রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৬ অপরাহ্ন

বিশ্বনবীর পাখিপ্রেম

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১০৩ বার

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে এ পৃথিবীতে জীবন ধারণের জন্য অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। পশু-পাখি ওই সব নিয়ামতেরই অংশবিশেষ। মানুষের একান্ত প্রয়োজনেই এসব পাখ-পাখালি সৃষ্টি করা হয়েছে। ভাষাহীন নিরীহ এই সব পশু-পাখির প্রতি সদয় হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা: মহান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি পাখিদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আল্লাহর এ অনুপম সুন্দর সৃষ্টির প্রতি ছিল তাঁর গভীর আকর্ষণ ও অনুকম্পা। শুধু তাই নয়, আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টির প্রতিই ছিল তাঁর অগাধ প্রেম ও ভালোবাসা।

জাহেলিয়াতের যুগে বর্বর আরব জাতির মধ্যে পশু-পাখির প্রতি নিষ্ঠুর অমানবিক আচরণ করা হতো। বিশ্বনবী সা:-এর কোমল হৃদয়ে সেগুলো কঠিন আঘাত দিত।
একদিন আমাদেরর প্রিয়নবী সা: তাঁর সাহাবিদের নিয়ে বসে ইসলামকে মানবতার দুয়ারে পৌঁছে দেয়ার জন্য পরামর্শ করছিলেন। এমন সময় একজন সাহাবি একটি পাখির কয়েকটি বাচ্চা ধরে নিয়ে উপস্থিত হলেন। আর সেই সাহাবির মাথার ওপর দিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মা পাখিটি কিচিরমিচির করতে করতে উড়ে আসছিল। নির্মম দৃশ্যটি সৃষ্টিকুলের মহান বন্ধু আল্লাহর নবী সা:-এর দৃষ্টিগোচর হতেই তাঁর অন্তর যেন অজানা ব্যথায় ব্যথিত হলো। সন্তানহারা মা-পাখিটির আহাজারি যেন নবীজির কোমল হৃদয়ে বিষাক্ত তীরের মতো বিঁধল। সেই সাহাবি দয়ার নবীর কষ্ট পাওয়া চেহারা দেখেই বিষয়টি আঁচ করে নিলেন। নবী সা: সাহাবিকে পাখিটি রেখে আসার কথা বলতেই সাহাবি দ্রুত হেঁটে স্বস্থানে পাখির বাচ্চাগুলো রেখে আসেন।

সব ভাষাহীন প্রাণীর প্রতি স্নেহ মমতা রাখা কর্তব্য। তাদের উত্ত্যক্ত করা অথবা হত্যা করা উচিত নয়।

একবার মহানবী সা: সাহাবিদের নিয়ে এক সফরে যাচ্ছিলেন। পথে এক জায়গায় বিশ্রামের জন্য তাঁরা থামলেন। একটি পাখি এসে সেখানে ডিম পেড়েছিল। জনৈক ব্যক্তি ডিমটি উঠিয়ে নিলে পাখিটি ডানা ঝাঁপটিয়ে তার গভীর মর্মযাতনা প্রকাশ করতে লাগল। মহানবী সা: জিজ্ঞেস করলেন, ডিম ছিনিয়ে নিয়ে কে পাখিটির দুঃখের কারণ ঘটিয়েছে? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কাজটি আমি করেছি। তিনি বললেন, ডিমটি যেখানে ছিল সেখানে আবার রেখে দাও।
আবু ওমর শায়বানি রা: বলেন, একবার এক সফরে আমি রাসূল সা:-এর সাথে ছিলাম। এক জায়গায় কাফেলা অবস্থান করছিল। আমরা লক্ষ করলাম একটি চড়ুই পাখি আমাদের মাথার উপর চুঁ চুঁ করে উড়ছে। রাসূল সা: অস্থিরতা প্রকাশ করলেন। খবর নিয়ে জানা গেল, একজন সাহাবি চড়ুই পাখির বাসা থেকে তার ছানা নিয়ে এসেছেন। রাসূল সা: পাখির ছানা তার বাসায় রেখে আসার নির্দেশ দিলেন। এরপর বললেন, এই চড়ুই পাখি তার বাচ্চার প্রতি যতটুকু মমতা রয়েছে বান্দার প্রতি আল্লাহর মমতা তার চেয়ে ঢের বেশি।

রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো চড়ুই পাখি মেরে ফেলবে সেই চড়ুই কিয়ামতের দিন অভিযোগ করবে। চিৎকার করে অভিযোগ করবে, হে পরওয়ারদিগার! এ ব্যক্তি আমাকে অকারণে হত্যা করেছে। আমার দ্বারা কারো কোনো উপকার হয়নি। এ ব্যক্তিও আমার উপকৃত হয়নি এবং সে আমাকে বেঁচে থাকার অধিকার দেয়নি’ (নাসায়ি)।
একবার রাসূল সা:-এর কাছে একজন লোক উপস্থিত হলো। তার গায়ে ছিল চাদর। চাদরের নিচে সে কী যেন লুকিয়ে রেখেছিল। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার কাছে আসছিলাম। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পথ চলার সময় পাখির ছানার কিচিরমিচির আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি সেই পাখির ছানা ধরে চাদরের নিচে লুকিয়ে রাখলাম। পাখির ছানার কিচিরমিচির শুনে মা-পাখিটি আমার পিছু নিলো এবং আমার মাথার উপর উড়তে শুরু করল। আমি তখন পাখির ছানা মাটিতে রাখলাম। মা-পাখি নিচে নেমে এলো এবং বাচ্চাগুলোকে তার পাখনার নিচে লুকিয়ে রাখল। আমি তখন বাচ্চাসহ মা-পাখিটিকে ধরে ফেললাম। এখন পাখির ছানা ও পাখি আমার কাছে রয়েছে। রাসূল সা: বললেন, ‘ওদের ছেড়ে দাও’। আমি তখন ওদের ছেড়ে দিলাম। কিন্তু মা-পাখি কিছুতেই বাচ্চাদের ছেড়ে যেতে চাচ্ছিল না। রাসূল সা: বললেন, ‘পাখির বাচ্চাদের প্রতি মা-পাখির মমতা দেখে তোমরা অবাক হয়েছ তাই না?’ সাহাবিরা বললেন হ্যাঁ। রাসূল সা: বললেন, ‘সেই সত্তার শপথ যিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, পাখির শাবকদের প্রতি মা-পাখির মমতা যেরূপ বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার মমতার চেয়েও অনেক বেশি। যাও, এই পাখি ও পাখির ছানা যেখান থেকে ধরেছ সেখানে রেখে এসো।’

হজরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রা: থেকে বর্ণিত- একবার হজরত ইবনে ওমর রা: কোরাইশ গোত্রের একদল শিশুকে দেখতে পেলেন যে, তারা পাখি শিকার করছে। এটি দেখে ওমর রা: তাদের পৃথক করে দেন এবং বলেন, রাসূল সা: ওই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন, যে কোনো প্রাণবিশিষ্ট বস্তুকে লক্ষ্যবস্তু বানায় (মুসলিম)।
এমনিভাবে বিশ্বনবী সা:-এর জীবনের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্বনবী সা: আল্লাহ পাকের সৃষ্টিকুলের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু। তাই তো তিনি স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক ‘রাহমাতাল্লিল আলামিন’ খেতাবে ভূষিত হয়ে সারা জাহানে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, গবেষক

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com