার পক্ষে একাট্রা হয়ে কতটুকু মাঠে থাকবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া গত মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে আনিসুল হক বেশকিছু সফলতা দেখিয়ে নগরবাসীর প্রত্যাশার মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। এজন্য উত্তরের জনগণ মেয়র হিসেবে আনিসুল হকের মতো একজনকেই খুঁজছেন। তাদের এ খোঁজাই সমস্যায় ফেলে দিয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামকে। আর উত্তর সিটির অনেকাংশেই বৃহত্তর নোয়াখালীর ভোটার থাকায় খানিকটা এগিয়ে আছেন প্রতিদ্বন্দ্বী তাবিথ আউয়াল। তবে সন্দেহ ও সংশয় থাকলেও আওয়ামী লীগ যেকোনো মূল্যে দুই সিটিতে বিজয়ী হতে চায়। সেজন্য যা যা করার তার সবই করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সিটি নির্বাচন সামনে রেখে কে এগিয়ে আছেন আর কে পিছিয়ে আছেন সে হিসাব প্রতিদিনই মিলিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। প্রার্থীদের প্রচার শেষে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের সাথে বৈঠকও করেছেন নিয়মিত। এ ছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে একাধিকবার জরিপ করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের শুরুতে করা জরিপে দক্ষিণে তাপস ৩৬ ও প্রতিদ্বন্দ্বী ইশরাক ৬৪ এবং উত্তরে আতিক ৩৫ ও তাবিথ ৬৫ ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। পরের জরিপে তাপস ৪০ ও ইশরাক ৬০, আতিক ৩৭ ও তাবিথ ৬৩ এবং তার পরের জরিপে তাপস ৫০ ও ইশরাক ৫০ এবং আতিক ৪০ ও তাবিথ ৬০ ব্যবধানে এগিয়ে। এসব জরিপে দেখা যায় দক্ষিণে সময়ের সাথে সাথে তাপসের ভোট যেভাবে বেড়েছে উত্তরে আতিকের ভোট সেভাবে বাড়েনি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিনজন নেতা জানান, ‘আওয়ামী লীগ যেকোনো মূল্যে এ নির্বাচনে জয় চায়। এ ক্ষেত্রে দুই সিটিই টার্গেট। এর বিকল্প কোনো কিছু ভাবছে না দল। সেজন্য খুব ভোর থেকেই কেন্দ্রে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করা হবে। যা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত রাখা হবে। বিরোধী পক্ষ যাতে কেন্দ্রের আশপাশেও ঠাঁই না পায় সেজন্য সতর্ক থাকবে নেতাকর্মীরা।’
একজন নেতা বলেন, গত কয়েকটি নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় যে জরিপ প্রকাশ করেছেন ফলাফলও প্রায় সেরকমই হয়েছে। সুতরাং, আগের সব জরিপ বাদ দিয়ে জয়ের জরিপের ওপরই আস্থা রাখা যায়। আর এতে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিতের চিত্র দিবালোকের মতো পরিষ্কার।