যথাযোগ্য মর্যাদা এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশন ৫২তম বিজয় দিবস উদযাপন করেছে। দূতাবাসগুলো বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম সকালে হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচির সূচনা করেন।
এরপর দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। হাইকমিশনার তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও জাতীয় চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, জাতির পিতা একটি প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, সমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যা আজ তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করছেন।
হাইকমিশনার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের মধ্যে জাতির পিতার আদর্শ এবং স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের যার যার অবস্থান থেকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। হাইকমিশনার মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে বাঙ্গালীদের অনন্য ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ব্রুনাইয়ে বিজয় দিবস উদযাপন
ব্রুনাই দারুস্সালামে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে। বাংলাদেশ হাইকমিশনার নাহিদা রহমান সুমনা জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। হাইকমিশনার স্বাধীনতার মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক প্রদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
হাইকমিশনার তার বক্তব্যে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান স্বাধীনতার প্রধান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি আরও গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, যার সবল ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে এবং বিশ্বের মানচিত্রে ‘উন্নয়নের বিস্ময় ও রোল মডেল’ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।
হাইকমিশনার নাহিদা সবাইকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
ফিলিপাইনে উদযাপন
বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বোরহানউদ্দিন শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন। দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করে রাষ্ট্রদূত বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালির বিজয় অর্জনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ উত্তরোত্তর সাফল্য ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য পৃথিবীর সব প্রান্তে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়মিতভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত।
ভিয়েতনামে উদযাপন
বাংলাদেশ দূতাবাস হ্যানয়, ভিয়েতনামে যথাযোগ্য মর্যাদায় গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের ৫১ বছর উদযাপন করেছে। ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ প্রত্যুষে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করেন।
পরে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনফারেন্স রুমে বিজয় দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে এক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের ইতিহাসে এ দিবসের তাৎপর্য এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দান করে অতি দ্রুত ‘স্বল্পোন্নত’ দেশে উন্নীত করেন আর তার দেখানো পথ ধরে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় সংকল্পে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান সামিনা নাজ।
ইতালিতে উদযাপন
যথাযোগ্য উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে ইতালিতে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনী নেতৃত্বই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মূল চালিকা শক্তি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন।